গোপালকে ঘিরে প্রশ্নের মধ্যেই মমতাকে আবার বার্তা সনিয়ার
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে আপাতত সময় নিলেন গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। আর উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী বাছাই নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের আর এক দফা টানাপোড়েনের আবহ তৈরি হওয়ার মুখে দিল্লির বার্তা এসে পৌঁছল কালিম্পঙে। বার্তা পাঠালেন সনিয়া গাঁধী স্বয়ং।
উপরাষ্ট্রপতি পদে হামিদ আনসারিকেই আবার ইউপিএ-র প্রার্থী করা হচ্ছে জানতে পেরে মমতা আজ সকালে ফের গোপালকৃষ্ণকে তৃণমূলের প্রার্থী হতে অনুরোধ করেন। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর প্রপৌত্র তখন মমতার কাছে জানতে চান, কংগ্রেস তাঁকে সমর্থন করবে কি না। মমতা জানান, তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস এবং চার বাম দল ছাড়া অন্যদের কথা হয়েছে। তাঁরা গোপালকৃষ্ণের নামে ‘অসম্মতি’ জানাননি। এখন গোপালকৃষ্ণ লড়বেন কি না, সে ব্যাপারে তাঁকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মমতার ঘনিষ্ঠ এক নেতা এ দিন জানান, গোপালকৃষ্ণ বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় চেয়েছেন। ওই নেতার বক্তব্য, জয়ের সম্ভাবনা কতটা, তা জেনেই সিদ্ধান্ত নিতে চান গোপালকৃষ্ণ। আবার ইউপিএ-র বিবাদ উস্কে দিতে বিজেপি চাইছে, মমতা যদি গোপালকৃষ্ণকে রাজি করাতে পারেন, তা হলে এনডিএ তাঁকেই সমর্থন করবে। কিন্তু গোপালকৃষ্ণ প্রার্থী হবেন কি? প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, গাঁধীর প্রপৌত্র দিল্লিকে জানিয়েছেন, আর যা-ই হোক, বিজেপির সমর্থন নিয়ে তিনি উপরাষ্ট্রপতি হতে চান না। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের তাই দৃঢ় ধারণা, শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থী হতে রাজি হবেন না।
এই পরিস্থিতিতে আগামিকাল সন্ধ্যায় প্রার্থী ঠিক করতে বসছে ইউপিএ। শরিকদের সঙ্গে বৈঠকের পরেই সম্ভবত আনুষ্ঠানিক ভাবে হামিদ আনসারির নাম উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে থাকবেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। তার আগে থেকেই অবশ্য মমতাকে বোঝানোর চেষ্টা শুরু করেছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
আজ মমতা যখন কালিম্পঙের পথে, তখন তাঁর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করে বার্তা দেন সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল। মমতা ফোন করলে আহমেদ জানান, ১৮ জুলাই নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। মমতাকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। জবাবে মমতা জানান, ১৯ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সে জন্য তৃণমূলের সমস্ত সাংসদকে ১৮ তারিখ দুপুরের মধ্যে কলকাতায় চলে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার তার তিন দিনের মাথায় তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ। ১৮ তারিখ থেকেই সে জন্য লোক আসতে শুরু করবে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর কলকাতা ছেড়ে যাওয়া ‘কঠিন’। যদি তিনি বা তৃণমূলের তরফে কেউ নৈশভোজে যেতে পারেন, তা হলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে গভীর রাত পর্যন্ত হাইকম্যান্ড বরফ গলানোর চেষ্টা করলেও কাল মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের টানাপোড়েনের আশঙ্কাই দেখছেন অনেকে। ঠিক যেমন হয়েছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, যদি আগামিকালের বৈঠকে কংগ্রেস আনসারিকে উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত জানায়, তা হলে দলের আপত্তির কথা সেখানেই জানাতে চলেছেন মুকুল। কারণ, গত বার আনসারির নাম বামেরা প্রস্তাব করেছিলেন বলে তৃণমূল এখনও আনসারিকে বাম প্রার্থী বলেই মনে করে। তা ছাড়া লোকপাল বিলের আলোচনার সময়ে লোকায়ুক্ত প্রশ্নে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে আনসারির ভূমিকা নিরপেক্ষ ছিল না বলেও তৃণমূলের
