একশো দিনের প্রকল্পে এ বার বৃক্ষরোপণের বিশেষ পরিকল্পনা নিল রাজ্য সরকার। অরণ্য-সপ্তাহে বন দফতর বৃক্ষরোপণ করেই। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও অন্যান্য দফতরও বৃক্ষরোপণে উদ্যোগী হয়। তারই পাশাপাশি একশো দিনের প্রকল্পেও যাতে বৃক্ষরোপণ করা যায়, সে ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। অরণ্য-সপ্তাহে বৃক্ষরোপণের পরে রাজ্যে সেই রিপোর্টও পাঠাতে বলা হয়েছে। একশো দিনের প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুরের নোডাল অফিসার প্রিয়াঞ্জন দাস বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা মেনেই আমরা বৃক্ষরোপণের পদক্ষেপ করছি।”
এই নতুন প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘গো গ্রিন ক্যাম্পেন’। তবে চলতি বছরে তা যে খুব একটা সফল হবে না, তা সকলেরই জানা। কেননা, এই প্রকল্পে গাছ লাগানোর বিশেষ নির্দেশিকা এসেছে অনেক দেরিতে। ফলে, তা কতটা কার্যকরী হবে--তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সকলরেই। যে কারণে রাজ্য সরকারও চলতি বছরে তেমন কোনও লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেনি। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তত একটি করে সংসদে নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় প্রতিটি সংসদেই স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী বা স্ব-সহায়ক দল থাকার কথা। ওই দলের মাধ্যমেই গাছ লাগানোর কথা বলা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষাকালে রাস্তা তৈরি, পুকুর সংস্কার বা জলাধার নির্মাণ করা যায় না। একশো দিনের প্রকল্পে সাধারণত এই ধরনের কাজই হয়। তা হলে বর্ষাকালে গরিব সাধারণ মানুষ কী ভাবে কাজ পাবেন? সেই লক্ষ্যেই গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার।
গাছ লাগানোর পাশাপাশি তা বাঁচিয়ে রাখার জন্য রক্ষণাবেক্ষণেরও দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে স্ব-সহায়ক দলকে। তার জন্য খরচ বহন করতে হবে গ্রাম পঞ্চায়েতকে। যদি গ্রাম পঞ্চায়েত নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ না দিতে পারে তা হলে স্ব-সহায়ক দলের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে। গাছ বড় হলে তা বিক্রির ৩০ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে স্ব-সহায়ক দলকে। বিনিময়ে তাঁরা নিজস্ব খরচে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবেন। যদিও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতেই একশো দিনের প্রকল্পে গাছ লাগানোর পর ৬ মাস রক্ষণাবেক্ষণের খরচও দেওয়া হয়। ফলে ৬ মাসের জন্য আলাদা করে কোনও সংস্থাকেই অর্থ খরচ করতে হবে না। তারপরেও গরু, ছাগলের হাত থেকে গাছ রক্ষা করতে হলে বা গাছ বড় হওয়ার পরে চুরির হাত থেকে বাঁচাতে যদি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়--তা হলে চুক্তি করতেই পারে।
এর ফলে সামাজিক বনসৃজন যেমন বাড়বে তেমনই সাধারণ মানুষও কাজ পাবেন। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষিত হবে। সব মিলিয়ে উপকৃত হবেন মানুষ। আবার গাছগুলি বড় হওয়ার পরে বিক্রি করলে আয়ও হবে। অর্থাৎ পঞ্চায়েতের আয়ের একটা উৎসও বাড়ল। উল্টোদিকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেলে স্ব-সহায়কদলগুলিও আয়ের একটি নতুন উৎস খুঁজে পাবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম বছরে দেরিতে নির্দেশিকা আশায়, হয়তো এই প্রকল্পে ততটা সাফল্য আসবে না। পরের বছর থেকে এই প্রকল্পে অনেক বেশি সাফল্য আসবে বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি। |