‘বিপজ্জনক’ ভাবে জীর্ণ হয়ে পড়া বাড়ি ভাঙার আইনি ক্ষমতা পুরসভার থাকলেও, তা যথাযথ ভাবে ‘পালন’ না করার পরিণতি দেখল কলকাতা।
সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে ‘বিপজ্জনক’ ঘোষিত পুরনো একটি বাড়ির একাংশ বুধবার দুপুরে ভেঙে পড়ল শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা ক্রিক রো-এ। কয়েক মুহূর্ত আগে-পরে তা ঘটলে বড় অঘটন ঘটে যেতে পারত বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
প্রশ্ন উঠেছে, বাড়িটি কয়েক বছর ধরে বিপজ্জনক অবস্থায় থাকলেও আগে কেন সেটি ভাঙার উদ্যোগ হয়নি? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কোনও বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় থাকলে আমরা নোটিস দিতে পারি। কিন্তু সেখানে লোক থাকলে ভাঙতে পারি না। ভেঙে দিতে চাইলেও আইনি প্রতিবন্ধকতার কারণে তা সম্ভব হয় না।” মেয়রের ব্যাখ্যার বিপরীত তথ্য মিলল পুরসভারই বিল্ডিং বিভাগের এক কর্তার কথায়। তিনি জানান, পুর-আইনের ৪১১(৪) মোতাবেক শহরে কোনও বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় থাকলে পুরসভা যে কোনও সময়ে সেটি ভেঙে দিতে পারে। সংশ্লিষ্ট বাড়িটি নিয়ে আদালতে মামলা চললেও তা এ ক্ষেত্রে কোনও বাধা হতে পারে না। তবে ওই বাড়ি ভাঙার জন্য মেয়রের অনুমতি জরুরি। |
নাগরিক নিরাপত্তার কারণে পুরনো ওই বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ ভাঙতে পুরসভাকে অনুরোধ করেছে পুলিশ। এ দিন দুপুরেই পুরকর্মীরা পৌঁছে ভাঙার কাজ শুরু করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘড়িতে তখন বেলা পৌনে ১১টা। ক্রিক রো-র মোড়ে বটগাছের পাতা-শিকড়ে ঢাকা পুরনো বাড়ির দেওয়াল থেকে শ’খানেক ইটের টুকরো আচমকা হুড়মুড়িয়ে রাস্তায় খসে পড়ে। গোটা বাড়িটাই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা ছড়ায়। প্রত্যক্ষদর্শী এক ট্রাফিক পুলিশ বলেন, “ভাগ্যিস সামনে কোনও গাড়ি ছিল না। তা হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। বাড়িটা ভেঙে পড়ছে দেখে মৌলালির দিক থেকে আসা কয়েকটি গাড়ি ব্রেক কষে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে যায়।”
খবর যায় লালবাজারে। দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে যান-চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মৌলালির দিক থেকে মধ্য কলকাতা-মুখী গাড়িগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় এস এন ব্যানার্জি রোড, মহাত্মা গাঁধী রোডের দিকে। পুরনো ওই বাড়ির উল্টো দিকেই রাজা সুবোধ মল্লিকের শতাব্দীপ্রাচীন বাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দু’টি বাড়ির পরিস্থিতি প্রায় একই। সেগুলির দেওয়াল ফাটিয়ে বট, অশ্বত্থের জঙ্গল গজিয়েছে। এ দিন যে বাড়ির দেওয়াল খসে পড়েছে, সেটি অনেক দিন ধরেই এক পাশে হেলে রয়েছে। পুরসভা কয়েক মাস আগে ওই বাড়িতে ‘বিপজ্জনক’ সাবধানবাণীও টাঙিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
বিপজ্জনক ওই বাড়ির পাশের বাড়িতে একটি প্রকাশনা সংস্থার অফিস। সেটির কর্ণধার দেবজিৎ দত্ত বলেন, “বটগাছগুলির জন্যই বাড়িটা এত দিন টিকে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই একটি-দু’টি করে ইট খসে পড়ে। মাথা ফাটতে পারে যে কোনও সময়ে। ভয় হয়, কোন দিন পুরো বাড়িটাই না ভেঙে পড়ে।” তিনি জানান, বছর দু’য়েক আগে পর্যন্ত ওই বিপজ্জনক অংশে এক বয়স্ক ব্যক্তি থাকতেন। পরে তিনি অন্য কোথাও চলে যান। |