ক্ষোভ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কালকের বৈঠকে আনসারির নাম ঘোষণা করা হলে তৃণমূলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “নেত্রী বলেছেন, কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে হামিদ আনসারির নাম বললে যেমন শোনা হবে, তেমনই আমাদের প্রস্তাবিত নামের কথাও জানিয়ে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর জবাব যদি নেতিবাচক হয়, তা হলে মুকুলদা তাঁকে জানাবেন, নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।” তৃণমূলের বক্তব্য, আনসারির ব্যাপারেও মুকুল রায় বৈঠকে প্রকাশ্যে তিক্ততা দেখাবেন না। তিনি কলকাতা ফিরে মমতার সঙ্গে আলোচনা করার পরে দলীয় রণকৌশল ঠিক হবে। পাশাপাশি গোপালকৃষ্ণকে মমতা এখন বোঝাতে চাইছেন, তিনি তৃণমূলের প্রার্থী হয়েই ভোটে দাঁড়াবেন। এনডিএ প্রার্থী হয়ে নয়।
আজ উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে বসেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রের খবর, মমতা যদি গোপালকৃষ্ণকে রাজি করাতে পারেন, তা হলে এনডিএ তাঁকেই সমর্থন করবে। তাতে দলের যাঁরা প্রার্থী হতে চান, সেই নাজমা হেপতুল্লা বা যশোবন্ত সিংহকেও সামলানো যাবে। প্রশ্ন হল গোপালকৃষ্ণ যদি রাজিও হন তা হলেও কি এনডিএ অটুট থাকবে?
রাষ্ট্রপতি ভোটে ইউপিএ প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন নীতীশ কুমার। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এই অস্বস্তি কাটাতে তাঁকে বোঝাচ্ছেন অরুণ জেটলি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভোটে যে দুই অ-এনডিএ দলকে সঙ্গে পেয়েছে বিজেপি, সেই এডিএমকে বা বিজেডি আনসারি প্রশ্নেও সঙ্গে থাকবে কি না তা নিয়ে দলেই সংশয় রয়েছে।
মমতা কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে দলের সাংসদ-বিধায়কদের কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি। তবে সকলকেই জানিয়েছেন, ভোট দেওয়া হলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেই দেওয়া হবে। সকলকে উপস্থিত থাকতে বলায় জল্পনা বেড়েছে। এখনও দলের একাংশের মতে, ইউপিএ-র সঙ্গে সংঘাতে না-গিয়ে ভোট দেওয়া উচিত। বিজেপি-র প্রার্থী সাংমাকে ভোট দেওয়া কঠিন। ভোটদানে বিরত থাকলে আবার তা দলের ‘ভাবমূর্তি’র পক্ষে ঠিক নয়। এই নেতাদের বক্তব্য, প্রয়োজনে প্রণবকে আক্রমণ করে বিবৃতি দিয়েও ইউপিএ-র ‘ঐক্যের স্বার্থে’ তাঁকেই ভোট দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। মুকুল আবার এ দিন বলেন, “রাষ্ট্রপতি ভোটের ১৬ নম্বর ধারায় বলা রয়েছে, ভোটদানকারীরা ব্যালট তুলে নিয়ে সেখানে কারও নাম না-লিখে বা কারও নামের পাশে ‘টিক’ না-দিয়েও তা জমা দিতে পারেন।” অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ‘না-ভোটে’র অধিকার রয়েছে বলেই মুকুলের দাবি। সে ক্ষেত্রে ভোটে অংশ নেওয়াও হল। আবার কাউকে ভোটও দেওয়া হল না!
মমতা নিজে এখনও দলীয় মহলে কিছু জানাননি। ১৯ জুলাই ভোটের দু’তিন দিন আগে তাঁর দলকে নির্দেশ দেওয়ার কথা। এখন দেখার, নেত্রী হিসেবে মমতা দলের কোন অংশের অভিমত মেনে নেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.