ছ’মাসের মধ্যে রাজ্যের রুগ্ণ পরিবহণ ব্যবস্থা চাঙ্গা করার দাওয়াই বাতলানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৭ জানুয়ারি মহাকরণে ইউনিয়নগুলির সঙ্গে বৈঠকের পরে পরিবহণ দফতরকে তিনি এই সংক্রান্ত নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু ছ’মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কাজের কাজ কী হয়েছে, তা বলতে পারলেন না পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। রাতারাতি সব শুধরে ফেলার ‘ম্যাজিক’ তাঁর হাতে নেই, এই বলেই বৃহস্পতিবার দায় এড়িয়েছেন তিনি। সিটু, আইএনটিইউসি-সহ ৮টি পরিবহণ-কর্মী ইউনিয়নের সঙ্গে
এ দিন মহাকরণে বৈঠকে বসেছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী।
বিভিন্ন পরিবহণ নিগম চালাতে রাজ্যের ঘাড়ে ৬০০ কোটি টাকার ভর্তুকির বোঝা এত দিনেও লাঘব হয়নি। অথচ, বাসের বিভিন্ন রুটের সংখ্যা, বাস বা চালকের সংখ্যা— সব কিছুই ক্রমশ কমছে। ফলে, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। পরিবহণ-ব্যবস্থার এই ‘চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা’ প্রতিকারেই এ দিন সরব হন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, ছ’মাস পরেও পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলতে পারেননি মদনবাবু। উল্টে, তাঁদেরই ওই প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব দিতে বলেন পরিবহণ মন্ত্রী। সিটু নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্য বলেন, “এ তো দেখছি, লেজ দিয়ে কুকুর নাড়ানোর চেষ্টা।” রাজ্য আঞ্চলিক পরিবহণ-কর্মী ইউনিয়নের নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরিবহণ দফতরের দায়িত্বজ্ঞানের অভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখরক্ষা হল না।”
মাসখানেকের মধ্যে রাজ্যের তরফে কোনও মীমাংসা-সূত্র না এলে তাঁরা একটানা ধর্মঘটের পথেই হাঁটবেন বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন নেতারা। ইতিমধ্যে এক মাসের যৌথ কমর্সূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় জেলায় বাস ডিপোয় বিক্ষোভ, রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া, কর্মীদের রিলে অনশন ছাড়াও ২৫ জুলাই থেকে ৪৮ ঘণ্টার ট্যাক্সি ধর্মঘট ও অগস্টে এক দিন পরিবহণ ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিবহণ মন্ত্রী অবশ্য সাধারণ মানুষের দুর্গতির দায় বামেদের ৩৪ বছরের ‘অপশাসনে’র উপরেই চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, “৩৪ বছরের জঞ্জাল তো রাতারাতি সাফ করা যায় না।” বাস কমে যাওয়ার জন্যও সিটুকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান মদন। তিনি বলেন, “সিটুর জঙ্গি আন্দোলন ও ভাঙচুরের ফলেই সরকারি বাস রাস্তায় কমেছে।”
আইএনটিউসি নেতা রমেন পাণ্ডে বা সিটুর রাজদেও গোয়ালারা নিগমগুলিতে বেআইনি ভাবে কর্মী ছাঁটাইয়ের অভিযোগও তুলেছেন। এনবিএসটিসি-র মনীশ ব্রহ্ম ও সিটিসি-র বিক্রম সিংহ চাকরি খুইয়ে এবং পেনশন-প্রাপক সান্ত্বনা চক্রবর্তী পেনশন না-পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলেও ইউনিয়নগুলির অভিযোগ। ১০-১১ বছর চাকরি করার পরে এনবিএসটিসি-র ১১০০ জন কর্মীকে কেন ছাঁটাই করা হল, সে প্রশ্ন উঠেছে।
মদনবাবুর জবাব, “মুখ্যমন্ত্রী চান না, কেউ ছাঁটাই হোক। কিন্তু একটি ঠিকাদার সংস্থা ওই কর্মীদের চুক্তি পুনর্নবীকরণ করেনি।” ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, ইতিমধ্যে তিন হাজারের বেশি বেসরকারি বাস বসে গিয়েছে। সরকারি নিগমগুলির মধ্যে সিএসটিসি-র ১০০টি এবং এসবিএসটিসি-র ২৫টি বাস উঠে গিয়েছে। বাস চালকদের উপরে পুলিশি জুলুম বেড়েছে। কর্মীরা হয় মাইনে পাচ্ছেন না বা অনেক দেরিতে পাচ্ছেন। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে খুবই সঙ্গিন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন পরিবহণ শ্রমিকরা। |