আজ, শনিবার রাজ্য-জুড়ে ‘বনমহোৎসব’ পালন করা হবে। এক সপ্তাহ ধরে চলবে নানা অনুষ্ঠান। এই উপলক্ষে পশ্চিম মেদিনীপুরেও নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহে প্রায় ২০ লক্ষ চারা-গাছ বিতরণ করার পরিকল্পনা করেছে বন দফতর। পরিবেশ ও সবুজ-রক্ষায় সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন করতেই এই উদ্যোগ। শনিবার মেদিনীপুর ডিএফও-র কার্যালয় প্রাঙ্গণে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
প্রতি বছর ১৪ জুলাই থেকে রাজ্য জুড়ে ‘অরণ্য-সপ্তাহ’ পালন হত। এই উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকায় গাছ লাগানো, চারা গাছ বিতরণ, পদযাত্রা-সহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হত। এ বার রাজ্য সরকার আর ‘অরণ্য-সপ্তাহ’ পালন না-করে ‘বনমহোৎসব’ নামকরণ করেছে। ‘চলো যাই সবুজের সন্ধানে’-এই স্লোগান সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চলছে। এমনিতেই সারা বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চলে। নানা সংগঠন ও সংস্থা এগিয়ে আসে। বসতি এলাকার আশপাশে নতুন গাছ লাগাতে উদ্যোগী হন অনেকে। অশান্তির জেরে গত কয়েক বছরে এ জেলার জঙ্গলমহল এলাকায় প্রচুর গাছ কাটা পড়েছে। গাছ কেটে কাঠ পাচার করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকার ফের জঙ্গলমহলকে তার পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে। সবুজ বাড়াতে গত বছরেও জেলায় প্রায় ২০ লক্ষ চারা-গাছ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ বারও লক্ষ্যমাত্রা একই রাখা হয়েছে। নতুন গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জঙ্গলমহলকেই। |
শহর জুড়ে তারই প্রস্তুতি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
বন দফতর সূত্রে খবর, এ বার এক-একজনকে ২টি করে চারা-গাছ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। কোনও সংস্থা চাইলে তাদের ৫০টি চারা-গাছ দেওয়া যেতে পারে। দফতরের রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “সবুজ সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য। সবুজ বাড়লে আমাদের চারপাশের পরিবেশও সুন্দর হবে।” আকাশমণি, ইউক্যালিপটাস, আম, পেয়ারা, কাঁঠাল, পেপে গাছের চারা সপ্তাহ-জুড়ে বিতরণ করা হবে। বনমহোৎসব উপলক্ষে শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ মেদিনীপুর ডিএফও-র কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে এক সুসজ্জিত শোভাযাত্রা বেরোবে। স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বন-সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা পা মেলাবেন। সঙ্গে একটি প্রচার-গাড়িও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরবে।
কিন্তু, ‘অরণ্য-সপ্তাহে’র বদলে এ বার কেন এই নতুন নামকরণ? সরকারের বক্তব্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৮ সালের ১ শ্রাবণ শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বনমহোৎসবের আয়োজন করেছিলেন। মানুষকে আরও বেশি পরিবেশ সচেতন ও বনসৃজনে আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রতি বছর তিনি বৃক্ষরোপণ উৎসব পালন করতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবর্ষে এ বার ১৪ জুলাই রাজ্য জুড়ে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সেই বনমহোৎসব পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন-দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “বন ধ্বংসের ফলে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য আজ দারুণ ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়েছে। ভবিষ্যত প্রজন্ম ও মানব-সভ্যতা রক্ষার জন্যই আরও বেশি করে গাছ লাগানো প্রয়োজন।” |