পুলিশের হাতে ধরা পড়া মাওবাদী নেতা বিক্রমের সঙ্গে একটিবার দেখা করতে চান অযোধ্যা পাহাড়ে নিহত সৌম্যজিৎ বসুর মা সুমিতাদেবী। তাঁর ছেলের মৃত্যু সম্পর্কে এখনও যে-সব কথা তিনি জেনে উঠতে পারেননি, সে সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু তথ্য তিনি জানতে চান। মঙ্গলবার টিভিতে বিক্রমের ধরা পড়ার খবর পেয়ে সুমিতাদেবী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিক্রমের সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করবেন।
২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর, সৌম্যজিৎ বেড়াতে যান অযোধ্যা পাহাড়ে। খন্যানের একটি স্কুলে তিনি ভূগোল পড়াতেন। সঙ্গে ছিলেন বন্ধু, পেশায় পুলিশ অফিসার পার্থ বিশ্বাস। ২২ অক্টোবর রাতে ব্যান্ডেলে সুমিতাদেবীকে ফোন করে সৌম্যজিৎ ও পার্থ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চায় মাওবাদীরা। সৌম্যও ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। বলেছিলেন, “আমি ভাল আছি। ‘দাদা’-রা আমাকে ভালই রেখেছে। ছেড়ে দেবে বলেছে।” তার পরে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি দুই যুবকের। আর সুমিতাদেবীর কথায়, “এখানেই রহস্য ঘিরে রয়েছে। যে নিছক বেড়াতে গিয়েছিল অযোধ্যা পাহাড়ে, যে আমাকে রাতে ফোন করে বলল, ‘আমি ফিরে আসছি’, তার পরে এমন কী ঘটল যে ওকে ওরা মেরে দিল?”
২০১১ সালের মার্চ মাসে অযোধ্যা পাহাড় থেকে মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় দুই যুবকের মৃতদেহ। ধৃত মাওবাদী নেতা জলধর সিংহ সর্দার সেই জায়গা পুলিশকে চিনিয়ে দেন। সেই দুই যুবকই পার্থ-সৌম্যজিৎ কি না, তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। ডিএনএ পরীক্ষার পরে প্রশাসন নিশ্চিত হয় যে, দেহ দু’টি ওই দুই যুবকেরই। ১৮ মে সৌম্যজিতের দুই দাদা বাঁকুড়া থেকে দেহ নিয়ে এসে সৎকার করেন। কিন্তু, পার্থর স্ত্রী বর্ণালি প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্ত মানতে চান না। মঙ্গলবার বর্ণালির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পুরুলিয়ার বাগবিন্ধ্যায় মাওবাদীদের গণহত্যায় নিহত পঞ্চায়েত প্রধান চপলা গড়াৎ-এর স্বামী দুখু চান বিক্রমের শাস্তি হোক। ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ওই ঘটনারও প্রধান অভিযুক্ত বিক্রম।
সৌম্যজিতের স্ত্রী স্বচ্ছতোয়া এখন চার বছরের ছেলে রোদ্দুরকে নিয়ে রয়েছেন ত্রিবেণীতে বাপের বাড়িতে। বিক্রমের গ্রেফতারের খবর পাওয়ার পরেও তাঁর কোনও হেলদোল নেই। বলেন, “যে চলে গিয়েছে সে তো ফিরবে না। আমি ছেলেকে নিয়ে লড়াই চালাচ্ছি। যে মানসিক ধাক্কা সে খেয়েছিল তা থেকে আস্তে আস্তে তাকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এটাই এখন আমার প্রধান কাজ।” রোদ্দুর এখন নিয়মিত স্থানীয় একটি স্কুলে যাচ্ছে এবং আস্তে আস্তে আরও স্বাভাবিক হচ্ছে, জানিয়েছেন স্বচ্ছতোয়া।
সৌম্যজিতের দুই দাদা মা-কে নিয়ে থাকেন ব্যান্ডেলের বাড়িতে। বড় দাদা অভিজিতের কথায়, “কিষেণজির মতো বিক্রমকেও যদি গুলি করে মেরে দিত তা হলে খানিকটা শান্তি পেতাম।” বড় ছেলের সঙ্গে একমত নন সুমিতাদেবী। তাঁর কথায়, “অপরাধী শাস্তি পাক আমি চাই। কিন্তু, এ ভাবে নয়। উল্টে আমি বিক্রমের সঙ্গে দেখা করতে চাই। ওর কাছ থেকে জানতে চাই আমার ছেলে কী অপরাধ করেছিল? সৌম্য যে নিরীহ ছেলে তা বোঝা উচিত ছিল পড়াশোনা জানা বিক্রমের।” সুমিতাদেবীর জানতে ইচ্ছা করে, শেষ মুহূর্তে সৌম্যর মানসিক অবস্থা কীরকম ছিল। আরও একবার কি কথা বলতে চেয়েছিল মায়ের সঙ্গে? |