জুলাই ১৩, বিকেল সাড়ে চারটে। জওহরলাল নেহরু রোড থেকে কোনও ট্যাক্সিই যেতে রাজি হচ্ছে না। সামনেই জাদুঘর সংলগ্ন পুলিশ-কিয়স্ক। ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান করায় অভিযোগ জানানোর ফর্ম চাইতে গেলে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী জানালেন, আজকাল ট্রাফিক সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পুলিশ-কিয়স্কে নেওয়া হয় না। তার জন্য যেতে হবে থানায়। অন্যান্য ফর্মের কথা জিজ্ঞাসা করতেও উত্তর মিলল, সমস্ত অভিযোগই করতে হবে থানায় গিয়ে।
ওই দিনই বিকেল সাড়ে পাঁচটা। উত্তর কলকাতার বিধান সরণি ও বিবেকানন্দ রোডের মোড়ে পুলিশের কিয়স্কে বাড়ির ভাড়াটে সংক্রান্ত বিবরণের ফর্ম চাওয়ায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মী বাক্স হাতড়াতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পরে কিছু না-পেয়ে থানায় যেতে বললেন। |
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে অবশ্য ট্যাক্সি যেতে রাজি না হওয়ার জন্য অভিযোগ জানানোর ফর্ম পাওয়া গেল। কিন্তু বাকি তিনটির (ভাড়াটে সংক্রান্ত বিবরণের ফর্ম, পরিচারিকা নিয়োগের আগে তাঁর পরিচয় সংক্রান্ত বিবরণের ফর্ম এবং অন্যান্য অভিযোগ সংক্রান্ত ফর্ম) কোনওটিই মিলল না। অভিযোগ উঠেছিল, শহরের অধিকাংশ পুলিশ-কিয়স্কেই কোনও ফর্ম পাওয়া যাচ্ছে না। এরই সত্যতা যাচাই করতে গিয়েই দেখা গেল শহরের এই ছবি।
২৩ জুনও হয়েছিল একই রকম অভিজ্ঞতা। সন্ধ্যা সাতটায় ট্যাক্সি যেতে রাজি হচ্ছে না বলে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও নিউ সিআইটি রোডের মোড়ে পুলিশ-কিয়স্কে অভিযোগ জানাতে গেলে ট্রাফিক সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর ফর্ম দিতে পারেননি কর্তব্যরত পুলিশকর্মী। কিয়স্কের ভিতরে খুঁজে পেলেন না অন্য কোনও ফর্মও। আধ ঘণ্টা পরে ধর্মতলায় কে সি দাশের উল্টো দিকে পুলিশ-কিয়স্কেও ওই ফর্ম চাওয়ায় মিলল একই উত্তর।
বছর কয়েক আগে ঘটা করে শহরের বিভিন্ন রাস্তার ধারে কিয়স্ক চালু করেছিলেন লালবাজারের কর্তারা। উদ্দেশ্য ছিল, থানা দূরে হলে পথচলতি এবং এলাকার মানুষকে পুলিশি পরিষেবা দেওয়া। ট্রাফিক সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি এই কিয়স্কগুলিতে পরিচারিকা নিয়োগের আগে তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া বা বাড়ির ভাড়াটের পরিচয় পুলিশকে জানানোর জন্য আলাদা আলাদা ফর্ম রাখা হচ্ছিল। তবে নাগরিকদের অনেকেরই অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরে ওই কিয়স্কগুলি থেকে ঠিক মতো পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না। মিলছে না অভিযোগ জানানোর ফর্ম। |
শুধু চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ধর্মতলা মোড়, জওহরলাল নেহরু রোডেই নয়, শহরের প্রায় সর্বত্রই পুলিশ-কিয়স্কগুলির একই অবস্থা।
লালবাজার সূত্রের খবর, কিয়স্কে পুলিশি পরিষেবা সংক্রান্ত ফর্ম ঠিকঠাক রয়েছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-দেরই। ফর্ম না-থাকলে ডিভিশনাল ডিসি মারফত লালবাজারে ফর্ম চেয়ে পাঠানোর নিয়ম। লালবাজার থেকে ফর্মগুলি পাঠানো হয় থানায়। সেখান থেকে তা বিলি হওয়ার কথা বিভিন্ন কিয়স্কে।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও নিউ সিআইটি রোড মোড়ের কিয়স্কটি বৌবাজার থানার অন্তর্গত। পনেরো দিন পরে শুক্রবার ফের ফর্ম চাইতে যাওয়া হলে জানা গেল, ওই কিয়স্কে এখন কোনও ফর্মই নেই। এ দিন বৌবাজার থানায় ওই ফর্ম না পাওয়ার কথা বলতে জানা গেল, ফর্ম ছিল, হয়তো শেষ হয়ে গিয়েছে। আজই পাঠানো হবে। অন্য দিকে, জাদুঘর সংলগ্ন কিয়স্ক থেকে কোনও ফর্ম পাওয়া না গেলেও নিউ মার্কেট থানা অবশ্য জানায়, ওই কিয়স্কে গেলেই মিলবে সব ফর্মই।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “সদর দফতরে সব ধরনের ফর্ম থাকে। থানার ওসি-দের ‘রিক্যুইজিশন’ দিতে হয়। চাইলেই তা পাওয়া যায়।”
|
দক্ষিণ থেকে উত্তর শহরের তিন প্রান্তে পুলিশ-কিয়স্কের ছবিটা একই।
বাক্স খালি, অভিযোগ জানানোর একটিও ফর্ম নেই। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য। |