গুড়াপের হোমে আবাসিক গুড়িয়ার মৃত্যুর তদন্তে নেমে বর্ধমানের জামালপুরে পুঁতে রাখা দু’টি পচাগলা লাশ পেল সিআইডি। ধৃত অ্যাম্বুল্যান্স চালক সোমনাথ রায় ওরফে সানিকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে মঙ্গলবার দেহ দু’টি তোলা হয়। হোম থেকে অন্তত ৪ জন আবাসিক নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বলে পুলিশ জেনেছে। তবে মৃতদের পরিচয় নিয়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত নন। এ দিন আলিপুরদুয়ারে পালিয়ে যাওয়া এক আবাসিকের খোঁজ মিলেছে।
এ দিন সকালে হুগলির গুড়াপ থানায় হোমের ধৃত সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমারকে জেরা করে সিআইডি-র তদন্তকারী দল। দুপুরে জামালপুরে দামোদরের পাড়ে তেলকুপি শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় সানিকে। সে জায়গা দেখিয়ে দেয়। সেখানে ঘণ্টা দুয়েক খোঁড়াখুঁড়িতে দু’টি দেহাবশেষ উঠে আসে। একটি কঙ্কালের করোটিতে লম্বা কালো চুল ও সিঁদুরের ছাপ। সিআইডি-র সন্দেহ, সেটি কোনও বধূর। অপর কঙ্কালের চুল ছোট থাকায় সেটি কোনও কিশোরীর বলে অনুমান। দু’টি দেহ ময়না-তদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। সানিকে জেরা করে তার আগের অ্যাম্বুল্যান্স চালক রঘুনাথ সাঁতরা ও ট্রাক্টর চালক বিশ্বনাথ মুর্মুকে আটক করা হয়েছে। |
তদন্তকারী অফিসারদের সানি জানিয়েছে, মাস তিনেক আগে দশ দিনের ব্যবধানে দুই আবাসিকের দেহ হোমের অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে ওই শ্মশানে নিয়ে গিয়েছিল তারা। সঙ্গে ছিল হোমেরই আরও পাঁচ জন। গভীর রাতে বিনা বাধায় দেহগুলি পুঁতে দেওয়া হয়। তবে সে নিজে হাত লাগায়নি। অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েছিল। সানির দাবি, অ্যাম্বুল্যান্সে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে ১৫০ টাকা করে দিত উদয়চাঁদ। বলত, কাগজপত্র সব ঠিক করা আছে। সমস্যা হবে না। উদয়চাঁদ হোমের কলমিস্ত্রি সন্দীপ দাসকেও দেড়শো টাকায় লাশ পোঁতার জন্য মাটি খোঁড়ার কাজে লাগাত বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন। গোয়েন্দাদের দাবি, জামালপুরে দামোদরের চরে একাধিক দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলে জেরায় ধৃতেরা কবুল করেছে।
শ্মশানে দাঁড়িয়েই সানি বলে, “আমি এখানে কয়েক বার দেহ পুঁততে এসেছি। গত ৬ মে শ্মশানে আসার পথে একটি সেতুর কাছে এলাকার লোকজন অ্যাম্বুল্যান্স আটকান। পুলিশ আমাদের থানায় নিয়ে যায়। পরে ছেড়েও দেয়।” বর্ধমান জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাতে ঝর্না সামন্ত (৪৪) নামে এক আবাসিকের দেহ আনা হয়েছিল। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে জামালপুর থানার ওসি রজতকান্তি পাল এবং এসআই বিশ্বরূপপ্রসাদ দীক্ষিতকে ইতিমধ্যেই পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “হোমের লোকেরা পরে ঝর্না সামন্তের দেহ বর্ধমানের সদরঘাটে পুঁতে দিয়েছিল বলে আমরা খবর পেয়েছি।”
গুড়িয়ার দেহ মেলার পরে বাকি আবাসিকদের গুড়াপের হোম থেকে সরানো হয়েছে। ১২ জুলাই মামনি দাস নামে এক কিশোরীকে শারীরিক পরীক্ষা করাতে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই সে পালায়। রবিবার থেকে তাকে জলপাইগুড়ির আলিপুরদুয়ারে ঘুরে বেড়াতে দেখছিলেন রেডক্রসের লোকজন। তাঁরাই মামনিকে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান। সে জানিয়েছে, তার ভাল নাম দুর্গা দাস। গুড়িয়াকে সে চিনত। তবে তার কথাবার্তায় কিছু অসংলগ্নতা আছে। |