সময়সীমা নির্দিষ্ট করেও পূরণ করা যায়নি দু-দু’বার। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দুই ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ সামাজিক মুক্তি কার্ড এবং ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক’কে দিনের আলো দেখানোর জন্য তৃতীয় দফার সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে। আগামী ২৬ জুলাই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই ওই দুই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা হতে চলেছে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
সূচনার আনুষ্ঠানিক দিন ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও সামাজিক মুক্তি কার্ড ঘিরে ‘জটিলতা’ অবশ্য এখনও মেটেনি। শ্রম দফতরে এখন চলছে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতা! অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ওই কার্ডের কথা ঘোষণা করার পরে গত এপ্রিলে তা তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই সময়সীমা পূরণ না-হওয়ার পরে শ্রমমন্ত্রী তাঁর দফতরকে বলেছিলেন, জুনের মধ্যে প্রথম দফার কার্ড তৈরি করে ফেলতে হবে। কিন্তু সেই লক্ষ্যও বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে জুলাইয়ের শেষে অন্তত কিছু কার্ড বাজারে এনে সরকারের ‘মুখরক্ষা’র চেষ্টা চলছে। একই রকম তৎপরতা চলছে ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক’ নিয়েও। এই বিলম্ব এবং প্রকল্পের অগ্রগতির হাল নিয়ে সরকারি কর্তারা কেউ অবশ্য মুখ খুলতে
চাইছেন না।
সরকারি সূত্রের খবর, সামাজিক মুক্তি কার্ডের শেষ পর্যায়ে তথ্যভাণ্ডার নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। একটি সংস্থাকে দিয়ে আগেই নথিভুক্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের ছবি তুলিয়ে স্ক্যান করানো হয়েছিল সরকারি তথ্যভাণ্ডারের জন্য। কিন্তু তা নিয়ে পরবর্তী কালে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ওয়েবেল-কে এখন কাজে লাগানো হয়েছে। প্রযুক্তি সংক্রান্ত এই কাজ আগে এক বার করিয়ে খরচ মিটিয়ে দেওয়ার পরেও আবার কেন একই রকম প্রক্রিয়া চালাতে হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে শ্রম দফতরে। যোগাযোগ করা হলে ওয়েবেল-এর তরফে অবশ্য এই নিয়ে মুখ খুলতে চাওয়া হয়নি। সামাজিক মুক্তি কার্ডের কাজ শুরুর গোড়ার দিকে অসংগঠিত শ্রমিকদের নথিভুক্তির তালিকা নিয়েও এক প্রস্ত ‘বিভ্রান্তি’ হয়েছিল। অনলাইন নথিভুক্তির প্রক্রিয়া কাজ না-করার জন্য সমস্যাও কম হয়নি।
পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায়, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্প বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় ‘চাপে’ রয়েছে শ্রম দফতর। প্রথম দফায় কত জনের হাতে কার্ড তুলে দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়েও বারংবার আলোচনা চলছে সরকারি স্তরে। তবে কার্ড শ্রমিকদের হাতে যাওয়ার আগে বিশেষ কিছু ঘোষণা করে ‘জটিলতা’ আরও বাড়াতে চাইছেন না শ্রম দফতরের আধিকারিকেরা। অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার আজিজ রসুলের বক্তব্য, “নেতাজি ইন্ডোরে আগামী ২৬ জুলাই সামাজিক মুক্তি কার্ড এবং এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক প্রকল্প শুরু হবে। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে সময়মতো জানিয়ে দেওয়া হবে। এইটুকুই বলতে পারি।”
সামাজিক মুক্তি এবং এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক জোড়া প্রকল্প নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও রয়েছে। সরকারকে আক্রমণ করে বিরোধীরা বলছে, মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থানের ঘোষণা করে চললেও কোথায় এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক? আর শিল্প, কল-কারখানা না-হলে কর্মসংস্থান হবে কোথা থেকে? বিরোধীদের আরও বক্তব্য, অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য নানা প্রকল্প ইতিমধ্যেই চালু আছে। প্রকল্পভিত্তিক পরিচিতিপত্রের বদলে সব কিছুকে এক জায়গায় এনে সামাজিক মুক্তি কার্ডে বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য সাধিত হবে কি না, প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। একই প্রশ্ন শ্রম দফতরের একাংশেও। |