|
|
|
|
দমকলকেন্দ্র বহু দূর, আগুনে ছাই গুদাম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাঁকড়া |
উত্তর-দক্ষিণ কোনও দিকেই ৩০-৩৫ কিলোমিটারের আগে কোনও দমকলকেন্দ্র নেই। তাই আগুনের খবর পেয়েও দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেল দমকলের পৌঁছতে। ততক্ষণে আগুনে পুড়ে গেল কাপড়ের তিনতলা গুদামের একটি অংশ। শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকড়ার বটতলায়।
বাঁকড়া এলাকার সব চেয়ে কাছের দমকলকেন্দ্রটি হল হাওড়া পুরসভা লাগোয়া হাওড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। যার দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। অন্য দিকে, আর একটু দূরে রয়েছে উলুবেড়িয়া দমকলকেন্দ্র। তার দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। এই দূরত্বের জন্যই যে তাঁরা সময় মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি, তা মানছেন দমকলকর্মীরাও।
দমকল দেরিতে যাওয়ার কারণ হিসেবে দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানও কার্যত দূরত্ব ও যানজটকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “দমকল একটু দেরিতে গিয়েছে ঠিকই। এর জন্য দূরত্ব যেমন দায়ী, যানজটও আর একটি কারণ। গত ৩৪ বছর ধরে কোনও কাজ না করার ফল। এতটা ব্যবধানে একটিও দমকলকেন্দ্র গড়া হয়নি। আমরা ধীরে ধীরে সমস্ত ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় দমকলকেন্দ্র তৈরি করব। এ বছরই ১৫টি কেন্দ্র হবে রাজ্যে।” |
|
দমকলের অগ্নিযুদ্ধ। শুক্রবার, হাওড়ার। —নিজস্ব চিত্র |
হাওড়া ও মেটিয়াবুরুজে যে সব রেডিমেড পোশাক তৈরি হয়, তার বেশির ভাগ পাইকারি কাপড় সরবরাহ করা হয় বাঁকড়া থেকে। ৩০ থেকে ৪০ হাজার ব্যবসায়ী সেখানে কাপড়ের এই পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের প্রত্যেকেরই ছোট-বড় আরও কয়েক হাজার গুদামঘর রয়েছে। সেখানে তাঁদের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ বাঁকড়ার বটতলার কাছে হাওড়া আমতা রোডের পাশে ওই গুদামে আগুন লাগে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ দিন প্রথমে দোতলার পিছন দিকের ঘর থেকে আগুনের ফুলকি দেখা যায়। পরে সেই আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে যথাক্রমে দোতলা ও তিনতলায়।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক হাজার মানুষ তিনতলা ওই বাড়ির নীচে জড়ো হয়েছেন। দমকলবাহিনীর সঙ্গে এলাকার বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরাও আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন। প্রথমে দমকলবাহিনী বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল। কিন্তু একেই সরু সিঁড়ি, তার উপরে প্রচণ্ড ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে আসছিল তাদের। গ্যাস-মুখোশ না থাকায় ওই পথে দমকলকর্মীরা আর যেতে পারেননি। শেষে মই লাগিয়ে দোতলার কয়েকটি জানলা ভেঙে ভিতরে যান তাঁরা।
এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী রজত শাহ বলেন, “এ দিন জুম্মাবার থাকায় আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগেই বেশির ভাগ ব্যবসায়ী মসজিদে গিয়েছিলেন নমাজ পড়তে। তাই গুদামে লোকজন কম ছিল। না-হলে দুর্ঘটনা আরও বড় আকার নিতে পারত।” দমকল জানিয়েছে, এ দিন ২০টি ইঞ্জিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নেভাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিন জন দমকলকর্মী। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দমকল দেরিতে পৌঁছনো নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ সম্পর্কে দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর (পশ্চিমাঞ্চল) বিভাস গুহ বলেন, “হাওড়া দমকলকেন্দ্র থেকে বাঁকড়া বটতলার দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। হাওড়ার রাস্তার যানজট কাটিয়ে এতটা যেতে দেরি হওয়াটাই স্বাভাবিক।” |
|
|
|
|
|