|
|
|
|
পাসপোর্ট সেবাকেন্দ্র চায় শিলিগুড়ি শহর |
কৌশিক চৌধুরী • শিলিগুড়ি |
শহরের একটি বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট কলেজের ছাত্রী সাথী। গত বছর সেপ্টেম্বর মাস শিলিগুড়ির পাসপোর্ট দফতরে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। মাস ছয়েক পরেও পাসপোর্ট না পেয়ে তিনি তাঁকে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় কলকাতার দফতরেও। একই অবস্থার মধ্যে পড়েন দার্জিলিঙের বাসিন্দা বিকাশ রাই। দুই জনই শেষে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেন। একইভাবে গত মে মাস শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দা সিদ্ধার্থ কাকও পাসপোর্টের জন্য কার্যত কতবার দফতরে ঘুরেছেন তার ইয়াত্তা নেই। এমনই ভোগান্তি হয়েছে রাজেশ শাহ, প্রতীক রাই, রাজীব সরকারদের। দক্ষিণবঙ্গের পর এই অঞ্চলে পুরোদস্তুর ‘পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র’ (পিএসকে) না থাকায় গোটা উত্তরবঙ্গ, সিকিমের বাসিন্দাদের রোজ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাসপোর্ট দফতর বলতে শিলিগুড়িতে রয়েছে শুধু একটি আবেদন গ্রহণ কেন্দ্র। সরকারি পরিভাষায় যার নাম ‘পাসপোর্ট অ্যাপ্লিকেশন কালেকশন সেন্টার।’ ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিদেশ মন্ত্রক পাসপোর্ট ক্ষেত্রে সরলীকরণ করে দেশের বিভিন্ন শহরে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র (পিএসকে) খুলছে। এবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের জন্য একটি পিএসকে খোলার দাবি উঠল বিভিন্ন মহল থেকে। খোদ এই দাবি তুলেছেন শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যও। বিধায়ক রুদ্রনাথবাবু বলেন, “গোটা উত্তরবঙ্গ তো বটেই আশেপাশের কয়েকটি রাজ্য শিলিগুড়ি উপর নানা ভাবে নির্ভরশীল। সেখানে পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণ কেন্দ্র দিয়ে কিছু হবে না। দরকার পাসপোর্টের স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি আঞ্চলিক দফতর। দ্রুত আমরা এসজেডিএ-র তরফ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে চিঠি দিচ্ছি। প্রাথমিকভাবে আমার দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” রুদ্রনাথবাবু জানান, এর জন্য শহরের কোনও কেন্দ্রস্থলে পাসপোর্ট দফতরের নতুন ভবনের ব্যবস্থাও এসজেডিএ করে দিতে প্রস্তুত। এই বিষয়ে কলকাতার রিজিওন্যাল পাসপোর্ট দফতরের এক উচ্চ পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, বহরমপুরে একটি সেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। শিলিগুড়িতে অবশ্যই সেবা কেন্দ্র খোলা হবে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গোটা দেশে ৩৭টি পাসপোর্ট দফতর এবং ৭৭ টি পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র বর্তমানে চলছে। সেই সঙ্গে দ্রুত পাসপোর্ট বাসিন্দাদের হাতে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন শহরে বসছে পাসপোর্ট মেলাও। রাজ্যে কলকাতার আঞ্চলিক দফতর ছাড়া শিলিগুড়িতে কেবলমাত্র ‘ম্যানুয়াল’ আবেদনগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে মাত্র। ২০০০ সালের মে মাসে এলাকার বাসিন্দাদের দাবি মেনে কেন্দ্রটি চালু হয়। একজন অফিসার ইনচার্জ শুধুমাত্র একজন করণিককে নিয়ে কার্যত তিনটি ঘরের মধ্যে কোনওমতে দফতরটি সামালাচ্ছেন। গড়ে প্রতিমাসে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার আবেদন এই কেন্দ্রে জমা পড়ে। সবই প্রাথমিক পরীক্ষার পর কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে ফের জেলায় জেলায় পুলিশ ‘ভেরিফিকেশনে’র জন্য পাঠানো হয়। তার পরে তা ফের প্রত্যেক জেলাসদরের মাধ্যমে কলকাতার দফতরে পৌঁছায়। সেখান থেকে আবেদনকারীদের স্পিডপোস্টের মাধ্যমে পাসপোর্ট পাঠানো হয়। এতে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়ার সরকারি সময়ের থেকেই অনেক সময়ই বেশি সময় লাগে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। নানা কারণে ছয় মাসের বেশি সময়ের পরেও অনেকে পাসপোর্ট পায়নি বলেও অভিযোগ পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র বা পিএসকে হলে এই সমস্যা মিটবে বলে বাসিন্দাদের আশা। পাসপোর্ট কেন্দ্রের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, সেবা কেন্দ্র তৈরি হলে ইন্টারনেটে অনলাইন আবেদন করবেন। নির্দিষ্ট দিন এবং সময় আবেদনকারীকে জানানো হয়। ওই দিন কেন্দ্রে পৌঁছালে সেবাকেন্দ্রের ‘সিটিজেন সার্ভিস এক্সিকিউটিভ’ আবেদনকারীর ছবি, আঙুলের ছাপ নেবেন। সমস্ত তথ্য কম্পিউটারে পরীক্ষার পর আপলোড করা হবে। এর পরেই কেন্দ্রের ‘ভেরিফিকেশন অফিসার’ কাগজপত্র নতুন করে পরীক্ষা করে আবেদনকারীকে পাসপোর্ট ‘গ্রান্টিং অফিসারের’ কাছে পাঠাবেন। তিনি আবেদনকারীর সঙ্গে কথা বলবেন। এইভাবে একই ছাদের তলায় পর পর এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সহজেই পাসপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ে পেয়ে যাবেন আবেনকারী। এই পদ্ধতিতে তৎকাল ৩ দিনে, সাধারণ পাসপোর্ট একমাসে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় শুরু করেছে সরকার। বিকাল ৪ টা অবধি দফতরের সময়সীমা বাড়িয়ে ৭ টা অবধি করার পরিকল্পনা চলেছে বলে আধিকারিকরা জানিয়েছেন। |
|
|
|
|
|