কংগ্রেস ও তৃণমূলের টানাপোড়েনের ছাপ এ বার শিল্প নিয়ে বণিকসভার বৈঠকেও।
বৃহস্পতিবার বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের এক অনুষ্ঠানে পরস্পরকে খোঁচা দিলেন রাজ্যের জোট সরকারের দুই মন্ত্রী। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানস ভুঁইয়া। রাজ্যে গুচ্ছ ভিত্তিক শিল্পের (ক্লাস্টার) উন্নয়নে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে ছোট ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী মানসবাবুকে বিঁধলেন পার্থবাবু। পরে যার উত্তরে কেন্দ্রের দেওয়া সুবিধার খতিয়ান তুলে ধরলেন ওই কংগ্রেস নেতাও। পাল্টা অভিযোগ করলেন, মুর্শিদাবাদে টেক্সটাইটল হাব নিয়ে কেন্দ্রের তরফ থেকে আর্থিক সুবিধার আশ্বাস ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বরং রাজ্যের আশ্বাসেরই অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
তবে এই কথার লড়াইয়ের মধ্যেও অবশ্য ন্যূনতম সৌজন্যটুকু বজায় রেখেছেন দু’জনই। এক দিকে, সরকারের বড় শরিক তৃণমূলের নেতা পার্থবাবু জানিয়েছেন, রাজ্যে গুচ্ছ ভিত্তিক শিল্পের প্রাথমিক সাফল্যে সহকর্মী কংগ্রেস মন্ত্রীর উদ্যোগে তাঁরা খুশি। উল্টো দিকে মানসবাবুর বক্তব্য, “পাশে থেকে এই সাফল্য পেতে সাহায্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।”
এ দিন অনুষ্ঠানে মানসবাবুর ভাষণের মাঝপথে সভাস্থলে পৌঁছন শিল্পমন্ত্রী। সেই সময় রাজ্যের ছোট ও মাঝারি শিল্পে সাফল্যের কথা তুলে ধরছিলেন মানসবাবু। তিনি জানান, “রাজ্যে এখন ৩৭টি ক্লাস্টারের কাজ চলছে। ছোট ও মাঝারি শিল্পের ক্লাস্টার চিহ্নিত করা হয়েছে আরও ১০৫টি।” উল্লেখ্য, গত বিধানসভার নির্বাচনী ইস্তেহারে রাজ্য জুড়ে ১৭টি ক্লাস্টার তৈরির কথা বলেছিল তৃণমূল। কেন্দ্রের সহায়তায় এই ক্লাস্টার উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছিল পূর্বতম বাম সরকারের আমলেই।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ‘ছাপিয়ে যাওয়া’র এই সাফল্যে খুশি চেপে রাখেননি শিল্পমন্ত্রী। মঞ্চ থেকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন মানসবাবুকে। কিন্তু একই সঙ্গে, ক্লাস্টার চিহ্নিত করার পর থেমে না-থেকে প্রকল্পগুলি সম্পুর্ণ করার জন্য কেন্দ্রের আর্থিক সুবিধার কথা মানসবাবুকে মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি তিনি। তাঁর কথায়, “সঠিক সময়েই যাতে কেন্দ্রের টাকা মেলে, তা নজরে রাখা দরকার। না হলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে।” অর্থাৎ ইঙ্গিত স্পষ্ট। মানসবাবু কংগ্রেস নেতা। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের নেতৃত্বে রয়েছে তাঁর দল। সুতরাং এই দায়ও তাঁদেরই। উল্লেখ্য, ক্লাস্টার প্রকল্পে বিভিন্ন পর্যায়ে ৭০-৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ দেয় কেন্দ্র। বাকিটা বহন করতে হয় রাজ্যকে। ফলে এই সমস্ত প্রকল্পে কেন্দ্রের উপর তাদের নির্ভর করতে হয় অনেকখানি।
আলোচনাসভার শেষে প্রশ্ন করা হলে মানসবাবু জানান, এ বিষয়ে কেন্দ্র যথেষ্ট উদার। সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছে তারা। এ প্রসঙ্গে একের পর এক উদাহরণ দিয়ে ছোট ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রীর দাবি, শুধু ক্লাস্টারই নয়। সার্বিক ভাবে এই শিল্পের জন্য অর্থ দিতে পিছপা হয়নি কেন্দ্র। যেমন, ন্যাশনাল ফাইবার মিশনের আওতায় কেন্দ্রীয় বিআরজিএফ প্রকল্প থেকে ১১টি জেলার অনুন্নত এলাকায় তন্তুজাত শিল্পের উন্নয়নে এই প্রথম ৩১০ কোটি টাকার প্রস্তাব পেয়েছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রীও সে কথা জানেন। মালদহে রেশম পার্ক এবং গঙ্গারামপুরে বস্ত্র পার্কের জন্য যথাক্রমে ৩৮ ও ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র। বরং মানসবাবুর অভিযোগ, মুর্শিদাবাদে ১০০ কোটি টাকায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেক্সটাইল হাব তৈরি নিয়ে রাজ্যের তরফ থেকেই এখনও সাহায্যের আশ্বাস পাননি তাঁরা। তাঁর দাবি, ওই প্রকল্পে চার বছরে ৮০ কোটি টাকা কেন্দ্র ও বাকি ২০ কোটি টাকা রাজ্যের দেওয়ার কথা। তাঁর কথায়, “কেন্দ্র সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত আশ্বাসের অপেক্ষায় রয়েছি।”
|
শিক্ষক সংগঠন ভাঙা হল রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আইনি ‘সমস্যা’র কারণে বারাসতের পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইন থাকলেও ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি নেই। উপাচার্য কৌশিক গুপ্ত বৃহস্পতিবার বলেন, “বিধি না-থাকায় শিক্ষক সংগঠন থাকার ব্যাপারে আইনগত জটিলতা আছে। তা ছাড়া ওই সংগঠনের গঠনগত সমস্যাও ছিল। সেই কারণে ইসি তা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” শিক্ষকেরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। সংগঠন থাকাকালীন তার সম্পাদক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নারায়ণ ঘোড়ুই। তিনি এ দিন বলেন, “সোসাইটি অ্যাক্টে ওই সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বা নথিভুক্তি করানো হয়েছিল। আমাদের সমস্যার কথা জানানোর একমাত্র মঞ্চ ছিল ওই সংগঠন। কোনও কারণ না-দেখিয়েই সেটি ভেঙে দেওয়া হল।” |