|
|
|
|
পাশে স্বেচ্ছাসেবীরা |
দলমোড়ের রানি ঠাঁই পেল হোমে |
নিলয় দাস • বীরপাড়া |
অসুস্থ হয়ে স্বামী মারা যান দেড় বছর আগে। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেননি মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রী। স্বামী অফিস থেকে ফিরবেন সেই আশায় জানালায় চোখ রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। বিড়বিড় করে একা কথা বলেন। আত্মীয়স্বজন এমন কেউ নেই পাশে দাঁড়াবে। তাঁকে বোঝাবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। প্রতিবেশীর দেওয়া খাবার ভরসা। অবশেষে শুক্রবার দুপুর নাগাদ বীরপাড়া থানার দলমোড় চা বাগান এলাকার বাবু লাইনের বাসিন্দা রাণি কর নামে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে রাণি দেবীর স্বামী দলমোড় চা বাগান অফিসের কর্মী অমলকুমার কর অবসর নেন। ওই নিঃসন্তান দম্পতির নিজস্ব বাড়ি না-থাকায় বাগানের বাবু লাইনের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন। দেড় বছর আগে অমলবাবু মারা যান। কিন্তু রাণি দেবী তা মেনে নিতে পারেননি। অল্প দিনের মধ্যে মানসিক ভারসাম্য হারান। এর পর থেকে একা ঘরে থেকে বিড়বিড় করে কথা বলে দিন কাটাতেন। দিনভর জানালায় চোখ রাখতেন। এতদিন প্রতিবেশী এক বাগান কর্মী দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তাঁর। সম্প্রতি অবসর নিলে মহিলার কী হবে ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ওই বাগান কর্মী। তিনি বীরপাড়া ওয়েল ফেয়ার অর্গানাইজেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে রাণি দেবীর কথা জানান। সংস্থার কর্তারা খোঁজখবর নিয়ে আইনিভাবে মহিলার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেয়। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না রামকৃষ্ণ অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মহিলাকে সেখানে পাঠাতে উদ্যোগী হন। শুক্রবার সেই কাজ করলেন তাঁরা। বীরপাড়া ওয়েল ফেয়ার অর্গানাইজেশনের সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ দে বলেন, “একজন অসহায় মাসিক ভারসাম্যহীন মহিলার জীবন কেমন করে কাটবে সেটা ভেবে চিন্তায় ছিলাম। অনেক আলোচনার পরে সংস্থার তরফে ওই মহিলার আইনগত অভিভাবক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের হোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে রাখতে রাজি হয়েছে। তিনি যেন সেখানে ভাল ভাবে থাকতে পারেন সেটা দেখা হচ্ছে।” স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে খুশি দলমোড় বাগানের কর্মীরা। তাঁরা জানান, দেড় বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পরে রাণি দেবী মানসিক ভারসাম্য হারান। বাগানের কোয়ার্টারে একা থাকতেন। বাড়ির চারপাশ জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। স্বামী কাজ থেকে ফিরে আসবে ভেবে দিন ভর জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন। রাণি দেবীর কোয়ার্টারের পাশে থাকেন শ্যামাপদ বক্সি। তিনি সহকর্মীর স্ত্রীর ওই দুর্দশা দেখে দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেন। শ্যামাপদবাবু বলেন, “জীবনভর আমাদের পক্ষে রাণি দেবীকে দেখভাল করা সম্ভব নয়। সম্প্রতি অবসর নিয়েছি। এখন অন্য কোথাও চলে গেলে মহিলার কী হবে সেটা ভেবে উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা তাঁর অভিভাবক হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ায় নিশ্চিন্ত হলাম।” মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের বিডিও পেমবা শেরপা বলেন, “বীরপাড়া ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন দৃষ্টান্তমূলক কাজ করল। মহিলার জীবন নিশ্চিত হল।” |
|
|
|
|
|