ভাগের মা গঙ্গা পায় না। কিন্তু রাস্তা? সে তো সকলের। সেটা কি সারানো যায় না!
সারানো যে হয় না, নন্দকুমার-দিঘা সড়কটিই তার প্রমাণ। রাস্তা কার, তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের টানাপোড়েনে নন্দকুমার থেকে দিঘা পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার রাস্তাটির মেরামতির কাজ আটকে রয়েছে। শুক্রবার মহাকরণে রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক পরিবহণ দফতরের ডিজি খাণ্ডস্বামীর বৈঠকের পরেও সেই টানাপোড়েন কাটল না।
রাজ্যের জাতীয় সড়কগুলির মেরামতি নিয়ে এ দিন মহাকরণে সুদর্শনবাবু ও খাণ্ডস্বামীর মধ্যে বৈঠক হয়। পরে সুদর্শনবাবু বলেন, নন্দকুমার থেকে দিঘা পর্যন্ত সড়কটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের রাস্তা। সেটির মেরামতি দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। আর খাণ্ডস্বামী জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যখনই সড়কটি কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক পরিবহণ মন্ত্রককে দিয়ে দেওয়া হবে, তখনই তার কাজ শুরু হবে।
ওই রাস্তাটি নিয়ে এমন টানাপোড়েন কেন?
রাজ্যের পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, ওই ৯১ কিলোমিটার রাস্তাটিকে ইতিমধ্যেই জাতীয় সড়ক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সড়কটি আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক তাই কাজ শুরু করতে পারছে না। রাজ্যের পূর্তসচিব অজিত বর্ধন বলেন, রাস্তাটি দ্রুত জাতীয় সড়ক সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।
পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার জানান, রাজ্যের ৩১, ৩১এ এবং ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের বেশ কিছু অংশের অবস্থা খারাপ। ফলে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। পূর্তমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীও বারবার বিষয়টি তুলেছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছিল না। আমরা এ দিনও বিষয়টি উত্থাপন করেছি। রাস্তা মেরামতিতে সমস্যা কাটাতে জাতীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক এবং রাজ্যের পূর্ত দফতরের অফিসারদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গড়ে তোলা হবে।”
দার্জিলিঙের হিলকাট রোড যে প্রায় দু’বছর ধরে বন্ধ, সেই প্রসঙ্গও ওঠে এ দিনের বৈঠকে। তখন খাণ্ডস্বামী জানান, ওই রাস্তার সমস্যা মেটাতে কী করা যায়, একটি সংস্থাকে দিয়ে তার সমীক্ষা করানো হয়েছে। তাদের পরামর্শ মেনেই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। হিলকাট রোডের তিনধারিয়া ও পাগলা ঝোরায় ধসের ফলে ওই রাস্তাটি প্রায় দু’বছর ধরে অচল। পরমর্শদাতা সংস্থার সুপারিশ:
• তিনধারিয়ায় বারবার ধস রুখতে একটি ছোট সেতু তৈরি করা যেতে পারে।
• পাগলাঝোরায় নীচে থেকে কংক্রিটের সিঁড়ি তৈরি করে রুখতে হবে ধস।
এ দিনের বৈঠকে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জাতীয় সড়কের মেরামতি খাতে অর্থের সংস্থান নিয়েও আলোচনা হয়। খাণ্ডস্বামী জানান, রাজ্যের জাতীয় সড়কগুলি সারানোর জন্য কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই ১২০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। কাকদ্বীপের হাতানিয়া-দোয়ানিয়া সেতু নির্মাণের জন্যও ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার অবশ্য ওই সেতুর জন্য ৩১৯ কোটি টাকা চেয়েছিল। রাজ্যের পূর্তসচিব বলেন, “বিভিন্ন কাজ শুরুতে যাতে দেরি না-হয়, সেটাই নিশ্চিত করা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম বদল করা হয়েছে।” কাজের ক্ষেত্রে এত দিন টাকার সংস্থান পেতে সমস্যা হচ্ছিল। এ বার সেই সমস্যা অনেকটাই কাটানো গিয়েছে বলে খাণ্ডস্বামী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জাতীয় সড়ক মেরামতের জন্য ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা ও পরিকল্পনা-বহির্ভূত খাতে বেশ কিছু টাকা পাওয়া গিয়েছে। তাই টাকা নিয়ে সমস্যা হবে না। |