|
|
|
|
নির্দেশ দিল্লির |
মাওবাদীরা গ্রামবাসীকে ঢাল করলে দমন অভিযান স্থগিত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মাওবাদী দমন করতে গিয়ে নিরীহ মানুষের মৃত্যু যাতে না-হয়, সে ব্যাপারে আজ মাওবাদী-অধ্যুষিত রাজ্যের পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সতর্ক করে দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ছত্তীসগঢ়ের সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই দিল্লির এই হুঁশিয়ারি। পাশাপাশি আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের পুনর্বাসনে কেন্দ্রীয় আর্থিক অনুদান প্রায় ১৫ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, এখন থেকে যৌথবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে মাওবাদীরা সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলে অভিযান স্থগিত রাখা হবে। এ বিষয়ে বাহিনীকে যথাসম্ভব ‘সতর্ক’ থাকতে বলা হবে। ফলে প্রাথমিক ভাবে মাওবাদী দমন অভিযানে কিছুটা শিথিলতা আসবে বলেই মনে করছেন মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য: আগে মাওবাদী সংগঠনের অনেক শীর্ষনেতা শহরে ঘুরে বেড়াতেন। এখন তারা প্রায় সকলে ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা বা ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। ওঁদের ঘিরে থাকে মাওবাদীদের ‘মিলিটারি কোম্পানি’, যাদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর মূল লড়াই। কিন্তু সেখানেই সমস্যা দেখা গিয়েছে। মিলিটারি কোম্পানিগুলো নিরীহ গ্রামবাসীদের ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
সম্প্রতি ছত্তীসগঢ়ের বিজাপুরে সিআরপি-র গুলিতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের অধিকাংশ নিরীহ গ্রামবাসী। সিআরপি-র কর্তারা বরাবর বলে আসছেন, নিরীহের মৃত্যু হয়ে থাকলে মাওবাদীরাই দায়ী। কারণ, তারাই যৌথবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল, এবং পাল্টা গুলির মুখে নিরীহ গ্রামবাসীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল। তা সত্ত্বেও অবশ্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে দুঃখপ্রকাশ করতে হয়েছে। রাজনৈতিক ভাবেও কংগ্রেসকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।
এবং ভবিষ্যতে এরই পুনরাবৃত্তি রুখতে চাইছে কেন্দ্র। মাওবাদীদের ‘মানব ঢাল’-এর মোকাবিলায় রণকৌশল স্থির করতে আজ রাজ্যগুলোর পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাতে অভিযানের ক্ষেত্রে আরও বেশি পরিমাণে ‘নাইট ভিশন ডিভাইস’ ব্যবহার করা হবে। যে হেতু গ্রামের লোকজনকেই ‘মানব ঢাল’ হিসেবে মাওবাদীরা ব্যবহার করে, তাই রাতের অভিযানে গ্রাম সংলগ্ন রাস্তা এড়িয়ে চলা হবে। গ্রামে মাওবাদীরা লুকিয়ে রয়েছে এবং তারা গ্রামবাসীদের ঢাল করে গুলি চালাচ্ছে বুঝতে পারলে গ্রাম ঘিরে রেখে দিনের আলোর জন্য অপেক্ষা করা হবে। এ ব্যাপারে নতুন ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ তৈরি করে রাজ্যগুলিকে ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পাঠানো হবে।
পাশাপাশি মাওবাদী ক্যাডারদের পুনর্বাসনে অর্থসাহায্যে কেন্দ্রের অনুদান অনেকটাই বাড়ানো হচ্ছে। এত দিন রাজ্য সরকার আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের যে অর্থ দিত, তার মধ্যে কেন্দ্রীয় অনুদান ছিল ১০ হাজার টাকা। অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণ হলে দেওয়া হত ২০ হাজার। এ বার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেড় লক্ষ টাকা দেবে। অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রে কী ধরনের অস্ত্র, তা দেখে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ হবে। রাজ্যগুলো অবশ্য চাইলে আরও বেশি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণা করতে পারে। |
|
|
|
|
|