জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ পড়ে গেল। অথচ কৃষিপ্রধান জেলাগুলো এখনও তেমন বৃষ্টি না-পাওয়ায় রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গিয়েছে রাজ্যের কৃষি দফতর।
জুনে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় অনাবৃষ্টির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। ধানের বীজতলা তৈরির জন্য তাই জুলাই মাসের প্রথম ১৪ দিনের বৃষ্টির মুখ চেয়ে ছিলেন চাষিরা। ইতিমধ্যে জুলাইয়ের ১২ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকা বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির দাক্ষিণ্য পেলেও পশ্চিমবঙ্গের ‘শস্যভাণ্ডার’ হিসেবে পরিচিত যে সব জেলা, সেই বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর বা উত্তর ২৪ পরগনার বর্ষা-ভাগ্যে এখনও শিকে ছেঁড়েনি।
ফলে ধানের চাষ গোড়াতেই ধাক্কা খেয়েছে। যে দক্ষিণবঙ্গে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সব বীজতলা তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে এখনও ২০% বীজতলা প্রস্তুত হওয়া বাকি। এর জেরে ধানের ফলন ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। উৎপাদনের সঙ্কট সামাল দেওয়া যাবে কী করে?
রাজ্য কৃষি দফতরের এক মুখপাত্রের দাবি: বর্ষার আগমনে দেরি দেখে তাঁরা আগাম কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। অনাবৃষ্টিতে খানিকটা ফসল নষ্ট হলেও খাদ্য উৎপাদন যাতে স্বাভাবিক থাকে, সে জন্য খরিফ চাষের ‘জমি-লক্ষ্যমাত্রা’ গত মরসুমের ৪১ লক্ষ হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ৪২.৯ লক্ষ হেক্টর করা হয়েছে। “বেশি জমিতে চাষ হচ্ছে। তাই আশা করছি, শেষমেশ কিছু বীজতলা তৈরি না-হলেও তেমন সঙ্কট হবে না। তা ছাড়া হাতে জুলাইয়ের বাকিটা ছাড়াও অগস্ট মাসের পুরোটা রয়েছে।” মন্তব্য এক কৃষি-কর্তার।
কিন্তু বীজতলার চারা মাঠে পোঁতার পরে তো পর্যাপ্ত জল দরকার! আগামী মাস দেড়েকেও যদি সে ভাবে বৃষ্টি না হয় দক্ষিণবঙ্গে?
প্রশ্নটা উঠছে, কারণ আলিপুর আবহাওয়া অফিস ইতিমধ্যে কিছুটা হতাশাব্যঞ্জক বার্তাই দিয়েছে। তারা জানাচ্ছে, যে নিম্নচাপ-অক্ষরেখার দৌলতে গত চার দিনের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি, তার অভিমুখ উত্তরবঙ্গের দিকে ঘুরে গিয়েছে। তাই জুলাইয়ের বাকি সময়টায় দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই আলিপুরের ধারণা। সত্যিই তেমনটা হলে রাজ্য সরকার কী করবে?
কৃষি দফতরের কাছে এর কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই। বস্তুত আবহাওয়া দফতরের হিসেব মোতাবেক, দক্ষিণবঙ্গের ১২টি জেলাতেই বৃষ্টিপাতে ঘাটতি। পুরো দক্ষিণবঙ্গে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঘাটতি ৩৮%। স্বভাবতই চাষ মার খাচ্ছে। এক কৃষি-কর্তার কথায়, “অনেক জায়গায় পাট এখনও খেতের মধ্যেই রয়ে গিয়েছে। এপ্রিল-মে-জুনে বৃষ্টি কম হওয়ায় ঠিক সময়ে পাটের চারা মাঠে পোঁতা যায়নি। দেরিতে পোঁতা পাটগাছ পুরুষ্টু না-হওয়ায় চাষিরা এখন সেগুলো কাটতে চাইছেন না। কোথাও পাট কাটা হয়ে গেলেও পচানোর জায়গা মিলছে না। কারণ, পুকুরে জল নেই!” অন্য দিকে মালদহে বৃষ্টিতে ঘাটতি থাকলেও সামগ্রিক ভাবে উত্তরবঙ্গে ফলনের ক্ষতি হচ্ছে অতিবৃষ্টিতে। বিশেষত কোচবিহার-জলপাইগুড়িতে দু’দফার বন্যায় ধান ও পাটের হাল যারপরনাই খারাপ হয়েছে বলে কৃষি-সূত্রের খবর।
২০১১-য় আশানুরূপ বৃষ্টি হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে ধানের ফলন গড় উৎপাদনকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে এ বছর কত ফসল উঠবে তা নিয়ে কৃষি-বিশেষজ্ঞদের সংশয় যথেষ্ট। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কম বৃষ্টির জেরে মহারাষ্ট্র-কর্নাটক-বিহার-পঞ্জাব-হরিয়ানাতেও এ বার আশানুরূপ ফসল হবে না বলে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের আশঙ্কা। তাদের হিসেবে, সারা দেশে চাল-ডাল-তৈলবীজের উৎপাদন এ বছর কমেছে। উৎপাদনের ঘাটতি পরে মেটানোর সুযোগ কতটা?
মন্ত্রকের কর্তাদের ব্যাখ্যা: পঞ্জাব-হরিয়ানায় সবে বর্ষা ঢুকেছে। তাই সেখানে ঘাটতি পূরণের সময় আছে। কিন্তু মহারাষ্ট্র, কর্নাটক বা বিহারে সেই সম্ভাবনা তেমন নেই বললেই চলে।
এবং এই মুহূর্তে দক্ষিণবঙ্গকেও ‘সুযোগহারা’র তালিকাতেই রাখছেন কৃষি মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ।
|