সম্পাদকীয় ২...
মানবতার কবর
ন্দিদশা, নির্যাতন, অকালমৃত্যু এবং চোরাকবর, মানবজীবনে ইহার চাইতে করুণ পরিণতি আর কিছু হইতে পারে না। কোনও দেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইন-শৃঙ্খলার বিপর্যয় ঘটিলে হতভাগ্য নাগরিকদের এমন পরিণতি হইয়া থাকে। এ রাজ্যে সমাজ কল্যাণ দফতরের তত্ত্বাবধানে থাকিয়া মানসিক রোগীর যে সেই পরিণতি ঘটিতেছে, তাহাতে স্পষ্ট যে গণতন্ত্রের আড়ালে ফ্যাসিবাদী শাসনতন্ত্র সদর্পে কায়েম রহিয়াছে। সেখানে মানবিকতার মূল্য সামান্য, বিধিনিয়মের প্রতি শ্রদ্ধা অল্পতর, ক্ষমতাই শেষ কথা উচ্চারণ করিয়া থাকে। গুড়িয়া নামের যুবতী যে নীরবে চলিয়া গেলেন, তাহা অকস্মাৎ নহে, ব্যতিক্রম নহে। রাজ্যের বিবিধ মানসিক হাসপাতালে এবং আবাসিক ‘হোমে’ যে রোগীরা বাঁচিয়া রহিয়াছে তাহারা অধিকাংশ এক রকম মরিয়াই আছে, শ্বাস বন্ধ হয় নাই এই পর্যন্ত। মাটির তলায় না হইলেও, সমাজ এক অর্থে তাহাদেরও পুঁতিয়া দিয়াছে, কারণ তাহারা আমাদের দৃষ্টিগোচর নহে, আমাদের জীবনযাত্রার পরিধির কোথাও তাহারা নাই। যে অদৃশ্য, অশ্রুত, সর্বথা অনুপস্থিত, তাহাদের মৃত ব্যতীত কী বলা যাইতে পারে? দরিদ্র মানসিক রোগীরা মৃতেরও অধিক, জীবিত থাকিতে কেহ যাহাকে স্মরণ করে না, তাহার অধিক মৃত আর কে আছে?
কেহ বলিতে পারেন, এমন দুর্ঘটনা ঘটিলে তাহার প্রতিকারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। অকারণ বিলাপ করিয়া কী লাভ? সত্য। মানসিক রোগীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থায় সমস্যার অন্ত নাই, সমাধানের সুযোগ যথেষ্ট রহিয়াছে, তাহার জন্য সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজনও বটে। কিন্তু গুড়িয়ার দেহ নিষ্ক্রান্ত হইতে দেখিয়া এই প্রশ্ন মনে উঠিতে বাধ্য যে, কোনটি অধিক অসহনীয়, কপট বিলাপ না কি কপট প্রতিজ্ঞা? মানসিক হাসপাতালে কিংবা সরকারি আশ্রয়ে মানসিক রোগীদের উপর যে মর্মান্তিক আচরণ করা হইয়া থাকে, তাহা নূতন সংবাদ নহে। গুড়িয়ার দেহ সরকারি হোমের মাটির তলা হইতে বাহির হইতে দেখিয়া অনেকে শিহরিয়া উঠিয়াছে। এই ভাবেই তামিলনাড়ুর মানসিক রোগীদের পুড়িয়া মরিতে দেখিয়া এক দিন সকলে শিহরিয়া উঠিয়াছিল। যে কোনও গড়পড়তা মানসিক হাসপাতালে, কিংবা হোমের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেও তেমনই বীভৎসতার অনুভূতি গ্রাস করিবে সাধারণ নাগরিককে। মানসিক রোগীদের মানবাধিকার ভঙ্গের সংবাদ নিয়মিত প্রকাশ পাইতেছে।
তবু যে এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটিয়া চলিতেছে, তাহার কারণ অবৈজ্ঞানিক এবং অমানবিক ধারণার বশবর্তী হইয়াছেন সমাজের অধিকাংশ মানুষ। ‘ওরা আমাদের কেহ নহে,’ এই চিন্তাতেই সকলে নিরাপত্তা খুঁজিতেছেন। ফলে পরিত্যক্ত শিশু, ধর্ষিত মহিলা, পাচার-হওয়া বালিকা, নির্যাতিতা গৃহবধূ, মানসিক রোগী, সকল শ্রেণির মানুষ পরিচিতিহীন, ভরসাহীন জীবন কাটাইতেছেন নানা হোমে। তাঁহারা কে কেমন আছেন, সেই প্রশ্ন করাই অর্থহীন। এই ব্যবস্থায় কেহ ভাল থাকিতে পারেন কি না, তাহাই প্রশ্ন। গুড়িয়ার শেষ আশ্রয় ওই বেসরকারি হোমটিতে বিধিনিষেধ মানা হইতেছিল কি না, তাহা নেহাত অসার নিয়মরক্ষার প্রশ্ন। আরও একটি তদন্ত, আবারও আর একটি প্রতিকার কর্মসূচির প্রস্তাবনা, তার পর তাহার বিস্মরণ-- এই প্রচলিত নাটক অভিনয়ের চাইতে শব্দহীন, ভয়ার্ত বিলাপই গুড়িয়ার মৃত্যুর উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া। ক্রন্দন নিষ্ফল হইতে পারে, ছদ্ম-প্রতিকার বড় নির্মম।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.