উত্তরপাড়ার হিন্দুস্থান মোটরস-এর কারখানা নিয়ে জট কাটল না।
উপনগরী তৈরির জন্য কারখানার অব্যবহৃত ৩১৪ একর জমি এক বেসরকারি সংস্থাকে ৮৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে সরকারকে জানিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। সেটা ২০০৬-এর ঘটনা। কিন্তু পরে সরকার জানতে পারে, হিন্দমোটর ওই জমি আদতে বিক্রি করেছে ২৮৫ কোটি টাকায়।
বাম আমলে ওই ঘটনা নিয়ে দু’দফায় তদন্তে জমি বিক্রি নিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। নতুন সরকার এই জমি কেলেঙ্কারির ভিজিল্যান্স তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি, কারখানা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা, অথবা সমমূল্যের জমি ফেরত দিতে হবে। কারখানা কর্তৃপক্ষ এর কোনওটাই দিতে অপারগ বলে জানানোয় এ দিন তাঁদের বৈঠকে ডেকেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ। কিন্তু সেখানেও কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি বলে মহাকরণের খবর। সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, “আলোচনা হয়েছে। কিছুটা অগ্রগতিও হয়েছে। তবে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” এর ফলে উপনগরী তৈরির কাজ ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
রাজ্যে তাদের গাড়ি কারখানাটির পুনরুজ্জীবনের জন্য অব্যবহৃত ৩১৪ একর জমি বিক্রি করতে চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন হিন্দমোটর কর্তৃপক্ষ। ভূমি সংস্কার দফতর সেই আবেদন মঞ্জুর করে। বেঙ্গালুরু-কেন্দ্রিক সংস্থা শ্রীরাম প্রপারটিস-এর সঙ্গে চুক্তি করে তাদের কাছে ওই ৩১৪ একর জমি বেচে দেয় গাড়ি সংস্থাটি। কিন্তু পরে উপনগরী প্রকল্পের জন্য সরকারি ছাড়পত্র দেওয়ার সময়েই আসল তথ্য বেরিয়ে পড়ে। সরকার জানতে পারে, ৮৫ কোটি নয় ওই জমি বিক্রি হয়েছে ২৮৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা উপার্জনের কথা কারখানা কর্তৃপক্ষ চেপে গিয়েছেন।
সরকারকে ‘ফাঁকি’ দেওয়ার ‘শাস্তি’ হিসাবে অতিরিক্ত ওই ২০০ কোটি টাকা, অথবা জমি ফেরত দেওয়ার দাবিতে কঠোর অবস্থান নেয় নতুন সরকার। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, টাকা অথবা জমি ফেরতের দাবি সম্পর্কে তাঁদের অবস্থান জানতে চেয়ে মাস দু’য়েক আগে হিন্দমোটর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় সরকার। উত্তরে তাঁদের অপারগতার কথা জানিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। তবে আরও একটি বিষয় বিবেচনার মধ্যে রয়েছে। প্রস্তাবিত উপনগরীর আবাসন বিক্রি করে পাওয়া অর্থের ৪% হিন্দমোটর পাবে বলে শ্রীরাম প্রপারটিস-এর সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। সেই অঙ্কও ২০০ কোটি টাকার কম নয়। রাজ্য চাইছে, ‘বিকল্প’ হিসাবে এই টাকাটাই সরকারকে দেওয়া হোক।
সরকারের সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষের এই টানাটানির প্রেক্ষাপটে এ দিনের বৈঠকেও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। হিন্দমোটরকে ‘ছাড়’ দিলে অন্যরা ভবিষ্যতে সুযোগ নিতে চাইবে। আবার ধুঁকতে থাকা রাজ্যের একমাত্র গাড়ি কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও সরকার দ্বিধায়। ফলে উভয় সঙ্কটে পড়েছে রাজ্য। তবে দু’কূলই বাঁচিয়ে সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে। |