সম্পাদকীয় ২...
স্বাগত ক্রিকেট
পাকিস্তানের ক্রিকেট দলকে ভারতে তিনটি এক দিনের আন্তর্জাতিক ও দুইটি কুড়ি ওভারের ম্যাচ খেলার আমন্ত্রণ জানাইয়াছে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক পরিষদ (বি সি সি আই)। পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডও পত্রপাঠ আমন্ত্রণ গ্রহণ করিয়াছে। বস্তুত, এ ক্ষেত্রে পাক ক্রিকেট বোর্ডের গরজ ভারতীয় বোর্ড অপেক্ষা অনেক বেশি। কারণ, ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার সফররত ক্রিকেটারদের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার পর পাকিস্তানের মাটিতে কোনও দেশই আর খেলিতে যায় না। পাকিস্তানকে অন্য দেশে গিয়া খেলিতে হয়। আর, ভারতের সহিত খেলা তো ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হাঙ্গামার পর হইতে একপ্রকার বন্ধই। স্বভাবতই ভারতের সহিত খেলিতে পাক ক্রিকেটাররা উদ্গ্রীব। বোর্ড তাই ভারতের আমন্ত্রণ স্বীকারে দ্বিধা করে নাই।
ভারতের কিছু ক্রীড়াবিদ, রাজনীতিক এবং দলীয় সংগঠনও বি সি সি আই-এর এই আমন্ত্রণের মধ্যে হঠকারিতার লক্ষণ দেখিয়াছেন। তাঁহাদের মনে হইয়াছে, পাকিস্তান যখন মুম্বই হামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও আইনগত ব্যবস্থা লয় নাই, উপরন্তু তাহাদের দুধকলা দিয়া পরিপোষণ করিতেছে, তখন তাহার সহিত ক্রীড়া-সম্পর্ক পাতানোয় এত তাড়াহুড়া কেন? খেলাধুলাকে তাঁহারা স্পষ্টতই রাজনীতির সহিত একাকার করিয়া ফেলিতেছেন। এই ক্রীড়াসূচি নির্ধারিত হইয়াছে ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেট সংস্থার মধ্যে, নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের বিদেশ মন্ত্রকের মধ্যে নয়। ইহার সঙ্গে দেশ, জাতি, রাষ্ট্র ইত্যাদিকে গুলাইয়া ফেলা উচিত নয়। সত্য, ভারতে ক্রিকেট অতিশয় জনপ্রিয় খেলা তথা বিনোদন বলিয়া তাহাকে কেন্দ্র করিয়া দেশব্যাপী ব্যাপক আবেগ, এমনকী তুমুল উত্তেজনারও সৃষ্টি হয়, বিশেষত সেই খেলা যদি হয় পাকিস্তানের সহিত। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে একাধিক যুদ্ধ, সর্বোপরি পাক সমর্থনপুষ্ট জেহাদিদের নাশকতায় বিষাইয়া ওঠা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সেই উত্তেজনা বাড়াইয়া দেয়, এ কথা ঠিক। কিন্তু সম্পর্কের সেই অবনতির জন্য ক্রিকেট মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো দায়ী নয়। বরং ক্রিকেট হইয়া উঠিতে পারে পরস্পরের নিকটে আসিবার সেতু। লক্ষণীয়, অতীতে পাক প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হক ও পারভেজ মুশারফ ক্রিকেটকে কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতার সোপান রূপে ব্যবহার করিয়াছেন।
যাঁহারা আপত্তি জানাইতেছেন, তাঁহাদের মধ্যে মুম্বই হামলার মর্মান্তিক স্মৃতি ও তজ্জনিত ক্ষত এখনও টাটকা। রাজনৈতিক সংগঠনের আপত্তির মধ্যে অবশ্য উগ্র হিন্দুত্বের সাম্প্রদায়িকতার ছায়াপাত ঘটিয়াছে। মনে রাখা দরকার, পাক বোর্ডের ক্রিকেট দলের ভারতে সফর ১৯৬৫ ও ১৯৭১-এর যুদ্ধ এবং ১৯৯৯-এর কার্গিল কাণ্ডের পরেও ঘটিয়াছে। সেই সময় কেহ জাতীয়তাবাদী আবেগ উস্কাইয়া সফর বানচাল করার চেষ্টা করে নাই। ক্রিকেটাররা সন্ত্রাসবাদী নন। তাঁহারা বরং শুভেচ্ছার বার্তা লইয়াই আসেন। দুই দেশের মানুষের মধ্যে এই অবসরে শুভেচ্ছা ও সম্প্রীতির যে বিনিময় ঘটে, তাহার রেশ বহু দিন থাকিয়া যায় এবং ছড়াইয়া পড়ে। ২৬/১১-র দুঃখজনক ঘটনার পরেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কিন্তু থমকাইয়া নাই, বরং ব্যবসাবাণিজ্য ও অন্যান্য বিনিময় আগের মতোই চলিতেছে। তবে কেবল খেলাধুলার উপর একটা অলিখিত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকিবে কেন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.