প্রাক্তন এশীয় চ্যাম্পিয়নের ভাগ্যে বিড়ম্বনা
‘পুরনো সম্মান কে ফেরাবে’
ব বিতর্ক থেকে মুক্তি পেলেও তাঁদের ‘সোনার মেয়ে’ সমাজে নিজের পুরনো সম্মান ফিরে পাবেন কি না তা নিয়ে চিন্তিত তাঁর পরিবার!
পিঙ্কির আবার আশঙ্কা, “দেশের ও বাংলার হয়ে আমার এত পদক জয়, সম্মান এনে দেওয়ার পরিশ্রম একটা অন্যায় অভিযোগেই মুছে যাবে না তো?”
আদালতে জমা পড়া ডাক্তারদের ক্রোমোজোম রিপোর্ট এখনও সরকারি ভাবে প্রকাশিত হয়নি। পেশ হবে চার্জশিটও। মামলাও চলবে। তবুও পিঙ্কি এবং তাঁর পরিবার ধরে নিয়েছেন, সব অভিযোগই আদালতে ভুল প্রমাণিত হবে। কলঙ্কমুক্ত হবেন পিঙ্কি। কিন্তু তার পর কী হবে দোহা এশিয়াডে সোনাজয়ীর? সমাজ কি আর স্বাভাবিকভাবে নেবে পুরুলিয়ার তিলকডিহির মেয়েকে?
আপাতত সেই চিন্তাই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে পিঙ্কির বাবা দুর্গাচরণ ও মা পুষ্প প্রামাণিককে। বৃহস্পতিবার বিদিশাপল্লির বাড়িতে বসে দুর্গাচরণবাবু বলে দিলেন, “কোনওরকম প্রমাণ ছাড়াই আমার মেয়েকে জেল খাটতে হয়েছে। হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। এখন আমাদের প্রথম চিন্তা ও কি আগের মতো সমাজে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারবে?”
তাঁদের আরও ভাবনা এই ঝামেলার জন্য পিঙ্কির রেলের চাকরিতে কোনও সমস্যা হবে না তো? রেলের পক্ষ থেকে অবশ্য এ দিনই জানানো হয়েছে, জামিনের কাগজ-সহ আবেদন করলে আইন খতিয়ে দেখে চাকরিতে যোগ দেওয়ার সবুজ-সঙ্কেত দেওয়া হবে পিঙ্কিকে। পিঙ্কি নিজেও চান দ্রুত অফিসে যোগ দিতে। এ দিন আদালতে যাওয়ার আগে তিনি বললেন, “অফিসে যোগ দিয়ে স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে চাই। দেশের হয়ে বহু টুর্নামেন্টে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও সোনা-রুপো জিতেছি। কিন্তু এ ভাবে কখনও সমস্যায় পড়িনি।”
পিঙ্কির চাকরিতে যোগদানের আকুতির কারণ কী তা অবশ্য বোঝা যায় তাঁর বাবার কথা শুনলেই। “আমাদের বড় পরিবার। পিঙ্কি নিয়মিত আর্থিক সাহায্য করে বলেই আমাদের পরিবার চলে।”
এ দিনও পিঙ্কিকে দুপুরে যেতে হয়েছিল বারাসত আদালতে। যেতে হয়েছিল তাঁর বাবা-মাকেও। বাড়িতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিডিয়ার লোকজনদের ভিড়। এসেছেন অনেক পড়শিও। কিন্তু তাঁর মধ্যেই খচখচ করছে পিঙ্কির বাবা ও মা-র মন। “শুধু আমাদের নয়, পাড়ার অনেক গরিব মেয়ের বিয়েতেও ও নানাভাবে সাহায্য করে। সেই মেয়েটার কেন এমন নরকবাস হল তা বুঝতে পারছি না।” বলতে বলতেই হঠাৎ-ই প্রবল উত্তেজিত হয়ে পড়েন পেশায় বাস চালক দুর্গাচরণ। “পিঙ্কি ছেলে না, মেয়ে তা নিয়ে সবাই খোঁজ নিচ্ছে। কিন্তু অভিযোগকারিণী সম্পর্কে কেন খোঁজ খবর করছেন না আপনারা? ও বলছে ওর নাম অনামিকা। কিন্তু আসল নাম তো শিল্পী। খুঁজে দেখুন ওর ক’টা বিয়ে। কার সঙ্গে আমাদের গ্রামে পালিয়ে গিয়েছিল? মেয়ের নামের সঙ্গে কেন গোস্বামী পদবী ব্যবহার করে?” পিঙ্কির বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনামিকার বক্তব্য অবশ্য পাওয়া যায়নি। তাঁকে ফোনে পাওয়াও যায়নি।
পিঙ্কির আইনজীবী মাধব সান্যাল, তুহিন রাইরা ইতিমধ্যেই অবশ্য আলোচনা শুরু করেছেন পাল্টা ‘মানহানি’ ও ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ ব্যাপারে মামলা করা নিয়ে। তাতে অভিযোগকারিনী অনামিকা ছাড়াও পুলিশ ও নার্সিংহোমকে জড়ানোর কথা ভাবছেন তাঁরা। পিঙ্কি অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও সবুজ-সঙ্কেত দেননি। বললেন, “অনামিকার চার বছরের মেয়ে ঐশ্বর্যাকে আমি খুব ভালবাসতাম। ও তো শিশু। ওর মা-র দোষে কেন শাস্তি পাবে মেয়েটা? ঐশ্বর্যার স্কুলের মাইনে দিতাম। আদর করতাম। নিজের ছোটবেলার স্কুলে যাওয়ার কথা কথা মনে পড়ত। কিন্তু আমি আর দু’চারদিন দেখব। যদি অনামিকা এখনও আমার বিরুদ্ধে উল্টোপাল্টা কথা বলে তা হলে কিন্তু ছাড়ব না। ভাবছি, অনামিকা আমার বিরুদ্ধে এ সব করে কী পেল?”
পিঙ্কি অবশ্য এ দিনও ফের প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের বিরুদ্ধে। “আমি ধর্ষণ করেছি এই অভিযোগে গ্রেফতার করা হল। কিন্তু অনামিকার কেন ডাক্তারি পরীক্ষা করা হল না?”
অনামিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পাশাপাশি মাঠে ফেরার কথাও ভাবছেন পিঙ্কি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পর এ দিন আদালত থেকে ফিরে ঘুমিয়েছেন। বলছিলেন, “দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। কোচিং করানোর সুযোগ পেলে কোচিং করাতে চাই। কিন্তু চিন্তা একটাই, সবাই আমাকে আগের মতোই স্বাভাবিক ভাবে নেবেন তো? আমার পুরনো সম্মান কে ফেরাবে?”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.