বাজারে শাক-সব্জির দাম কমলেও মধ্যবর্তী ব্যবসায়ী বা ফড়েদের দাপটে চাষিরা উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ করলেন কৃষক সভার রাজ্য সভাপতি তথা সিপিএম নেতা মদন ঘোষ। শুক্রবার তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের চাপে শাক-সব্জির দাম কমেছে। সাধারণ মানুষের উপকার হয়েছে। কিন্তু চাষির কোনও উপকার হয়নি। কারণ, রাজ্য সরকার ফড়েদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে ফড়েরা চাপ দিয়ে চাষিদের কাছ থেকে কম দামে সব্জি কিনছে।”
সব্জির দাম না পাওয়ায় সম্প্রতি বর্ধমান জেলা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কৃষকরা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। কৃষক সভার রাজ্য কমিটির অধিবেশনের পরে মদনবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে, গ্রামের হাট পর্যন্ত চাষিদের উপর চাপ সৃষ্টি করে সব্জির দাম কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু যে সব মধ্যবর্তী ফড়ের জন্য গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত একাধিক বার হাত বদলের ফলে আনাজপাতির দাম বাড়ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। মদনবাবুর অভিযোগ, ফড়েরা তাদের লাভের অঙ্ক ঠিক রেখে চাষিদের ভয় দেখিয়ে দাম কমিয়েছে। এক শ্রেণির সরকারি উর্দিধারী সব্জি বোঝাই লরির কাছ থেকে অবৈধ ভাবে টাকা নিচ্ছে বলেও মদনবাবুর অভিযোগ। অবিলম্বে ফড়েদের দাপট ও উর্দিধারীদের টাকা নেওয়া বন্ধ করতে হবে বলে তাঁর দাবি। বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বও একই অভিযোগ করেছেন। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “ক্রেতারা উপকৃত হলেও ফড়েদের দাপটে চাষিরা কম দামে সব্জি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।”
সব্জির দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সারের দাম বৃদ্ধি। সারের উপর থেকে ভর্তুকি তোলা যাবে না বলে দীর্ঘ দিন ধরে বামপন্থীরা দাবি জানাচ্ছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি দিয়েছেন। মমতার এই উদ্যোগকে কিন্তু মদনবাবুরা গুরুত্ব দিতে নারাজ। বরং তাঁর ওই চিঠি ‘মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা’ বলে মদনবাবুর অভিযোগ। তিনি বলেন, “এর আগে পাটের দাম নিয়ে তিনি দিল্লিকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। জেসিআই পাট কেনেনি।” এ বারও পাট চাষিরা দাম পাচ্ছেন না বলে মদনবাবু জানান। খাদ্যপণ্যে আগাম বাণিজ্য বা ‘ফরওয়ার্ড ট্রেডিং’ বন্ধের যে দাবি মমতা করেছেন, সে ব্যাপারে মদনবাবু বলেন, “এটা আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি। আশা করব, ভবিষ্যতেও তিনি একই অবস্থানে থাকবেন।”
এ দিন কৃষক সভার রাজ্য কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়েছে, ২০১৩-র ২৬ থেকে ২৮ জানুয়ারি মালদহে সংগঠনের রাজ্য সম্মেলন হবে। গত রাজ্য সম্মেলন হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন কৃষক সভার সদস্য ছিল ১ কোটি ২৫ লক্ষ। ২০১০-এ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৫৩ লক্ষ। কিন্তু বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে সেই সদস্যসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৮ লক্ষ। দু’ বছরে সদস্য কমেছে প্রায় ৩৫ লক্ষ। মদনবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “সন্ত্রাসের কারণে কৃষক সভার নেতারা অনেক ব্লকে যেতে পারেননি বলে সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করা যায়নি।” রাজ্যের ১৫টি জেলায় সদস্যসংখ্যা কমলেও নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলায় সদস্য সামান্য হলেও বেড়েছে। সদস্য সব থেকে বেশি কমেছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে। ২০ লক্ষ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮ লক্ষ। পূর্ব মেদিনীপুরে সদস্য কমেছে ২ লক্ষ, বাঁকুড়ায় ৪ লক্ষ, হুগলিতে প্রায় ৭ লক্ষ, বর্ধমান জেলায় ৩ লক্ষ। রাজ্য সম্মেলনের আগে নানা আন্দোলনের পাশাপাশি সদস্য বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। |