এক ছাত্রের জলে পড়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরে উত্তেজনা ছড়াল উলুবেড়িয়ার মৌবেসিয়া অধরচন্দ্র প্রাথমিক স্কুলে। একদল গ্রামবাসীর হাতে প্রহৃত হন স্কুলের তিন শিক্ষক। পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পঠন-পাঠন শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই প্রথম শ্রেণির দু’জন ছাত্র ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে যায়। প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, শৌচালয়ে যাওয়ার নাম করে তারা বাইরে গিয়েছিল।
স্কুল থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে একটি খাল। সেই খালের জলে এক ছাত্র পড়ে যায়। সে সময়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এক মহিলা। তিনি ওই ছাত্রকে খাল থেকে উদ্ধার করেন। চিৎকার করে ডাকেন গ্রামবাসীদের।
স্কুলের কাছেই রয়েছে শ্মশান। সেখানে একটি মৃতদেহ দাহ করতে এসেছিলেন গ্রামবাসীরা। ওই মহিলার চিৎকার শুনে শবযাত্রীদের কয়েক জন স্কুলে ছুটে আসেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও কিছু স্থানীয় বাসিন্দা। সে সময়ে ক্লাস চলছিল। হামলাকারীরা চড়াও হয় সৌমেন প্রামাণিক নামে এক শিক্ষকের উপরে। লাঠি দিয়ে তাঁর চোখে আঘাত করা হয়। পর পর প্রধান শিক্ষক দিলীপ প্রামাণিক এবং আরও এক শিক্ষক দীপেন মণ্ডলকে চড়, কিল ঘুষি মারা হয় বলে অভিযোগ। |
এর জেরে পঠন-পাঠন বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষকদের মারধর করে হামলাকারীরা ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। হামলাকারীদের বক্তব্য, ছাত্র জলে পড়ে গিয়েছে জেনেও তাকে শিক্ষকেরা উদ্ধার করেননি কেন?
শিক্ষকদের উপরে যখন হামলা হচ্ছে সে সময়ে ‘শুভবুদ্ধিসম্পন্ন’ কিছু গ্রামবাসী তিন শিক্ষককে অন্য ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা মেরে দেন। এর পরে খবর যায় থানায়। পুলিশ এসে সকলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রধান শিক্ষক বলেন, “শৌচাগারে যাওয়ার কথা বলে দু’জন ছাত্র বেরিয়ে যায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই শুনি একটি ছাত্র খালে পড়ে গিয়েছে। আমরা ছুটে যাওয়ার আগেই এক মহিলা তাকে উদ্ধার করেন। তার পরেই তিনি আমাদের নামে দোষ দিয়ে চিৎকার শুরু করেন। চিৎকার শুনে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা আমাদের মারধর শুরু করেছে। আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।”
ধুলাসিমলা পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের গোপীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শিক্ষকদের বাঁচাতে আমাদের দলের ছেলেরাই ছুটে যান। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ায় আমরা পুলিশকে খবর দিই। শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা নিন্দনীয় ঘটনা।” অন্য দিকে, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ চক্রের স্কুল পরিদর্শক শুভ্রা দত্ত বলেন, “শিক্ষকদের বলেছি থানায় একটি অভিযোগ জানাতে। পঠন-পাঠন বন্ধ রাখা যাবে না। ধুলাসিমলা পঞ্চায়েতের প্রধান, ‘ভিলেজ এডুকেশন কমিটি’-র সদস্য এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করে ‘অচলাবস্থা’ দূর করার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলা হয়েছে।” |