গাছ কাটা ও বিক্রি নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল এগরায়।
সম্প্রতি এগরা ২ ব্লকের দেশবন্ধু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রাজেন্দ্রচক, রুক্মিণীপুর, উত্তর এরেন্দা এলাকার পরিণত ও অপরিণত কয়েকশো আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ কাটা হয়। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতই বন দফতরের অনুমোদন না নিয়ে ওই গাছগুলি কেটেছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মকর্তাদের। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ঝড়েশ্বর সামন্ত অবশ্য বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। নিতান্ত প্রয়োজনে পঞ্চায়েতেরই লাগানো কিছু গাছ কাটা হয়েছে। যা নিয়ে অযথা জলঘোলা করছে পঞ্চায়েত সমিতি। আমাদের অজ্ঞাতে কিছু গাছ অবশ্য গ্রামবাসীরা কেটে নিয়েছেন।”
তৃণমূলের স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য শ্রীমন্ত মান্না ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রকাশ রায় চৌধুরীর দাবি, “২০০০-২০০৩ সাল পর্যন্ত ওই গাছগুলি বনসৃজন প্রকল্পে লাগিয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতি। বন্যাপ্রবণ এই সমস্ত এলাকায় রাস্তা ও খালবাঁধের মাটির ক্ষয় রোধে কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে বলেই এতদিন গাছগুলি কাটা হয়নি।” |
রাজেন্দ্রচক গ্রামে কেটে ফেলা হয়েছে গাছ। ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
সম্প্রতি বন দফতর ও পঞ্চায়েত সমিতির অনুমোদন না-নিয়েই স্থানীয় পঞ্চায়েত গাছগুলি কেটে ফেলায় প্রশাসনে অভিযোগ জানান তাঁরা। কাজ না হওয়ায় মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হন। এরপরই তদন্ত শুরু হয়। তৃণমূলের অন্দরের খবর, গাছ কাটা নিয়ে দলের দেশবন্ধু অঞ্চল কমিটির সভাপতি আলোক মহাপাত্রের সঙ্গেই মূলত বিরোধ প্রকাশবাবু, শ্রীমন্তবাবুদের। যদিও প্রকাশ্যে সেই কথা বলছেন না কেউ। আলোকবাবু বললেন, “পঞ্চায়েত সমিতির গাছ আদৌ কাটা হয়নি। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ হয়তো ওই গাছ কেটে নিয়েছেন ব্যক্তিগত স্বার্থে।” তাঁর বক্তব্য, “রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য বাধ্য হয়ে কিছু গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। শুকনো, ঝড়ে ভেঙে যাওয়া বা বাধ্য হয়ে কাটা গাছগুলি নিজদণ্ড, উল্টাবাদ ও রাজেন্দ্রচক মৌজায় কাঠের সেতু তৈরি ও মেরামতের জন্য ব্যবহার করা হবে। কাজে দেরি হবে বলে এই গাছগুলি কাটতে প্রশাসনিক অনুমোদন নেওয়া হয়নি।”
বিডিও মৃণ্ময় মণ্ডল বলেন, “পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক শুকদেব পণ্ডিতকে দিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। গাছগুলি যে বেআইনি ভাবে কাটা হয়েছে তা নিশ্চিত। তবে কে বা কারা এই গাছ কেটেছে তা জানা যায়নি। রিপোর্ট মহকুমাশাসক, ওসি ও এগরার বন দফতরের রেঞ্জারকে পাঠানো হয়েছে।” এ দিকে, পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত পঞ্চায়েত কর্মীকে দিয়ে করানোতে আপত্তি জানিয়েছেন শ্রীমন্তবাবু ও প্রকাশবাবু। শ্রীমন্তবাবু বলেন, “প্রশাসনের এই তদন্ত প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়। ওই পঞ্চায়েতের কর্মীকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে পঞ্চায়েতকেই আড়াল করা হল কৌশলে। প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ না করলে নিজেদের সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনে আমাদের অন্য পথ নিতে হবে।” |