|
চাপ সে ঘোড়া
(হারিয়ে যাওয়া খেলা, পর্ব ২৪)
অর্ঘ্য ঘোষ • নানুর |
|
আগেকার দিনে গ্রাম বাংলায় পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম ছিল ঘোড়া। বড়দের দেখাদেখি ছোটদেরও যে ঘোড়সওয়ার হওয়ার ইচ্ছা জাগত তার প্রমাণ মেলে এই খেলায়। খেলাটির প্রচলিত নাম ‘চাপ সে ঘোড়া’। ‘হাবু রে তোর জোট কে’ নামেও এই খেলা পরিচিত। নানুরের তাপস ঘোষ, শঙ্কর সূত্রধর-রা বলেন, “ছোটবেলায় আমরা ওই খেলায় ঘোড়া চড়ার সাধ মিটিয়েছি। এখনকার ছেলেমেয়েরা চর্চার অভাবে খেলাটির কথা ভুলতে বসেছে।”
ছেলেমেয়ে একত্রে কিংবা আলাদা ভাবে এই খেলা চলে। কিন্তু সব সময় জোড় সংখ্যক এবং ন্যূনতম ৬ জন খেলোয়াড় প্রয়োজন এই খেলায়। খেলার প্রথমেই এক একজন খেলোয়াড়কে নিজের ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী একজন সঙ্গী বেছে নিতে হয়। উচ্চতা ও ওজনকে মাপকাঠি নির্বাচনের কারণ, পরে খেলায় ঘোড়া হিসাবে সঙ্গীকে পিঠে করে বহন করার সম্ভাবনা থাকে। সঙ্গী নির্বাচনের পর প্রতিটি জুটি ইচ্ছা মতন রাম, শ্যাম, যদু, মধুর মতো নাম গ্রহণ করে। এরপর প্রতি জুটি থেকে একজন করে খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত হয় দুই পৃথক দল। দু’টি দলই নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একজন করে দলপতি নির্বাচন করে। ওই নির্বাচনের পর দলপতি-সহ দু’টি দলই ১৫-২০ ফুট দূরত্বে বাড়ি কিংবা অন্য কোনও কিছুর আড়ালে আশ্রয় নেয়। সেখানে দলপতি ছাড়া বাকি খেলোয়াড়েরা ইচ্ছা মতো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দুই দলের দলপতি আড়াল থেকে বেরিয়ে নিজেরা টসের মাধ্যমে ঠিক করে নেয়, কে আগে হাঁক পাড়বে। |
এর পর দুই দলের দলপতি গিয়ে দাঁড়াবে বিপক্ষ দলের আস্তানার সামনে। সেখান থেকে টসজয়ী দলপতি বিপক্ষ দলের দলপতিকে ‘হাবুরে তোর জোট কে?’ বলে প্রশ্ন করবে বা হাঁক পাড়বে। প্রশ্ন কর্তার জবাবে ওই দলপতি বিপক্ষ দলের আস্তানায় লাইনের প্রথমে যে দাঁড়িয়ে আছে, তার নির্বাচিত নাম বলবে। যদি দেখা যায়, ওই নামের সঙ্গে টসজয়ী যে আস্তানার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে; সেখানের লাইনে সামনে থাকা খেলোয়াড়ের নামও এক, তাহলে টসজয়ী দলপতি তার দলের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে ‘চাপ সে ঘোড়া’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে। ওই চিৎকার শোনার সঙ্গে সঙ্গে টসজয়ী দলের খেলোয়াড়েরা হৈ হৈ করে পৌঁছে যায় বিপক্ষ দলের আস্তানায়। সেখান থেকে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের সম ওজন ও সম উচ্চতার একই নামধারী সঙ্গীকে ঘোড়ার মতো পিঠে করে পৌঁছে দিতে হবে তাদের আস্তানায়। এরপর দু’দলের নির্ধারিত আস্তানা পরিদর্শন করে একই প্রক্রিয়ায় খেলা চলে।
কিন্তু যদি দেখা যায় লাইনের প্রথমে রাম-শ্যামের কিংবা মধুর জায়গায় শ্যাম যদু কিংবা রাম রয়েছে তাহলেই খেলার নিয়ম পরিবর্তিত হয়। সেক্ষেত্রে টসজয়ী প্রশ্নকর্তার জবাবে লাইনের প্রথমে থাকা খেলোয়াড়ের সঙ্গী বিপক্ষ দলের লাইনের কোন অবস্থানে অর্থাৎ দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ বা কোন স্থানে রয়েছে তা চিৎকার করে জানিয়ে দেয়। সেই মতো বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়টি লাইনের প্রথম স্থান দখল করে। এরপর যতক্ষণ পর্যন্ত দু’পক্ষের লাইনে একই নামধারী খেলোয়াড়দের দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত হাঁক পাড়া চলে। শেষে যে দলের দলপতির হাঁকে খেলোয়াড়দের ক্রম সম্পূর্ণ হয় সেই দলের খেলোয়াড়রা ঘোড়া চড়ার অধিকারী হয়। এবং পূর্ব প্রক্রিয়ার মতোই আস্তানা বদল করে খেলা চলে। |