এই প্রথম বিতর্ক সরিয়ে একমত সব পক্ষ।
আর্থিক অনটন ও আইনি বিবাদে জর্জরিত হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস-এর ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনায় সায় দিল সংস্থার দুই কর্ণধার রাজ্য সরকার এবং চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। নয়া পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে অন্যতম ঋণদাতা
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-ও। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, চ্যাটার্জি গোষ্ঠী ও স্টেট ব্যাঙ্ক লিখিত ভাবে অনুমতি দিয়েছে বিষয়টিতে।
কার্যত সংস্থাকে বাঁচাতে মরিয়া পদক্ষেপ হিসেবেই বিবাদ সরিয়ে এই পরিকল্পনায় রাজ্য ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠী শিলমোহর দিল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। পরিকল্পনার মূল শর্ত হল: অন্য সংস্থার হয়ে নিজেদের কারখানায় উৎপাদন করবে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস। ন্যাপথা কিনে দেবে সেই সংস্থা। পণ্য বিক্রিও তারাই করবে। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস এই পরিষেবা বাবদ টাকা নেবে। অর্থাৎ ন্যাপথা কেনার খরচ নেই। নেই বিপণনের দায়িত্বও। কাজেই নিজস্ব পরিকাঠামো ও কর্মীদের কাজে লাগিয়ে, বাড়তি কোনও খরচ ছাড়াই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব।
|
অবশেষে খানিক স্বস্তি?-ফাইল চিত্র |
গত সপ্তাহেই হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস নিয়ে বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী তথা সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব কারখানার পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় পৌঁছনোর চেষ্টা করা হবে। আপাতত তা ঘণ্টায় ২৫০ টন। এত দিন উৎপাদন ক্ষমতার সদ্ব্যবহার ১৪০-এ নামলেও সম্প্রতি কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ টনে। এ মাসেই তা ছোঁবে ২২০ টন। উৎপাদন বাড়লে জুলাইয়েই কর, সুদ ও যন্ত্রপাতির মেরামতি খাতে খরচ মেটানোর আগের ধাপে অন্তত ২০ কোটি টাকা এইচপিএল লাভ করবে বলে জানিয়েছিলেন পার্থবাবু।
প্রকৃতপক্ষে শুধু ব্যাঙ্ক ঋণের দিকে তাকিয়ে থাকতে নারাজ পেট্রোকেম। কারণ ন্যাপথা কিনতে যে টাকা ব্যাঙ্কের কাছ থেকে পাওয়া যাবে, তাতে লাভের গুড় পিঁপড়ে খেয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। উৎপাদন খরচ ও সুদ মিলিয়ে যে টাকা সংস্থার ঘর থেকে বেরোবে, তাতে আর এক প্রস্ত লোকসানের বোঝা ঘাড়ে চাপবে। ফলে বেহাল আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হবে না বলেই মনে করছে সংস্থা।
মঙ্গলবার মহাকরণে মুখ্য সচিবের ঘরে বৈঠক করেন সংস্থার এমডি সুমন্ত্র চৌধুরী, শিল্প সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিল্পোন্নয়ন নিগমের এমডি নন্দিনী চক্রবর্তী। কথা হয় সংস্থাকে চাঙ্গা করার নানা উপায় নিয়ে। যার অন্যতম কারখানায় অন্য সংস্থার হয়ে উৎপাদনের পরিকল্পনা। এ ব্যাপারে ইচ্ছাপত্র চাওয়া হবে। কী ধরনের সংস্থার কাছ থেকে ইচ্ছাপত্র চাওয়া হবে ও কী শর্ত দেওয়া হতে পারে, তা নিয়েও কথা হয়েছে। তবে সব পক্ষই একে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে দেখছে। এক অর্থে সংস্থার বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একে মরিয়া পদক্ষেপ বলতেও দ্বিধা করছে না সংস্থার অন্দরমহল। যা সংস্থাকে আর্থিক ভাবে পোক্ত করবে ও লগ্নি টানতে সাহায্য করবে। কারণ বেশি দিন সংস্থার নিত্যদিনের পরিচালনায় জড়িত থাকতে চায় না রাজ্য। |