বিদেশের ‘চেনা মাঠে’ লগ্নিকারীদের বার্তা অমিতের
‘বাংলা সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ছে প্রবাসীদের’
মতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন আগে অমিত মিত্রকে রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘আপনি তো ধুতি-পাঞ্জাবি ধরে টাই পরতে ভুলে গিয়েছেন!’
কথাটা অবশ্য ভুল নয়। বণিকসভা ফিকি-র মহাসচিব হিসেবে প্রায়ই ইউরোপ-আমেরিকা করে বেড়াতেন অমিত মিত্র। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে তিনি এত দিন কলকাতা-দিল্লির বাইরেই বেরোননি! তাই ধুতি-পাঞ্জাবি ছেড়ে কোট-টাই পরার প্রয়োজনও হয়নি। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেই রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে আমেরিকা-ব্রিটেন ঘুরে এলেন অমিতবাবু। জমি অধিগ্রহণের সমস্যার মতো নানা কারণে পশ্চিমবঙ্গে নতুন শিল্পায়ন কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। ঠিক এই সময় অমিতবাবুর এই সফরকে দেশিবিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি ‘ইতিবাচক বার্তা’ দেওয়ার চেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বিদেশ সফর সেরে গত কালই দিল্লি ফিরেছেন অমিত মিত্র। কলকাতায় যাওয়ার পথে আজ দিল্লিতে তিনি বলেন, “সকলেই পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে উৎসুক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে যে বিরাট পরিবর্তন হচ্ছে, তা নিয়ে জানতে আগ্রহী।”
হিলারি ক্লিন্টনের কলকাতা সফর থেকেই নতুন করে রাজ্যে মার্কিন বিনিয়োগের সলতে পাকানো শুরু হয়। সেই সূত্র ধরেই এ বার লাস ভেগাসে ‘উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাঙালি সম্মেলনে’ অমিতবাবুকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন মমতা। ৪ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী নিজে কলকাতা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মেলনে উপস্থিত আট হাজার মানুষের সামনে বক্তব্য রাখেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জলের মতো পশ্চিমবঙ্গের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। প্রবাসী বাঙালিদের রাজ্যে লগ্নির পাশাপাশি সামাজিক পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও সাহায্যের আর্জি জানান। সম্মেলনে অমিতবাবু নিজে উপস্থিত থাকায় প্রবাসী বাঙালিরা তাঁদের সমস্যা ও আগ্রহের দিকগুলি নিয়ে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। লাস ভেগাসে যেমন তিনি আমেরিকা ও কানাডায় বসবাসকারী বাঙালিদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তেমনই ওয়াশিংটনে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য পরিষদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। শিল্পপতিরা কি আস্থা রাখছেন রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতিতে? অমিতবাবুর জবাব, “আমরা বলেছি, আমাদের কথা যাচাই করে নিন। আমরা তিন করব বলে পাঁচ করে দেখাই।”
নয়ের দশকে রাজ্যে শিল্পায়নের জন্য প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বিদেশ সফর শুরু করেছিলেন। রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে এই প্রথম নতুন সরকারের কোনও মন্ত্রী লগ্নি টানার চেষ্টায় বিদেশ সফরে গেলেন। তাতে সাফল্য কতটা মিলল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। নতুন লগ্নির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও প্রকল্প বা সিদ্ধান্ত নিয়ে অমিতবাবু এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে তিনি জানিয়েছেন, পরিকাঠামো, তথ্য-প্রযুক্তি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগ নিয়ে কথা হয়েছে। ভারত-মার্কিন বাণিজ্য পরিষদের বৈঠকে বিভিন্ন সংস্থার সিইও-রা হাজির ছিলেন। ফিকি-র মহাসচিব হিসেবে দীর্ঘদিন এই স্তরেই ওঠাবসা ছিল অমিতবাবুর। কাজেই শিল্পপতিদের সম্মেলন তাঁর ‘চেনা মাঠ’। সেই অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগিয়েছেন অমিতবাবু। পুরনো সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে আগামী নভেম্বরে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আমেরিকার মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের যোগদানও পাকা করে এসেছেন তিনি। আমেরিকা থেকে ফেরার পথে লন্ডনে ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্য পরিষদের চেয়ারম্যান প্যাট্রিসিয়া হিউইটের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন অমিত। তাঁর কথায়, “সবথেকে যেটা ভাল লাগছে, তা হল, পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে মানুষের ধারণা পাল্টাচ্ছে।”
পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গত বছর জুনে মমতা ঘোষণা করেছিলেন, প্রবাসী ভারতীয়, বিশেষ করে বাঙালিদের জন্য রাজ্য সরকার একটি বিশেষ সেল তৈরি করবে। প্রবাসীরা রাজ্যে লগ্নি বা কোনো সামাজিক ক্ষেত্রে সাহায্যের ইচ্ছে প্রকাশ করলে ওই সেল-এর মাধ্যমে তাঁদের সব রকম সাহায্য করার জন্যই এই বিশেষ সেলটি চালু করা হয়। কী ভাবে ওই সেলটিকে ঢেলে সাজা যায়, সে বিষয়ে আমেরিকা-কানাডায় বসবাকারী বাঙালিদের কাছে এ বারের সফরে মতামত চেয়েছিলেন অমিতবাবু। তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই বিশেষ সেলটির একটি ওয়েবসাইট চালু করা হবে। সেই ওয়েবসাইটে গেলেই জানতে পারা যাবে, কোন জেলার কোন গ্রামে পানীয় জলের বন্দোবস্ত নেই বা কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কী ধরনের উপকরণের অভাব রয়েছে। প্রবাসী বাঙালিরা সেই অনুযায়ী অর্থ সাহায্য করতে পারবেন। একই সঙ্গে তাঁরা লগ্নি করতে চাইলেও ওই ওয়েবসাইটটি থেকে সব রকম তথ্য ও অন্যান্য সাহায্য পাবেন। অমিতবাবু প্রবাসীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন, মুখ্যমন্ত্রী খুব শীঘ্রই ওই ওয়েবসাইটটির উদ্বোধন করবেন।
ইউপিএ-সরকারের প্রধান শরিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব কূটনীতিবিদদের কাছেও অজানা নয়। আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত নিরুপমা রাও তাই নিজেই প্রবাসী বাঙালি সম্মেলনে হাজির ছিলেন। নিজের বক্তৃতাও বাংলায় শুরু করেছেন তিনি। পাশাপাশি অমিতবাবুর সঙ্গে শিল্পপতিদের বৈঠক করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও উদ্যোগী হয়েছিলেন নিরুপমা। অমিতবাবু এ দিন নিজেই নিরুপমার সাহায্যের কথা জানিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.