তিন দশক আগের পুরনো খাত থেকে তোর্সা গ্রামের দক্ষিণ দিকে কয়েক কিমি সরে গিয়েছিল। গত বছর থেকে খাত বদলে ফের পুরনো খাতের দিকে নদীর প্রবাহ শুরু হয়। এবার ওই পুরনো খাতই হয়ে উঠেছে তোর্সার মূল প্রবাহ পথ। ফলে জল নামতে শুরু করতেই ভাঙনে বিপন্ন হয়ে পড়েছে কোচবিহারের মধুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কচুবন ও লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে নদী লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে বাড়ির সামগ্রী সরিয়ে নিচ্ছেন। গাছগাছালি কেটে নিচ্ছেন অনেকে। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে কচুবন লাগোয়া পেটভাতা, চন্দনচূড়া, হরিপুর,মাটিকাটার বিস্তীর্ণ এলাকাও বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা। কোচবিহার-২ বিডিও মোনালিসা মাইতি বলেন, “খাত বদলে তোর্সার ভাঙন শুরু হওয়ায় কচুবনের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বাঁধের কিছু অংশে চাপড় জলের তোড়ে ভেঙেও গিয়েছে। |
জরুরি ভিত্তিতে সাময়িক ভাবে সেচ দফতর কে বিষয়টি জানিয়েছি।” কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধীও ভাঙন ঠেকানোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। সেচ দফতরের কোচবিহারের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জীব সরকার বলেন, “আমি নিজে ওই এলাকা ঘুরে এসেছি। জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী ভাবে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে। বর্ষার পর স্থায়ী ভাবে সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।” বাসিন্দারা জানান, সত্তরের দশকে মধুপুরের কচুবন গ্রামের উত্তর দিকে জনবসতি এলাকা ঘেষে তোর্সার মূল গতি পথ ছিল। পরে তা ধীরে ধীরে দক্ষিণে সরে যায়। গ্রাম বাঁচাতে বাঁধও দেওয়া হয়। তার পর থেকে বর্ষায় তোর্সার জল ঢুকলেও গ্রামের অস্তিত্ব নিয়ে বাসিন্দাদের দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়নি। গত বছর থেকে তোর্সা গ্রাম ঘেষে পরিত্যক্ত পুরানো খাতে চলে আসায় চিন্তা বাড়ছিল। সোমবার রাত থেকে নদীর জল নামতে শুরু করতেই ভাঙন শুরু হওয়ায় বাসিন্দাদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে। প্রচুর জমিও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার দিনভর ওই ভাঙন অব্যাহত থাকায় নদী লাগোয়া বাসিন্দাদের অনেকেই বাড়ির সামগ্রী নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন। কচুবনের কৌশিক দত্ত বলেন, “নদী থেকে আমার দুই বিঘা ধানের জমির ব্যবধান মেরে কেটে ১৫ ফুট। দ্রুত ভাঙন ঠেকানোর কাজ না হলে পুরোটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। নদী পুরানো খাতে না ফিরলে পরিস্থিতি এতটা ভয়ঙ্কর হত না। আরও এক বাসিন্দা মনোরঞ্জন রায় বলেন, “ভাঙন ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। সেচ দফতর কতটা সময় পাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। বাধ্য হয়েই বাড়িঘর সরানোর কাজ শুরু করেছি। আধ বিঘে ধানি জমি নদীতে গিয়েছে।” এ দিকে মঙ্গলবার তোর্সার পাশাপাশি জেলার অন্যান্য নদীর জল নামতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তিস্তা, মানসাই, সিঙ্গিমারি, রায়ডাক, কালজানি সমস্ত নদীই ওই তালিকায় রয়েছে। তবে মেখলিগঞ্জের নিজতরফ, হোসেনেরচর প্রভৃতি এলাকায় কয়েকশো মানুষ এ দিনও জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। মেখলিগঞ্জের বিডিও সপ্তর্ষি নাগ জানান, দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাতে সিঙ্গিমারির জলে প্লাবিত হয় দিনহাটার ওকরাবাড়ী, গীতালদহ, কোণাচাত্রা, কাজলিকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। দিনহাটার মহকুমা শাসক অগাস্টিন লেপচা জানিয়েছেন, প্রায় ৫ হাজার লোক জলবন্দি। কয়েকশো লোক ৫টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। তুফানগঞ্জ-২ ব্লকে পরিস্থিতি সোমবারের তুলনায় ভাল। ভানুকুমারী,মহিষকুচি, বড়লাউকুঠি, ছোটলাউকুঠির কিছু এলাকায় জল থাকলেও তা কমেছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ৮টি ত্রাণ শিবির চালু রয়েছে। প্রায় ১ হাজার মানুষ ওই সব শিবিরে। পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে সদর মহকুমাতেও। |