|
|
|
|
নামেই নজরদারি, দিঘায় সমুদ্রস্নানে আশঙ্কা বাড়ছে |
সুব্রত গুহ • দিঘা |
গত ৭ মাসে ৮ জন। সমুদ্র-স্নানে
নেমে তলিয়ে গিয়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে দিঘায়।
পুলিশ-প্রশাসনের বক্তব্য, মত্ত অবস্থায় সমুদ্রে নেমে অযথা কেরামতি দেখাতে গিয়েই প্রাণ হারাচ্ছেন যুবকেরা। পর্যটকদের পাল্টা অভিযোগ, পুলিশি নজরদারির অভাবেই দিঘার সৈকতে মদ্যপান ও অসামাজিক কাজকর্মের এত বাড়বাড়ন্ত। প্রথাগত কোনও প্রশিক্ষণ না থাকায় দিঘার নুলিয়াদের উপযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে এরই মধ্যে। সব কিছু মিলিয়ে দিঘার সমুদ্র-স্নানে ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে ক্রমশ।
সাধারণত জানুয়ারি থেকে জুন মাসে সমুদ্র তুলনায় শান্ত থাকে। বছরের বাকি সময়টায় উত্তাল সমুদ্রে দুর্ঘটনার প্রবণতা বেশি। |
|
দিঘার সৈকতে চলছে সমুদ্রস্নান। —নিজস্ব চিত্র |
কিন্তু এ বার ‘শান্ত’ মরসুমেও সমুদ্রস্নানে নেমে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে গোটা বছরে যেখানে জনা পনেরো পর্যটক সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিলেন, সেখানে চলতি বছরে গত ৭ মাসে মৃতের সংখ্যা ৮। দিঘা থানার ওসি অজিত ঝা-র মতে, “মৃতদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫-এর মধ্যে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, আকণ্ঠ মদ্যপান করে সমুদ্রে স্নানে নামছেন ওই সব যুবকেরা। অকারণ বীরত্ব দেখাতে গিয়ে গভীর সমুদ্রে চলে যাচ্ছেন। তারপর বেসামাল হয়ে তলিয়ে যাচ্ছেন সমুদ্রে।” নজরদারি কম থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে অজিতবাবু বলেন, “দিঘা থানার পুলিশ ও রাজ্য সশস্ত্র পুলিশবাহিনী মিলে জনা পনেরো পুলিশকর্মী প্রতি দিন সৈকতে নজরদারি চালান।”
হোটেল মালিক থেকে শুরু করে দিঘার পর্যটকেরা অবশ্য মনে করছেন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের গাফিলতিই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সচিব বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, “আমোদ-প্রমোদ করতেই পযর্টকরা দিঘায় আসেন। কেউ কেউ বেসামাল হতে পারেন। কিন্তু প্রাণহানি যাতে না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদকেও। দিঘায় সাতটি ঘাট থাকলেও পযর্টকদের জন্য নিরাপদ ঘাট
চিহ্নিত করেনি পর্ষদ। ঘাট ও সমুদ্রের চরিত্র না বুঝেই যখন-তখন স্নানে নেমে পড়েন পর্যটকেরা। দেখার কেউ নেই।”
পুরাতন দিঘার সৈকত স্নানের জন্য যে নিরাপদ নয়, তা মেনে নিয়েছেন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক সৌমেন পাল। তিনি বলেন, “যেহেতু নিউ দিঘার মতো পুরাতন দিঘায় বালুচর নেই, সেহেতু জোয়ারের সময় স্নানে নামা একেবারেই উচিত নয়। এই নিয়ে সতর্ক করতে সাইনবোর্ড লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপরেও যে ভাবে দুর্ঘটনা ঘটে, তা দুর্ভাগ্যজনক।”
শুধু সাইনবোর্ড টাঙিয়ে প্রশাসনের দায় সারাটাই বরং ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মনে করেন কলকাতার একটি ভ্রমণসংস্থার কর্ণধার অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বেশি জলে নামা বিপজ্জনক বলেই দায়িত্ব শেষ না করে জোয়ারের সময় কেউ নামলে বা নামার চেষ্টা করলে তাঁকে আটকানোটা পুলিশ-প্রশাসনের কাজের মধ্যে পড়ে। আর সমুদ্রপাড়ে নজরদারির যে কথা শুনতে পাই বাস্তবে তা চোখে পড়ে না আমাদের।” তিনি আরও বলেন, “দিঘায় নুলিয়া হিসেবে যাঁদের রাখা হয়েছে (মাত্র ৬ জন), তাঁদের কোনও অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ নেই। এঁরা মূলত মৎস্যজীবী। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মুখ থেকে জীবিত অবস্থায় কাউকে উদ্ধার করে আনা এঁদের পক্ষে অসম্ভব। প্রশাসনের উচিত, বেশি সংখ্যায় প্রশিক্ষিত নুলিয়া রাখা।”
অপ্রশিক্ষিত ওই নুলিয়াদের যৎসামান্য বেতন দেওয়া নিয়ে পর্ষদ ও হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে টানাটানি চলে যেখানে, সেখানে প্রশিক্ষিতদের নিয়োগ করার পরিকল্পনা উড়িয়েই দেন এক পুলিশ আধিকারিক। তাঁর কথায়, “মূল সমস্যা যুবসমাজের অতিরিক্ত মদ্যপান। এখন কোল্ড ড্রিঙ্কস্-এর বোতলে মদ ভরে সৈকতে বসেই পান করেন পর্যটকেরা। বাধা দিতে গেলে আবার হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে এই প্রবণতা রোখার কোনও উপায় নেই।” |
|
|
|
|
|