এই বর্ষায় যে কোনও দিন এক পশলা ভারী বৃষ্টিতেই ভেসে যেতে পারে কলকাতা। শুক্রবার এ বিষয়ে পুরসভা এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করল আদালত। এ বারের বর্ষায় কলকাতার সম্ভাব্য ভরাডুবির আগেই আদালত এ দিন পুরসভার কাছে জানতে চেয়েছে, শহরের জমা জল বার করে দেওয়ার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বর্ষার কলকাতায় বৃষ্টির জমা জল দ্রুত বার করে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) যৌথ ভাবে ১৯৬৬ সালে ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করে। সেই মাস্টার প্ল্যানের কিছু সুপারিশ কার্যকর করা হলেও শহরে জল জমার দুর্ভোগ কমেনি। শহরের নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল দশার সুরাহা চেয়ে ২০০৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। |
সেই সময়ে পুরসভা ওই মামলার জেরে আদালতকে জানিয়েছিল, জমা জল দ্রুত বার করার জন্য কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে কিছু পাম্প বসানো ছাড়া নিকাশি পরিকাঠামো জোরদার করতে বিশেষ কোনও কাজ হয়নি। শহরের খালগুলির নাব্যতা বাড়িয়ে তাদের জল ধারণের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সার্বিক ভাবে সংস্কার করার যে সুপারিশ ছিল, তা-ও কার্যকর হয়নি। উল্টে মেট্রোর লাইন তৈরি করতে গিয়ে আদিগঙ্গা প্রায় বুজে গিয়েছে। সুভাষবাবুর করা ওই জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল এ দিন।
বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত এবং বিচারপতি অসীমকুমার মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন কলকাতা পুরসভা, সেচ দফতর, মৎস্য দফতর এবং কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি-কে নির্দেশ দিয়েছে, কলকাতার জল জমা নিয়ন্ত্রণে ‘হু’-র তৈরি মাস্টার প্ল্যান মাফিক কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। নির্দেশ দেওয়ার আগে বিচারপতিরা মন্তব্য করেন, কলকাতা শহরে প্রথম নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি হয় ১৮৮০ সালে। তখন কলকাতার জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১০ হাজার। এখন শহরে এক কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। বর্তমানে নিকাশির যে পরিকাঠামো কলকাতায় রয়েছে, তা জনসংখ্যার এই বিপুল চাপ সহ্য করতে পারবে কি না, তা বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।
সুভাষবাবু এ দিন আদালতে জানান, কলকাতার একটা বড় সমস্যা হল বৃষ্টির ৯৮ শতাংশ জলই শহরে জমে যায়। কারণ, কংক্রিটে বাঁধানো এই শহরে জল মাটির নীচে যাওয়ার প্রায় কোনও পথ নেই। জমা জল দ্রুত বার করে দেওয়ার জন্য পূর্ব কলকাতায় যে নিকাশি খালগুলি রয়েছে, সেগুলিও সংস্কার করা হয় না। তা ছাড়া, পুর-এলাকার মধ্যে সম্প্রতি বহু পুকুর এবং জলাশয় বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে বৃষ্টি জল বয়ে যাওয়ার কোনও জায়গা না পেয়ে শহরেই জমে থাকে। |