দু’জনের দাবি ভিন্ন। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা এক। আরও এক জন ‘ইরম শর্মিলা চানু’-র চাপ নিতে মণিপুর সরকার মোটেই রাজি নয়।
তাই প্রকাশ্য মঞ্চে অনশনরত প্রবীণ নাট্য ব্যক্তিত্বকে বলপ্রয়োগ করেই নিয়ে আসা হল হাসপাতালে। এর পর বন্য জন্তুর মতোই তাঁকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে, জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা চলল।
কিন্তু চানুর মতোই জেদে অনড় কাকচিংতাবাম বীরহরি শর্মা। তাই ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে গ্লুকোজ স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। ঘটনাচক্রে, চানুও এই একই হাসপাতালে, একই ভাবে বন্দি। ১২ বছর ধরে অনশনরত চানুর আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা ওক্রাম ইবোবি সরকারের গলার কাঁটা। সিঁদুরে মেঘ দেখে তাই পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে সরকার, শর্মার ঘটনা যেন গণমাধ্যমের ‘ব্রেকিং নিউজ’ হয়ে না দাঁড়ায়। তাই সশস্ত্র পুলিশ প্রহরায়, পর্দার আড়ালে ঢেকে ফেলা হয়েছে বীরহরি শর্মাকে।
সম্প্রতি রাজ্যে অনুপ্রবেশ রুখতে ফের এক গণ আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়েছে। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বেশ ক’টি রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একযোগে মণিপুরে ইনারলাইন পারমিট চালু করার জন্য আন্দোলনে নেমেছে। ৭ জুলাই রাজ্যের বিশিষ্ট নাট্যকর্মী কে বীরহরি শর্মা অনুপ্রবেশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগে থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন। ২০১১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী মণিপুরের জনসংখ্যা ২২,৯৩,৮৯৬। এর মধ্যে বহিরাগতের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৪ হাজার। আদি বাসিন্দা মেইতেইদের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৫১ হাজার। অন্যান্য উপজাতির সংখ্যা ৬ লক্ষ ৭০ হাজার। |
এই পরিস্থিতি রুখতে নাট্যশ্রী, নাট্যভূষণ ও নাট্যরত্ন খেতাবে ভূষিত ৭২ বছর বয়সী কে বি শর্মা অবিলম্বে মণিপুরে ইনার লাইন পারমিট চালু করার দাবি জানান। তিনি প্রকাশ্যে মঞ্চে অনশনে বসায় ‘চানু জুজু’ দেখে প্রশাসন। দিল্লিতে অণ্ণা হাজারের মতো সরকারি খাতির-যত্ন চানু পাননি, শর্মাও পাবেন না জানা ছিল। ৯ জুলাই ভোর বেলা মঞ্চ থেকে জোর করে তাঁকে নিয়ে যায় পুলিশ। আদালতে জামিন নিতে অস্বীকার করেন শর্মা। তাঁর ১৫ দিন জেলহাজতের আদেশ হয়। চানু যেখানে বন্দি, সেই জওহরলাল নেহরু হাসপাতালেই ৭২ বছর বয়সী শর্মাকে নিয়ে যায় পুলিশ।
আপাতত পুরুষ বিভাগের চার নম্বর বেডে, বাঁ পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাঁকে। তিনি জানান, শুধু মাত্র শৌচালয় ব্যবহার করার সময় শিকল খোলা হচ্ছে। যে রাজ্যে নাটক করে এত সম্মান মিলেছিল, সেই রাজ্যেই আন্দোলনে নামায় এমন অপমান জুটবে তা ভাবতেও পারেননি তিনি। তবে হাসপাতাল থেকে তিনি জানিয়েছেন, আন্দোলন চলবে। তিনি জলস্পর্শ করছেন না। মুক্তিও ভিক্ষা করবেন না। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে নাম না জানিয়েই নানা ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ মিলিলিটার গ্লুকোজ স্যালাইন শর্মার শরীরে প্রবেশ করছে। রক্তচাপ মোটামুটি স্বাভাবিক। সমর্থক ও সংবাদমাধ্যম যাতে শর্মার সঙ্গে দেখা করতে না পারে, তাই ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। শর্মা প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে অন্তরালে চলে যাওয়ার পরে ইনারলাইন পারমিট চালু করার দাবিতে আন্দোলনের ব্যাটন হাতে তুলে নিয়েছেন খ্যাতনাম মণিপুরি গায়ক টাপতা। শর্মার মুক্তির দাবিতে চলছে বিক্ষোভ, প্রতিবাদসভা। রাজ্য সরকার ইনারলাইন পারমিট চালুর ব্যাপারে কেন্দ্রের পরামর্শ চাইলেও, শিকলবন্দি নাট্যকারকে নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। |