উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের পরে এ বার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল!
বুলন্দশহরের বাবু বানারসি দাস জেলা হাসপাতালে একটি শিশুর ক্ষত সেলাই করেছিলেন এক সাফাইকর্মী। অন্য এক রোগীকে ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন এক ওয়ার্ড বয়। কয়েক দিন আগে ওই দু’টি ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে রীতিমতো হইচই শুরু হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের একমাত্র সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে। মাথায় ক্ষত নিয়ে পিজি-র জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসা এক যুবকের মাথায় সেলাই করেছেন এক সাফাইকর্মী। সেই ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ।
প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের সব চেয়ে নামী হাসপাতালে কাজের দিনে যদি এমন ঘটতে পারে, তা হলে জেলা বা গ্রামের হাসপাতালগুলির ছবি কতটা সঙ্গিন?
স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চতুর্থ শ্রেণির অনেক কর্মীকেই ইঞ্জেকশন দেওয়া, ক্ষতস্থানে ড্রেসিং বা সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া থাকে। আচমকা যদি একই সময়ে প্রচুর রোগী হাসপাতালে চলে আসেন, তা হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যই ওই প্রশিক্ষণ। সাধারণ সময়ে এই কাজটা অবশ্যই চিকিৎসকের করার কথা। এ ক্ষেত্রে কেন তা হয়নি, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে বলেছি।”
এসএসকেএমের সুপার তমালকান্তি ঘোষ অবশ্য জানান, এমন ঘটনার কথা তাঁর জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে তবেই তিনি মন্তব্য করবেন। এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র জানান, এমনটা কোনও ভাবেই হওয়ার কথা নয়। ওই সময়ে জরুরি বিভাগে যাঁদের ডিউটি ছিল, তাঁরা কী করছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
দুর্ঘটনায় আহত এক যুবককে নিয়ে এ দিন দুপুরে এসএসকেএমে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী। ওই যুবকের ক্ষতস্থান সেলাই করার প্রয়োজন ছিল। এক সাফাইকর্মী সেই কাজটা করেন। কিন্তু সেলাইয়ের পদ্ধতি যথাযথ ছিল না। ফলে ওই যুবক যন্ত্রণায় কাতরাতে শুরু করেন। তখনই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
জগৎ নামে ওই সাফাইকর্মী জরুরি বিভাগে নিয়মিতই ক্ষত সেলাইয়ের কাজ করেন বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। পিজি-র চিকিৎসক এবং অন্য কর্মীদের একটা বড় অংশই জানান, এ দিনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব এতটাই যে, চতুর্থ শ্রেণির একাধিক কর্মীকেই রোগীর শুশ্রূষার কাজে লাগানো করতে হয়। হাসপাতালের এক প্রবীণ চিকিৎসক বলেন, “শুধু ক্ষতস্থানে সেলাই নয়। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দিয়ে এক্স-রে, এমনকী ইসিজি-ও করানো হয়। অনেক সময়েই ক্ষত পরিষ্কার না-করে বা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত না-করেই তাঁরা এই কাজটা করেন। ফলে পরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। এমনকী এই হাসপাতালে সেলাইয়ের পরে ফের তা খুলে অন্য হাসপাতালে গিয়ে সেলাই করাতে হয়েছে, এমন নজিরও অজস্র।”
বুলন্দশহরের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্য দফতর বদলি করে দিয়েছে হাসপাতালের সুপারকে, সাসপেন্ড করা হয়েছে এক ওয়ার্ড বয়কে। এসএসকেএমের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটাই দেখার। |