|
|
|
|
জঙ্গলমহলে ২ টাকার চাল |
লক্ষাধিক রেশন কার্ড বিলি হয়নি এখনও |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
উপভোক্তা চিহ্নিত হয়েছে। নতুন রেশন-কার্ড লেখাও হয়েছে। তবে, সব কার্ড এখনও বিলি হয়নি। ফলে, সরকার ঘোষিত ‘বিশেষ সুবিধা’ থেকে বঞ্চিতই রয়ে যাচ্ছেন জঙ্গলমহল এলাকার বহু গরিব মানুষ। অথচ, ওই এলাকার গরিব মানুষকে ‘বিশেষ সুবিধা’ দিতেই ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল সরকার। নতুন এই পদক্ষেপের ফলে তফসিলি ও সাধারণ—সব গরিব মানুষই উপকৃত হতেন। এ জন্য আয়ের ঊর্ধ্বসীমাও নির্দিষ্ট হয়েছে। তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষের বার্ষিক আয় যদি ৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত হয় তবে তাঁরা ২ টাকা কেজি দরে চাল পাবেন। আর সাধারণ সম্প্রদায়ের কোনও পরিবারের আয় যদি বছরে ৩৬ হাজার টাকা হয় তা হলে তাঁরাও এই সুবিধা পাবেন। ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ হিসাবে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১টি ব্লকে সরকারের এই ঘোষণা কার্যকর হওয়ার কথা।
নতুন সরকারের এক বছর পেরিয়েছে। কিন্তু এখনও জঙ্গলমহলের প্রতিটি উপভোক্তার হাতে নতুন রেশন কার্ড তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে, অনেক গরিব মানুষই ২ টাকা কেজি দরে চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বঞ্চিত মানুষের সংখ্যাটা কম নয়, লক্ষাধিক। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের নির্দেশ-মতো সমীক্ষা করে ২ টাকা কেজি দরে চাল পেতে পারেন, এমন গরিব মানুষের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। সমীক্ষা শেষে উপভোক্তা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন সব মিলিয়ে ৮ লক্ষ ৪৪ হাজার ১০৯ জন। তাঁদের মধ্যে তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৬৫৫। নতুন রেশন কার্ড লেখা হয়েছে ৮ লক্ষ ৩৭ হাজার ৪১৯টি। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৭ লক্ষ ১৭ হাজার ১৬৪টি। অর্থাৎ ১ লক্ষ ২০ হাজার ২৫৫টি কার্ড এখনও বিতরণ করা সম্ভব হয়নি (১৫ জুন পর্যন্ত পরিসংখ্যান)। কেন এই পরিস্থিতি? পশ্চিম মেদিনীপুরের খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “দ্রুত সব উপভোক্তার কাছেই নতুন কার্ড পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে। কয়েকটি এলাকায় কিছু সমস্যা রয়েছে।” কী সেই সমস্যা? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মূলত ব্লক-স্তরে ক্যাম্প করেই নতুন রেশন কার্ড বিলি করা হচ্ছে। অথচ, একাংশ উপভোক্তা ওই সব ক্যাম্পে আসছেন না। এর ফলে তাঁদের কাছে কার্ড পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনিক রিপোর্টেও এই সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বেলপাহাড়ি, জামবনি, শালবনি, নয়াগ্রাম এলাকায় এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। যে ১ লক্ষ ২০ হাজার ২৫৫টি কার্ড এখনও বিতরণ করা সম্ভব হয়নি, তার মধ্যে গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকে রয়েছে ১৬ হাজার ৬৫৯টি কার্ড, সাঁকরাইলে ১৩ হাজার ১৭৩টি, গোয়ালতোড়ে ১২ হাজার ২২২টি। এ দিকে, যে সংখ্যক মানুষকে নতুন রেশন কার্ড দেওয়া গিয়েছে তাঁদের সকলের কাছ থেকে পুরনো কার্ড ফেরত নিয়ে তা বাতিলও করতে পারেনি খাদ্য দফতর। বাতিল হয়েছে মোটে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ৯৫২টি কার্ড। এর ফলে অনেকের কাছে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে দু’টি রেশন কার্ডই থেকে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি খাদ্যশস্য নয়ছয় হতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সাধারণত, কোনও রেশন ডিলারের কাছে কত কার্ড রয়েছে তা দেখেই উপভোক্তার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। উপভোক্তার পরিসংখ্যান অনুযায়ীই সংশ্লিষ্ট ডিলারকে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করা হয়। উপভোক্তা এক সঙ্গে দু’টি কার্ড দেখিয়ে খাদ্যদ্রব্য নিতে পারবেন না। তা হলে কিন্তু অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য থেকে যাবে ডিলারদের কাছেই। যা বেআইনি ভাবে খোলাবাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে মুনাফার সুযোগও রয়ে যাচ্ছে।
খাদ্য দফতরের এক শ্রেণির কর্মী-অফিসারের সঙ্গেও রেশন ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটরদের ‘ঘনিষ্ঠতার’ অভিযোগ নতুন নয়। সেই ‘পরিচিতি’কে কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ রেশনের খাদ্যদ্রব্য খোলাবাজারে বিক্রি করেন। এমন অভিযোগ উঠলে অবশ্য পুলিশ- প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে। অভিযুক্ত ডিলারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়। জানা গিয়েছে, কোন এলাকায় কত পুরনো কার্ড বাতিল হয়নি, তার একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ডিলারদের নির্দেশ দেওয়া হবে, উপভোক্তারা রেশন দোকানে এলে তাঁদের যেন পুরনো কার্ড ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়। জেলা খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “উপভোক্তাদের পুরনো রেশন কার্ড জমা দেওয়ার জন্য আবেদন করা হচ্ছে। আমরাও এ ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ করছি।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার ১১টি ব্লকের মধ্যে একমাত্র লালগড়েই সব উপভোক্তার কাছে নতুন কার্ড পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। এখানে তফসিলি ও সাধারণ মিলিয়ে উপভোক্তা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন ৮৪ হাজার ৪৮৮ জন। তাঁদের সকলেই নতুন কার্ড পেয়েছেন। তবে, এখানেও পুরনো সব কার্ড বাতিল করা সম্ভব হয়নি। বাতিল হয়েছে ৭৫ হাজার ৩৩৭টি কার্ড। |
|
|
|
|
|