বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা
‘ফেডেরারের মধ্যে নিজেকে দেখতে পাই’
কদিনের ঝটিকা সফর। বিকেলে রাজ্য সরকারের সংবর্ধনা ও রাতে নৈশভোজ। এরই ফাঁকে সময় করে বৃহস্পতিবার সন্ধেয় দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ প্লেসে দিব্যেন্দু বড়ুয়ার দাবা অ্যাকাডেমিতে গেলেন পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ। সেখানে বসে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে উঠে এল কাসপারভ থেকে লি-হেশ, এমনকী ইউরো কাপও।

প্র: দাবাকে বলা হয় ‘লোনলি স্পোর্ট।’ একাকীত্বের খেলা। একা খেলতে হয় এমন খেলায় সর্বকালের সেরা হিসেবে তিনজনকে বাছা হচ্ছে। টেনিসের ফেডেরার, গল্ফের টাইগার উডস আর আপনি। ফেডেরারের সাতবার উইম্বলডন জয় আর আপনার পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্যে মিল খুঁজে পান?
আনন্দ: হুম। প্রশ্নটা ইন্টারেস্টিং। দাবা সত্যিই লোনলি স্পোর্ট। টেনিস বা গল্ফও তাই। আমি ফেডেরারের ফ্যান বলতে পারেন। বিশেষ করে যে ভাবে ও এ বারের উইম্বলডন জিতল। কতবার ফেডেরারের প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেখেছি বিরক্তি প্রকাশ করতে, র্যাকেট আছড়াতে। কিন্তু ও নিজে আশ্চর্যরকমের শান্ত। চরম বিপদের মুহূর্তেও ওর মুখে উত্তেজনার কোনও ছবি থাকে না। দুটো সেট পিছিয়ে গেলেও ওকে দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। এই জায়গাটায় আমি মাঝে মাঝে ওর সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পাই। কোথাও না কোথাও ওর মধ্যে নিজেকে দেখতে পাই। উডসও একাকীত্বের খেলায় চ্যাম্পিয়ন। নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরাদের একজন। কিন্তু অত সব স্ক্যান্ডালের পরে নিজেকে ফের বিশ্বসেরা করে ফেলাটা কঠিন। দেখা যাক।
দাবা সম্মেলন: মধ্যমণি বিশ্বনাথন আনন্দ। পাশে সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
ও দিব্যেন্দু বড়ুয়া। রাজ্য সরকারের সংবর্ধনায়। ছবি: উৎপল সরকার
প্র: এ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে গেলফাঁর কাছে সাত নম্বর গেমে হেরে যখন ০-১ পিছিয়ে পড়েছিলেন, ধরে নেওয়া হয়েছিল এ বার হারবেনই। আপনার সেকেন্ড সূর্যশেখর বলছিলেন, অষ্টম গেমের আগে সেই রাতটা ঘুমোননি?
আনন্দ: আমি তা-ও অল্প ঘুুমিয়েছিলাম। আমার সেকেন্ডরা ঘুমোয়নি। গেলফাঁর কাছে ০-১ পিছিয়ে পড়া মানে ফিরে আসা খুব কঠিন। ভীষণ আপসেট লাগছিল। আট নম্বর গেমটা যে পরের দিনই জিততে পেরেছিলাম, সেটা খুব বড় ব্যাপার। হয়তো এ বারের চ্যাম্পিয়নশিপে টার্নিং পয়েন্ট। ক্র্যামনিক, টোপালভ, গেলফাঁ—প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এদের তিন জনের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন গেলফাঁ-ই।

প্র: ২০১৪ সালে চ্যালেঞ্জার হিসেবে কাকে দেখছেন?
আনন্দ: যে-ই চ্যালেঞ্জার হোক, পরবর্তী বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবেও নিজেকে দেখতেই ভাল লাগবে। হ্যাঁ, ম্যাগনাস কার্লসেন বা লেভন অ্যারোনিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে। ক্র্যামনিক বা অন্য কেউ আবার হতে পারে। যে-ই হোক, আমি চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি।

প্র: টেনিসের ফেডেরার ৩০-এ উইম্বলডন জিতছেন, আপনি ৪০-এ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। চ্যাম্পিয়নদের কি বয়স কমে?
আনন্দ: কে জানে। আমার তো দাবা নিয়ে কোনওদিন ক্লান্তি আসেনি। এখনও সব সময় খেলতে ইচ্ছে করে।

প্র: কাসপারভ যে মস্কো গিয়ে বললেন, আপনার খেলায় কোনও নতুনত্ব নেই, এই দাবা থেকে বিশ্বের কিছু পাওয়ার নেই—তখনই প্রতিবাদ করেননি কেন?
আনন্দ: আমি চাইনি ওর উদ্দেশ্য সফল হোক। ও কখনওই চায়নি আমি এ বারে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপটা জিতি। সে জন্যই মস্কোয় গিয়ে আমার নামে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে যা খুশি তাই বলতে শুরু করেছিল। যাতে আমার ফোকাসটা নড়ে যায়। সেটা নড়াতে চাইনি বলেই তখন প্রতিবাদ করিনি। এখন বলতে পারি, রাশিয়ান ছাড়া কাউকে বিশ্বসেরা দেখতে পারে না ও। সেটাই ওর সমস্যা।

প্র: আপনি তো ফুটবলের ভক্ত, রিয়াল মাদ্রিদ ফ্যান। এ বারে ই উরো দেখলেন?
আনন্দ: নিশ্চয়ই। স্পেন জিতবে আশা করেছিলাম। ওদের সমর্থন করছিলাম শুরু থেকেই। অসাধারণ জয়। এই স্পেন কিন্তু সর্বকালের সেরা হওয়ার মতো টিম।

প্র: অলিম্পিকের ঠিক আগে লি-হেশ বিতর্কটা কি টেনিসে পদক সম্ভাবনা কমিয়ে দিল না?
আনন্দ: ব্যাপারটা একেবারেই ভাল হল না। যে কোনও খেলায় মতপার্থক্যটা খুব সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু যে ঝগড়াটা মার্চ মাসে যে কোনও ঘরে বসে নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়া যেত, সেটা জুন মাসে অলিম্পিকের আগে প্রকাশ্যে আসা এবং কাদা ছোঁড়াছুড়ি একেবারেই কাম্য ছিল না। তিক্ত এই পরিস্থিতি কথা বলে মেটানো উচিত ছিল।

প্র: বাবা হয়েছেন পনেরো মাস হল। ভাল বাবা হওয়া না আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া, কোনটা ভবিষ্যতে আগে আসবে?
আনন্দ: দুটোর মধ্যে তুলনা হয় কি? আগে-পরে কেন, দুটোই তো একসঙ্গে আসতে পারে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.