ঐকান্তিক ইচ্ছে ও আয়োজনে হয়তো ত্রুটি ছিল না, কিন্তু স্রেফ সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ও চূড়ান্ত অপেশাদারিত্বের জন্য বৃহস্পতিবার সর্বাঙ্গসুন্দর হতে পারল না ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে আয়োজিত বিশ্বনাথন আনন্দের সংবর্ধনা সভা। পাঁচ লাখ টাকার চেক, রসগোল্লার হাঁড়ি, ঝকমকে স্মারক, সবই ছিল। ছিলেন রাজ্যের নামীদামি সব ক্রীড়াবিদ এবং সরকারের তরফে একঝাঁক মন্ত্রী। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে বসা আনন্দকে ফোন করেন উত্তরবঙ্গ থেকে। সবই ছিল, ছিল না শুধু পেশাদারি উপস্থাপনা। ধারে ও ভারে এই অনুষ্ঠান যে অনন্য হতে পারে এবং মঞ্চে আনন্দ ও সূর্যশেখরের উপস্থিতিই যথেষ্ট, এটাই বুঝতে ভুল হয়েছে রাজ্য ক্রীড়া দফতরের।
বারবার ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বিশ্বচ্যাম্পিনয়কে ‘বিশ্বনাথ আনন্দ’ বলে সম্ভাষণ করার মতো মারাত্মক ভুল করে চলেছিলেন, মঞ্চের সামনে সব সময়ই অষ্টমী পুজোর প্যান্ডেলের মতো ভিড় লেগেছিল, পাড়ার ক্লাবদেরও ফুলের তোড়া হাতে মঞ্চে ওঠার সুযোগ ছিল, এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু বিশৃঙ্খলা চরমে উঠল আনন্দকে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র থেকে নেতাজি ইন্ডোরের প্রেস রুম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার সময়। কোনও নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় কচিকাচা ও উৎসাহীরা হামলে পড়ল তাঁর উপর। ভিড়ের মধ্যে দিব্যেন্দু ও সূর্যরা কোনওরকমে তাঁকে বের করে নিয়ে যান। কিন্তু ধাক্কাধাক্কিতে কোমরের পেশিতে টান লেগে যায় আনন্দের। মুখে অবশ্য রা কাড়েনি, কোনও অভিযোগও করেননি, বরং বারবার সংবর্ধনা সভার প্রশংসা করেছেন। ক্রীড়ামন্ত্রী মঞ্চেই প্রস্তাব দেন, বছরে ছ’বার শহরে আসতে হবে দাবা শেখাতে। আনন্দ পরে যা নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “ছ’বার পারব না হয়তো, কিন্তু সময় পেলেই আসব।” নিজের পাওয়া টাকা থেকে এক লাখ টাকা সূর্যশেখরকে দিয়ে দেন আনন্দ।
এমনকী সরকারের তরফে তাঁকে যে গাড়িটা দেওয়া হয়েছিল, তাতেও লেগস্পেস কম থাকায় আনন্দের অসুবিধে হয়েছে। রাতে দিব্যেন্দু বড়ুয়ার দেওয়া ভোজসভায় খুঁড়িয়েই হাঁটতে দেখা যায় তাঁকে। লম্বা-চওড়া মানুষ আনন্দ, আর একটু ভাল গাড়ি তাঁকে দেওয়া যেত না? |