|
|
|
|
জেলা পরিষদ-প্রশাসন চাপানউতোর |
ভূমিহীনদের বাড়ি তৈরির কাজ থমকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ভূমিহীনদের জন্য বাড়ি তৈরির কাজ থমকে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ প্রকল্পে গত ৭ মাস ধরে ৯ কোটিরও বেশি টাকা পড়ে রয়েছে। বেশ কয়েকটি ব্লকে উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করাও হয়েছে। তবে তাঁদের নামে জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। বুধবার জেলা পরিষদের এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “বিডিওদের কাছে বার বার তালিকা চাওয়া হয়েছে। তবে অধিকাংশ ব্লক থেকেই তা পাওয়া যায়নি। এমন চলতে থাকলে তো সমস্যা হবেই।” এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের সব-স্তরের মধ্যে সমন্বয়ে ‘ফাঁক’ থেকে যাচ্ছে বলেও অনুযোগ করেন তিনি। সভাধিপতির কথায়, “সব দফতর সমন্বয় রেখে কাজ করতে না পারলে কোনও কাজই এগোবে না।” তবে জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তের আশ্বাস, ঠিক কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।
যাঁদের জমি নেই, অন্যের বাড়িতে থেকে কোনওক্রমে দিন-গুজরান করেন, তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দিতেই চালু হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ প্রকল্প ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’। এই প্রকল্পে জেলায় প্রায় ৫ হাজার বাড়ি তৈরির প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়। এক-একটি বাড়ির জন্য বরাদ্দ হওয়ার কথা ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। ঠিক ছিল, কেন্দ্র এই প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য বরাদ্দ করবে ১৮ কোটি ১৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। রাজ্য দেবে ৬ কোটি ৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে জেলার জন্য বরাদ্দ হবে ২৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। তবে তা হয়নি। প্রায় ৭ মাস আগে কেন্দ্র এই প্রকল্পের জন্য ৯ কোটি ৯ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা দেয়। বরাদ্দ অর্থে ১ হাজার ৮৭৫টি বাড়ি তৈরি হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত একটি বাড়িও তৈরি হয়নি। কিন্তু কেন? এ নিয়ে জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদের অভিযোগ, কাজের ক্ষেত্রে নজরদারির অভাব রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাধিপতিদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হচ্ছে না। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের সম্বন্বয়েও ‘ফাঁক’ থেকে যাচ্ছে। অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, প্রক্রিয়া চলছে। কাজ করতে গিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তাই প্রকল্প রূপায়ণে সময় লাগছে।
শুধু ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ নয়, ‘আমার বাড়ি’, ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’র মতো প্রকল্পের ক্ষেত্রেও কাজের গতি শ্লথ বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় ইন্দিরা আবাসের ৩৭ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা পড়ে ছিল বিভিন্ন ব্লকে (১ এপ্রিল পর্যন্ত)। গত ৩ মাসে এর সামান্যই খরচ করা গিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও প্রতিটি বাড়ির জন্য ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ হয়। ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ প্রকল্পে এখনও কেন বাড়ি তৈরি করা গেল না? শালবনির বিডিও জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, “কাজ এগোচ্ছে। দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণের চেষ্টা চলছে।” গড়বেতা ৩-এর বিডিও অমৃতা বর্মন রায়ের বক্তব্য, “প্রক্রিয়া চলছে। ব্লক-স্তরে ইতিমধ্যে বৈঠকও হয়েছে।” একই বক্তব্য মেদিনীপুর (সদর)-এর বিডিও অয়ন নাথের। তিনিও বলেন, “দ্রুত প্রকল্প রূপায়নের সব রকম চেষ্টা চলছে।”
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, এই প্রকল্পের জন্য ভূমিহীনদের চিহ্নিত করে প্রথমে তাঁদের জমি হস্তান্তর করতে হবে। তারপর সংশ্লিষ্ট জমিতে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হবে। ভূমি সংস্কার দফতরও প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। কিন্তু, বেশ কয়েকটি ব্লকে প্রশাসনের সবস্তরের মধ্যে সম্বন্বয় নেই বলে অভিযোগ। সভাধিপতি বলেন, “৭ মাস ধরে টাকা এসে পড়ে রয়েছে। অথচ, প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সমন্বয় জরুরি। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি।” |
|
|
|
|
|