কোথাও অস্তিত্ব নেই, কোথাও টিমটিমে। পর্যটনে নিজের রাজ্যকে মেলে ধরার চেষ্টায় খামতি কাটিয়ে উঠতে পারল না পর্যটন দফতর। পূর্ব ভারতের সব থেকে বড় পর্যটন মেলা আনন্দবাজার পত্রিকা আয়োজিত ‘ট্যুরিস্ট স্পটে’ এ বার ছিল না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গোটা দেশে পরিচিত ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (টিটিএফ)-এর আসরেও এ রাজ্য কিছুটা নিষ্প্রভই থেকে গেল।
গুজরাত-ওড়িশার প্যাভিলিয়নে দিনভর লোক টানছে লোকনৃত্যের আসর। হিমাচলের লোকশিল্পীরা মেলা-চত্বরে দেহাতি নাচ-গানের মেঠো সুরে সবাইকে মাতিয়ে রাখলেন। বাদ পড়েননি পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ নিজেও। শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তিন দিনের মেলার উদ্বোধনে গিয়ে হিমাচলের বিশাল শিঙা হাতে নিয়ে ফুঁ দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। |
কিন্তু নিজেদের রাজ্যে পর্যটনের ঢাক পেটানোর কাজে কত দূর সফল সরকার? মুখ্যমন্ত্রীর কলকাতাকে লন্ডন, দিঘাকে গোয়া বা দার্জিলিংকে সুইৎজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন তুলে ধরে পর্যটনমন্ত্রী ৩৪ বছর বাদে শূন্য থেকে শুরু করার কথা বলেছেন। কিন্তু নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ার কাজে কোনও দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে পারেনি রাজ্য। গঙ্গাসাগর মেলা, চন্দননগরের ঘাট বা পুজোর কলকাতার শোভাবর্ধনের চেষ্টা দেখা গিয়েছে। দিঘা, ঝাড়গ্রামে উৎসবের মতো কিছু কর্মসূচিও নিয়েছে রাজ্য। পর্যটনের বাজেট বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে পর্যটনের নীতি রূপায়ণে পরিকল্পনার নাম নেই। দার্জিলিংয়ে রাজনৈতিক আবহাওয়া খানিক শান্ত হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তার হাল নিয়ে অভিযোগ থেকেই গিয়েছে। সম্প্রতি একটি বণিকসভার অনুষ্ঠানে এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে কিছুটা অস্বস্তিতেও পড়েছিলেন পর্যটন অধিকর্তা।
পর্যটনমন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন সরকারি দফতরে সমন্বয়ে সুন্দরবন বা উত্তরবঙ্গের জন্য টাস্কফোর্স গড়া হয়েছে। তবে সব কাজ তো এখনই শেষ হবে না।” অন্য বারের তুলনায় রাজ্যের পর্যটন দফতরের স্টলের চেহারায় পরিবর্তন এসেছে। চিরকেলে পট-চিত্রের সজ্জা বা সাবেক কুঁড়েঘরের আদল নেই। মেলায় ঢুকেই চোখে পড়ার মতো জায়গায় স্বাগত জানাচ্ছে ডুয়ার্সের জঙ্গল। বনের ভিতরের অতিথিশালাগুলির ছবিও প্রকট। তবে বাংলাদেশ, ছত্তীসগঢ় বা হিমাচলের মতো রোড শো-এ সামিল হতে চায়নি পশ্চিমবঙ্গ। কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনার আবিদা ইসলাম বা উত্তরাঞ্চলের পর্যটনমন্ত্রী অমৃতা রাওয়াত মেলায় এসেছেন। হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধূমলেরও আসার কথা। পর্যটনমন্ত্রী বলেন, “উদ্যোক্তারা যা টাকা নিচ্ছেন তাতে রোড-শো করা সম্ভব ছিল না।” পর্যটন কর্তাদের বক্তব্য, অন্য রাজ্যে বরং এই ধরনের চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। মুম্বই ও বেঙ্গালুরুতে পশ্চিমবঙ্গের দ্রষ্টব্য জায়গাগুলি তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী। |