|
|
|
|
দিনভর ঘুরপথে রাজধানী-দুরন্ত |
মালগাড়ি উল্টে বিপর্যয়, ফের প্রশ্ন সুরক্ষা নিয়েই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা ও কলকাতা |
রোগ পুরনো। অথচ দাওয়াই দূর অস্ত!
রেল লাইনের উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গত কয়েক বছরে পরের পর দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তাতেও যে রেল কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি, বৃহস্পতিবার মোগলসরাই ডিভিশনের ভাবুয়া ও দুর্গাবতী স্টেশনের মাঝে মালগাড়ি বেলাইন হয়ে ফের তা প্রমাণ করে দিল। রেল যোগাযোগ বিপর্যস্ত, ঘুরপথে ট্রেন চলায় গন্তব্যেও পৌঁছতে পারেননি অনেকে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। তবে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ, গত কয়েকটি দুর্ঘটনার মতো এ ক্ষেত্রেও রেল লাইনেই ত্রুটি ছিল।
কলকাতা-নয়াদিল্লি গ্র্যান্ড কর্ড লাইনের ভাবুয়ার কাছে কয়লাবোঝাই একটি মালগাড়ির ২৬টি কামরা লাইনচ্যুত হয় বৃহস্পতিবার রাতে। দুর্ঘটনার পর থেকেই ওই লাইনে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। ফলে হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে নয়াদিল্লি রুটে ট্রেন চলাচলও বিপর্যস্ত। ঘুরপথে যেতে গিয়ে দুই রাজধানী এবং দুরন্ত এক্সপ্রেস-সহ বিভিন্ন রেলের (আপ-ডাউন মিলিয়ে) ৯০টি ট্রেন শুক্রবার গড়ে ৬-৭ ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। আটকে পড়া ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে কলকাতা-রাজধানী, শিয়ালদহ-রাজধানী, ভুবনেশ্বর-রাজধানী, জম্মু তাওয়াই, যুবা এক্সপ্রেস, মুম্বই মেল, কালকা, শিয়ালদহ-রাজধানী দুরন্ত এক্সপ্রেস। পূর্ব-মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক অমিতাভ প্রভাকর বলেছেন, “আপ লাইনটি শুক্রবার রাতের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। তবে শনিবার রাতের আগে ডাউন লাইন স্বাভাবিক হবে না।” ফলে দুর্ভোগ বাড়বে বলেই আশঙ্কা।
হাওড়া থেকে আসানসোল-সীতারামপুর হয়ে রেলের একটি লাইন মধুপুর-ঝাঁঝা-কিউল-সাসারাম-পটনা-মোগলসরাই হয়ে নয়াদিল্লি যায়। এটি মেন লাইন। অন্যটি, অর্থাৎ গ্র্যান্ড কর্ড লাইনটি ধানবাদ-গুমো-কোডারমা-গয়া-ভাবুয়া-দুর্গাবতী হয়ে মোগলসরাইয়ে মিশেছে। তার পর সেটি যাচ্ছে দিল্লি। বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ভাবুয়া স্টেশনের কাছে। এর জেরে গ্র্যান্ড কর্ড লাইনের ট্রেনগুলিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে যেমন মেন লাইনে চাপ বেড়েছে, তেমনই ঘটেছে অন্য বিপত্তি। ট্রেনের নতুন যাত্রাপথে অনেক যাত্রীর গন্তব্যই পড়ছে না। রেল কর্তৃপক্ষও তাঁদের দিশা দেখাতে পারছেন না।
দুর্ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, ভাবুয়া ও কৈমুর জেলার দূর্গাবতী স্টেশনের মাঝামাঝি সেই এলাকাটি পূর্ব-মধ্য রেলের অধীন। ওই শাখার এক কর্তা বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, রেল লাইনে ত্রুটি ছিল বলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।” কারও কারও অবশ্য মত, মালগাড়ির অতিরিক্ত চাপে লাইন ভেঙে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ড বাদ দিলে, গত দু’তিন বছরে যত ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, প্রায় সব ক্ষেত্রে রেলেরই গাফিলতি পাওয়া গিয়েছে। রেল-কর্তাদের একাংশের মধ্যে এ নিয়ে উষ্মাও রয়েছে। এক রেল-কর্তার কথায়, “পরিকাঠামো ও রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যার সমাধান না করেই ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এর জেরে দুর্ঘটনাও বাড়ছে।”
কয়লাবোঝাই ওই মালগাড়িটি ৫৯টি বগি নিয়ে ধানবাদ থেকে উত্তর ভারতের হরদোয়াগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে যাচ্ছিল। রাত ৯টা ১৫ নাগাদ মালগাড়িটির ২৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ফলে ডাউন লাইনের সব ট্রেন আটকে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পূর্ব-মধ্য রেলের আধিকারিকেরা। লাইনে ও আশপাশে প্রচুর কয়লা ছড়িয়ে থাকায় প্রথমে সমস্যা হয়। তা ছাড়া, দুর্ঘটনার ফলে সিগন্যাল পোস্টগুলিরও ক্ষতি হয়েছে। পরে রিলিফ ট্রেনে বুলডোজার এনে লাইন পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়। তবে বৃষ্টির ফলে লাইন সারানোয় দেরি হচ্ছে বলে রেল জানিয়েছে।
যে ৯০টি ট্রেন এই দুর্ঘটনার জেরে মাঝপথ
থেকে ঘুরপথে চলছে, তার মধ্যে দুটি রাজধানী ও দুরন্ত-সহ ১৭টি দূরপাল্লার ট্রেন রয়েছে। শুক্রবার সকালে যে ট্রেনগুলি হাওড়া বা শিয়ালদহে পৌঁছনোর কথা ছিল, তাদের বেশির ভাগই ৭-৮ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছয়। বৃহস্পতিবার হাওড়া আর শিয়ালদহ থেকে ছাড়া দিল্লিগামী ট্রেনগুলিও গন্তব্যে পৌঁছয় ৯-১০ ঘণ্টা দেরিতে। ফলে আজ, শনিবারও ওই ট্রেনগুলি দেরিতে ছাড়বে বলে আশঙ্কা রেল কর্তৃপক্ষের।
ট্রেন চলাচলে অস্বাভাবিক দেরির জন্য যাত্রীদের যথেষ্ট পরিমাণ খাবার সরবরাহ করা হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। যদিও উত্তর রেল সূত্রে জানানো হয়, বিভিন্ন স্টেশনে চা, পানীয় জল, খাবার পাঠানো হয়েছে। |
|
|
|
|
|