জনস্বার্থ মামলা হাইকোর্টে
গুড়িয়ার মৃত্যু-রহস্য নিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবের রিপোর্ট তলব
গুড়াপের বেসরকারি হোমে মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা আবাসিক গুড়িয়ার মৃত্যু-রহস্য নিয়ে শুক্রবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। গুড়িয়ার মৃত্যু-রহস্য নিয়ে এক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতেই
হাইকোর্ট এ দিন এক সপ্তাহের মধ্যে ওই রিপোর্ট তলব করেছে। স্বরাষ্ট্রসচিবের রিপোর্টে বিশদে সরকারি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হোমের অবস্থা এবং ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ নামে গুড়াপের ওই হোমটির বর্তমান আবাসিকদের নিরাপত্তা ও অবস্থার কথা
জানাতে হবে। জানাতে হবে স্বরাষ্ট্র দফতর এবং সমাজকল্যাণ দফতরের ভূমিকার কথাও।
এ দিকে, বৃহস্পতিবার রাতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ গুড়িয়ার অপমৃত্যুর মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত সন্দীপ দাস-সহ ৫ জনকে ধরেছে। সব মিলিয়ে হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার-সহ ১০ জন ধরা পড়েছেন। পুলিশের দাবি, উদয়চাঁদের অন্যতম সহযোগী সন্দীপ।

নিখোঁজ মামণি
পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুড়াপের ওই হোম থেকে আবাসিকদের সরানো শুরু হতেই ‘বিভ্রাট’ হয়েছে। মূল হোম থেকে উত্তরপাড়ার একটি হোমে সরানোর পরে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে মামণি ওরফে বীণা নামে নদিয়ার বেথুয়াডহরির মানসিক ভারসাম্যহীন এক কিশোরী। বৃহস্পতিবার বিকেলে মামণি এবং আর এক কিশোরীকে গুড়াপ থেকে উত্তরপাড়ায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে উত্তরপাড়া হাসপাতালে স্বাস্থ্য-পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তাদের।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় মামণি। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, মামণি একটি রিকশায় উঠে বালি হল্টের দিকে চলে যায়। পুলিশ এ ব্যাপারে উত্তরপাড়া থানায় ডায়েরি করেছে। পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, ওই কিশোরীর খোঁজে হুগলির পাশাপাশি অন্য জেলার থানাগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে। খাজুরদহ-মিল্কি এলাকায় গুড়াপের হোমটির একটি শাখায় অনাথ ও দুঃস্থ কিশোরীদের রাখা হত। তাদেরও জাঙ্গিপাড়ার একটি হোমে সরানো হচ্ছে।
কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাটির আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “২ জুলাই হোম কর্তৃপক্ষ গুড়াপ থানাকে জানায়, এক জন আবাসিকের মৃত্যু হয়েছে। ওই তথ্য জানার পরে পুলিশ খোঁজ নেওয়ার তাগিদ অনুভব করেনি। হোম কর্তৃপক্ষ মহিলা আবাসিকের মৃত্যুর পাঁচ দিন পরে দেহটি মাটিতে পুঁতে দেয়। রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতর এই সব হোমকে অনুমোদন দেওয়ার পরে নজরদারি করেনি।” তাঁর সংযোজন, “রাজ্যে এমন অনেক হোম রয়েছে যারা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অনুদান পায়। সেই অনুদানের টাকায় আবাসিকদের কেমন করে রাখা হচ্ছে, তা দেখভালের প্রায় কোনও ব্যবস্থাই নেই। তাই এক জন গুড়িয়া নয়, এ রকম আরও কত গুড়িয়ার জীবন বিপন্ন তা জানা যাচ্ছে না।”
সরকারের পক্ষে রাজ্যের জি পি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “খবর পেয়েই জেলা পুলিশ ও সমাজকল্যাণ দফতর কাজ শুরু করে। নারীকল্যাণমন্ত্রী নিজে ঘটনাস্থলে যান। ওই হোমের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মৃতদেহ মাটি থেকে তুলে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
তদন্ত চলছে।” তিনি আরও বলেন, “ঘটনাটি মর্মান্তিক। সরকারও তা-ই মনে করে। সরকার তদন্তের অগ্রগতি যা হবে, তা হাইকোর্টকে জানাতে প্রস্তুত।”
গত বুধবার দুপুরে গুড়াপের ওই হোমের পাঁচিলের পাশের একটি পুকুরের ধারের মাটি খুঁড়ে গুড়িয়ার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ গুড়িয়াকে খুন, তথ্য-প্রমাণ লোপাট এবং ধারাবাহিক ভাবে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রুজু করেছে। এ দিন চুঁচুড়া আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুশ্রী মণ্ডলের এজলাসে বৃহস্পতিবার ধৃত ৫ জনকে হাজির করানো হলে তাদের ১০ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

গুড়াপ থেকে ১৪ আবাসিককে জাঙ্গিপাড়ার হোমে সরানো হচ্ছে।
তবে এই মামলায় আর এক অভিযুক্ত এবং উদয়চাঁদের ‘ডান হাত’ শ্যামল ঘোষ এখনও অধরা। পুলিশ সুপার বলেন, “শ্যামলের ব্যাপারে কিছু সূত্র মিলেছে। ওকে ধরার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।” যদিও এ ব্যাপারে সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “সিবিআই তদন্ত ছাড়া এই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব নয়। রহস্য উদ্ঘাটন হলে রাজ্যের অন্যান্য হোমেও কী কাণ্ড চলছে, সেটা বোঝা সম্ভব হবে।”
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ দিন গুড়াপের হোমের আবাসিকদের স্বাস্থ্য ও মানসিক-স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। ৩৩ জনকে ওষুধ দেওয়া হয়। পরীক্ষাকারী চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে থাকা হৃদয় বর বলেন, “অধিকাংশ আবাসিকই অপুষ্টি-আক্রান্ত। মনে হয়, এখানে ঠিকঠাক খেতে দেওয়া হয় না। সে ভাবে চিকিৎসারও সুযোগ মিলত না আবাসিকদের।”
আবাসিকেরা জানান, মাস ছ’য়েক আগে শেষ বার তাঁদের স্বাস্থ্য-পরীক্ষা করে চাকরি ছেড়ে চলে যান হোমের চিকিৎসক। তার পর থেকে তাঁদের কারও শরীর খারাপ হলে চিকিৎসক ডাকা হত না। উদয়চাঁদের ‘ডান হাত’ শ্যামলই ওষুধ কিনে এনে দিত।

—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.