টাটা-র হাত ধরে ওরা পা রেখেছিল সানন্দে। ন্যানো-র যন্ত্রাংশ জোগাতে। এখন তাদের দরজায় আবার কড়া নাড়ছে ফোর্ড, মারুতি-র মতো অন্য গাড়ি সংস্থাও। আর সেই সূত্রেই সানন্দে নতুন লগ্নির পরিকল্পনা করছে ন্যানো-র সহযোগী (ভেন্ডার) যন্ত্রাংশ শিল্প। সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, নতুন গাড়ি সংস্থাগুলি এলে যন্ত্রাংশ শিল্পে আরও কয়েকশো কোটি টাকার নতুন লগ্নি পাবে গুজরাত।
নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে মেহসানার কাছে নতুন কারখানা তৈরির কথা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে মারুতি। গুজরাতে কারখানা গড়তে টাকা ঢালার কথা জানিয়েছে ফোর্ডও। সব মিলিয়ে গাড়ি সংস্থাগুলির প্রাথমিক লগ্নির অঙ্কই দাঁড়াচ্ছে দশ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর সেই টানেই সেখানে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে চাইছে টাটা মোটরস-এর সহযোগী যন্ত্রাংশ সংস্থাগুলি। |
সিঙ্গুরে লগ্নি এখনও আটকে থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ধরনের অধিকাংশ সংস্থাই। তবে নাম না জানানোর শর্তে বেশ কিছু সংস্থার কর্তাই জানিয়েছেন, অন্য গাড়ি সংস্থা গুজরাতে এলে তার সুযোগ নিতে সানন্দে নতুন লগ্নির পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। যেমন, ঔরঙ্গাবাদের একটি যন্ত্রাংশ সংস্থা সিঙ্গুরে ১০ একর জমিতে কারখানা গড়তে ২৪.২ কোটি টাকা খরচ করেছিল। সানন্দে ২০ একরে তাদের লগ্নি প্রায় ৫৫ কোটি। সংস্থার এক কর্তা জানান, এ বার ফোর্ড, মারুতি থেকেও ডাক এসেছে। সব ঠিকঠাক চললে এ বছরের শেষেই চূড়ান্ত হবে। তখন লগ্নির অঙ্ক আরও বাড়বে।
ইতিমধ্যেই গুজরাতের হালোলে জেনারেল মোটরসের কারখানায় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করছে এ রাজ্যেরই এক সংস্থা। পুণের এক সংস্থাও ন্যানো কারখানার চত্বরের বাইরে আলাদা করে জমি কিনে বড়সড় কারখানা তৈরির কথা ভাবছে। ফোর্ডের তরফে প্রাথমিক বার্তা পেয়েছে উত্তর ভারতের এক সংস্থাও। এয়ারকন্ডিশনার প্রস্তুতকারী ভোল্টাস-ও তাদের সঙ্গে সেখানে গাঁটছড়া বাঁধতে আগ্রহী। সিঙ্গুর থেকে ‘বিতাড়িত’ উত্তর ভারতেরই আর একটি সংস্থা আপাতত ফরিদাবাদের কারখানা থেকে সানন্দে যন্ত্রাংশ পাঠায়। মারুতির সঙ্গেও তাদের জোট আছে। তাদের আশা, মারুতি গুজরাতে গেলে তাঁরাও ডাক পাবে। সে ক্ষেত্রে গুজরাতে লগ্নি করার সম্ভাবনা রয়েছে তাদেরও।
সিঙ্গুরে টাটা মোটরস জানিয়েছিল, এই কারখানা থেকেই ভবিষ্যতে সহযোগী যন্ত্রাংশ শিল্প অন্য গাড়ি সংস্থাকেও যন্ত্রাংশ পাঠাতে পারবে। সে ক্ষেত্রে গুজরাতের এই লাভ সিঙ্গুর তথা এ রাজ্যই ঘরে তুলতে পারত বলে মনে করছে শিল্পমহল। উল্লেখ্য, সিঙ্গুরে ন্যানো-র সহযোগী যন্ত্রাংশ শিল্প প্রায় ২,২০০ কোটি টাকা লগ্নি করবে বলে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল। একই ভাবে বাড়ত কর্মসংস্থানও। ঠিক যে ভাবে সহযোগী যন্ত্রাংশ শিল্পের লগ্নির টানে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য নয়া কর্মসংস্থান তৈরির সম্ভাবনা বাড়ছে গুজরাতে। সংস্থাগুলির দাবি, বেশিরভাগ সংস্থাই ছোট বা মাঝারি বলে সংলগ্ন এলাকা থেকেই কর্মী নিয়োগ তাদের পক্ষে লাভজনক। তাই কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় আইটিআই উত্তীর্ণ বা ‘যোগ্য’ জমিদাতাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে তারা। |