ফুলহারের প্রবল তোড়ে তলিয়ে গেল নবনির্মিত বাঁধের ৩টি স্পার। সোমবার রাতে মালদহের রতুয়ার দেবীপুরে ওই স্পার তলিয়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের নির্দেশে এলাকায় কাজ দেখতে গিয়ে বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন সেচ দফতরের কর্তার। ভাঙন রোধের কাজ নিম্নমানের হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে নির্বাহী বাস্তুকার সহ দফতরের ৫ কর্মীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বাসিন্দারা। খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সেচ কর্তারা ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এলাকা জুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ফুলহারের জল প্রবল গতিতে বাড়তে থাকায় শুধু রতুয়া এলাকাতেই নয়। হরিশ্চন্দ্রপুরের মিহাহাটেও ভাঙন রোধে করা সদ্য কাজ জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। ফলে ওই এলাকায় বাঁধ যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কায় রাতের ঘুম উবে গিয়েছে বাসিন্দাদের। ভাঙন রোধে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ অবশ্য মানতে রাজি হননি দফতরের কর্তারা। সেচ দফতরের মালদহের নির্বাহী বাস্তুকার (মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্ট) আশিস কুমার সাহু বলেন, “নিম্নমানের কাজের অভিযোগ ঠিক নয়। জলের প্রবল স্রোতের জন্যই সমস্যা হচ্ছে! ভাঙনরোধে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে সেচ দফতর।” সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত থেকে ফুলহারের জল প্রবল গতিতে বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার নদীর উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ২৬.৬০ মিটারে। যা গত দুদিনের তুলনায় দুমিটারেরও বেশি। উত্তরবঙ্গের নদীগুলির জল নামতে শুরু করায় ফুলহারের জল বাড়ছে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। পাশপাশি, স্থানীয়ভাবেও শুরু হয়েছে নাগাড়ে বৃষ্টি। ফলে ভাঙনরোধে কাজ ব্যাহত হওয়ায় নয়। ভাঙনরোধে করা সদ্য কাজও ভাঙনের কবলে পড়েছে। সেচ দফতর সূত্রেই জানা যায়, রতুয়ার দেবীপুরে বরাদ্দ ১০ কোটি টাকায় ভাঙন রোধের কাজ চলছে। ভাঙন রোধেই তৈরি হয়েছে ৩২টি স্পার। সেই স্পারের ৩টি তলিয়ে যায় প্রবল স্রোতে। ওই এলাকায় ভাঙনরোধের কাজ নিম্নমানের হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের কাছেও অভিযোগ পৌঁছেছিল। তার পর এদিন প্রশাসনের নির্দেশে এলাকায় যান নির্বাহী বাস্তুকার-সহ ৫ কর্মী। সেখানেই তাদের আটকে শুরু হয় বিক্ষোভ। জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা বলেন, “দ্রুত ও ভালভাবে যাতে কাজ হয় তা দেখতে বলেছি সেচ দফতরকে। সেচ দফতরের কাছে রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে।” অভিযোগ, ভাঙন রোধের কাজ নিম্নমানের হচ্ছে বলেই স্পার তলিয়ে গিয়েছে। মিহাহাটে স্থায়ী ভাঙনরোধের বরাদ্দ না মেলায় অস্থায়ী কাজ করা হচ্ছিল। বাঁশের খাঁচায় বোল্ডার ভরে ‘প্রকোপাইন’ পদ্ধতির ওই কাজও তোড়ে ভেসে গিয়েছে। ওই এলাকায় গত বছরই বাঁধ বিপন্ন হয়ে পড়ে। জল বাড়ায় বাঁধের গোড়ায় জল যেভাবে আছড়ে পড়ছে তাতে বাঁধ ভেঙে পড়তে পারে বলে আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। |