উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার বন্যা ও নদী ভাঙন রোধের জন্য ৬টি প্রকল্প বাবদ ব্রহ্মপুত্র বোর্ড থেকে দ্রুত অন্তত ১৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ আদায় করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সেচ দফতর। সরকারি সূত্রের খবর, সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও তাড়াতাড়ি টাকা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী পবন বনশালকে একাধিকবার অনুরোধ করেছেন। ওই কাজ ত্বরান্বিত করতে রাজ্য সরকারের তরফে সেচ দফতরের শিলিগুড়ির এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সমর সরকারকে ‘নোডাল অফিসার’ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের প্রতিনিধিরা সরেজমিনে উত্তরবঙ্গের প্রকল্প এলাকাগুলি খতিয়ে দেখে কিছু সংশোধনের পরামর্শ দেন। সেই সংশোধিত রিপোর্ট চলতি মাসেই বোর্ডের সভায় জমা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সমরবাবু বলেন, “রাজ্যের সেচমন্ত্রী কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী পবন বনশলের সঙ্গে কথা বলে উত্তরবঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রক্রিয়ার সূচনা করিয়েছেন। সেই মতো ৬টি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়। বিশদে প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়ার পরে বোর্ডের প্রতিনিধিরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কিছু পরামর্শ দেন। সেই মতো সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব চলতি মাসের সভায় জমা পড়বে। পুজোর আগে অর্থ বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করছি।” ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার সমস্ত শাখা ও উপনদীগুলিকে কেন্দ্র করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ প্রকল্প-সহ নানা কাজের জন্য ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার পৃথক বোর্ড গঠন করে। উত্তরবঙ্গের তিস্তা থেকে সঙ্কোশ, সমস্ত নদীই ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে মিশেছে। সুতরাং, এই নদীগুলিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রহ্মপুত্র বোর্ড থেকেই অর্থ সাহায্য প্রাপ্য। যদিও প্রথম থেকেই উত্তরবঙ্গকে বাদ রেখেই ব্রহ্মপুত্র বোর্ড কর্তৃপক্ষ সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি করেছে বলে অভিযোগ। গত এক দশকে এ নিয়ে বার বার বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জানানোর পরে ২০০৭-০৮ আর্থিক বছর থেকে তিন বার যথাক্রমে ৭, ১২ ও ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য বলে সেচ দফতর জানিয়েছে। উপরন্তু, ফি বছর বন্যা এবং ভাঙনে জেরবার হচ্ছে উত্তরবঙ্গের এই এলাকা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পরেই সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া এই ব্যাপারে উদ্যোগী হন। ব্রহ্মপুত্র বোর্ডে রাজ্যের প্রতিনিধি মনোনয়নের দাবি তোলেন। সেই দাহবি এখনও পূরণ না-হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপে এ বার বড়মাপের অর্থ সাগায্য মেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সেচ আধিকারিকেরা। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিস্তা থেকে সঙ্কোশ মোট ৬টি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে তিস্তার জন্য জমা পড়েছে মোট ৪টি প্রকল্প। ওই চারটি প্রকল্প হবে সেবক, চুমুকডাঙি, রঙাধামালি এবং মণ্ডলঘাট এলাকায়। সেচ আধিকারিকেরা বিশেষ ভাবে উদ্বিগ্ন সেবক নিয়ে। সেবকের সাত মাইলে তিস্তার ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তিস্তা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের খুবই কাছে চলে এসেছে। ভাঙনে বৈকুণ্ঠপুর ও মহানন্দা অভয়ারণ্যের বেশ কিছু এলাকা গাছপালা সমেত তলিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ওই এলাকায় ভাঙন রোধ করা দরকার বলে মনে করছেন সেচ আধিকারিকেরা। বাকি দুটি প্রকল্প হবে জলঢাকা এবং তোর্সা-রায়ডাক নদীতে। |