মেমারির স্কুলের শৌচাগার থেকে যে ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার পাওয়া গিয়েছিল, তাকে খুন করা হয়েছে বলেই মনে করছে বর্ধমান জেলা পুলিশ। ময়না-তদন্তের পরে পুলিশ নিশ্চিত, শ্বাসরোধ করে খুন করে ওই ছাত্রকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী, যে গামছা দিয়ে আবু সালেম নামে ওই ছাত্রকে ঝোলানো হয়েছে বা যে অন্তর্বাস পরা অবস্থায় তার দেহ মিলেছে, তা সালেমের নয় বলে জেনেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ হোসেন মির্জা বলেন, “তদন্তে বেশ কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। সমস্ত তথ্য বিচার করেই তদন্ত চলেছে। শীঘ্রই অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে।”
বুধবার বিকেলে বর্ধমানের মেমারির ওই আবাসিক স্কুলের শৌচাগারে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু সালেমের দেহ। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গার গঙ্গাপুরের বাসিন্দা সালেম আত্মঘাতী হয়েছে। তবে ওই ছাত্রের বাবা আবু সামাদ বিশ্বাস তা মানতে নারাজ। বৃহস্পতিবার মেমারি থানায় ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তবে কে বা কারা খুন করেছে, লিখিত অভিযোগে তা নির্দিষ্ট করে জানাননি সামাদ বিশ্বাস। পরিবারের সদস্যেরা পুলিশকে জানিয়েছেন, মাস ছয়েক আগে ওই স্কুলে ভর্তি হয়েছিল সালেম। ভর্তির কয়েক দিন পর থেকেই স্কুলের কিছু বড় ছেলে তাকে ‘বিরক্ত’ করত বলে বাড়িতে জানিয়েছিল সে। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছিল বলে তাঁদের দাবি।
পরিবারের সদস্যদের আরও দাবি, বিকেলে ঘটনা ঘটলেও তাঁদের জানানো হয়েছে রাতে। প্রথমে বলা হয়েছিল, ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছে সালেম। কিন্তু পরে জানানো হয়, শৌচাগারে আত্মঘাতী হয়েছে সে। পাশপাশি, শৌচাগারের যে পাইপ থেকে দেহটি ঝুলছিল, সেই উচ্চতায় বছর দশেকের ছেলের পক্ষে পৌঁছনো সম্ভব নয়।
তবে লিখিত অভিযোগে কারও নাম করেননি সামাদ বিশ্বাস। তাঁর অভিযোগ, “পড়াশোনায় ভাল হওয়ায় শিক্ষকেরা আমার ছেলের প্রশংসা করতেন। তাতেই ঈর্ষা ছিল অনেকের।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই ঘটনা ঘটানো ছোটদের পক্ষে সম্ভব নয়। এর ফলে কিছুটা ধন্দে পড়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তার মতে, বেশ কয়েক জন এই ঘটনায় জড়িত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কয়েক জনকে জেরা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে ওই স্কুলের কোনও ছাত্র বা কর্মী নিখোঁজ কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। ঘটনার সময়ে আবাসিক স্কুলে কারা ছিলেন, তাঁদের তালিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, ওই ছাত্র আত্মঘাতীই হয়েছে। পুলিশি তদন্তেই আসল ঘটনা জানা যাবে। |