যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে আবর্জনার স্তূপ। নিকাশি বেহাল। অভাব পরিশ্রুত পানীয় জলেরও। তার জেরে ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে বারাবনি ব্লকের মনোহরবহাল গ্রামে। গ্রামের বাউরিপাড়ায় প্রকোপ সবথেকে বেশি। সোমবার সকাল পর্যন্ত প্রায় কুড়ি জনকে অসুস্থ অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর তিনেক আগে গ্রামে একটি পরিস্রুত জলের পাইপলাইন বসানো হলেও এখন আর তা থেকে জল মেলে না। এই অবস্থায় পুকুর, কুয়োর অপরিস্রুত জল পান করেই দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। নিকাশির অবস্থাও তথৈবচ। ওই গ্রামে মেডিক্যাল টিম পাঠিয়েছে মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর। পর্যাপ্ত ওষুধ এবং ওআরএস সরবরাহ হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হস্তক্ষেপ করেছে মহকুমা প্রশাসন।
শনিবার বিকেল থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় রবিবার মহকুমা স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল সেখানে যায়। ওআরএস এবং ওষুধ দেওয়া হলেও সোমবারও অবস্থার বিশেষ হেরফের হয়নি। সোমবার আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দলকে সেখানে পাঠিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। মহকুমাশাসক সুরজিৎ দত্তশর্মা বলেন, “প্রয়োজনে আমরা সেখানে অস্থায়ী শিবির তৈরি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। আপাতত প্রচুর পরিমাণে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি দলকে দু’বেলা রোগীদের গিয়ে দেখে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |
 |
 |
রাস্তাজুড়ে নোংরা জল। |
পাইপলাইন আছে, নেই জল। |
|
এলাকায় ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দেওয়ায় পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব ও নিকাশির অব্যবস্থার অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। সোমবার এলাকাতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বেশির ভাগ জায়গায় পাকা নর্দমা নেই। যেখানে-সেখানে জমে নোংরা জল। বর্ষার জলে ছোটখাটো ডোবা ও পুকুর কানায় কানায় পূর্ণ। নিকাশি না থাকায় আর্বজনা-সহ ওই নোংরা জল ডোবা-পুকুরেই জমা হচ্ছে। সেই জলেই কাপড় ধোয়া থেকে বাসন মাজা সবই করতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। আবর্জনার স্তূপ থেকে গ্রামের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। গ্রামের এক বাসিন্দা মন্দিরা বাউরির কথায়, “সারাদিন এই নোংরা ঘেটেই আমাদের সব কাজ করতে হয়। বৃষ্টির সময়ে এই আবর্জনা আমাদের ঘরেও ঢুকে যায়।” আর এক বাসিন্দা অশোক বাউরি বলেন, “পরিস্রুত জল আনার জন্য প্রতিদিন দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে পাঁচগাছিয়ায় যেতে হয়। তা না পারলে কুয়ো, পুকুরের অপরিস্রুত জলই ভরসা।” মহকুমা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা এলাকা পরিদর্শনের পরে ডায়েরিয়ার প্রকোপের কারণ হিসেবে অপরিস্রুত পানীয় জল ও নিকাশির অব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন। বারাবনি ব্লকের যুব তৃণমূলের তরফে মহকুমাশাসকের নিকাশি ও পাইপলাইন সংস্কারের দাবি জানানো হয়। সংগঠনের ব্লক নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় অভিযোগ করেন, তাঁরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বহু বার ব্লক প্রশাসন ও নুনি পঞ্চায়েত কার্যালয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু ফল মেলেনি। নিকাশির অব্যবস্থার কথা স্বীকার করেছেন নুনি পঞ্চায়েতের প্রধান সুনীল বাউরি। তিনি জানান, আপাতত কাঁচা নর্দমা ও ডোবাগুলিতে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। একশো দিনের প্রকল্পে পাকা নর্দমা তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। আসানসোলের মহকুমাশাসক সুরজিৎ দত্তশর্মা বলেন, “জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে নির্দেশ দিয়েছি, ওই পাইপলাইন দিয়ে জল পড়ছে না কেন তা খুঁজে বার করতে। নিকাশির অব্যবস্থা দূর করতে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
|