বধূ-নির্যাতনের অভিযোগের ‘সাক্ষ্যপ্রমাণ’ ছিল। তা সত্ত্বেও বিবাহ বিভ্রাট-কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত কী ভাবে জামিন পেয়ে গেলেন, সেটাই এখন খতিয়ে দেখছেন লালবাজারের কর্তারা। শুধু খতিয়ে দেখাই নয়, ওই জামিনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাঁরা উচ্চ আদালতে আবেদন করারও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
অভিযুক্তের নাম রাজেশ গিরি। এক স্ত্রী থাকতেও তিনি অন্য এক জনকে বিয়ে করতে উদ্যোগী হন। বিয়ের আসরে গিয়ে হাজির হন রাজেশের প্রথম স্ত্রী পূজা কৌর। তার পরেই বধূ-নির্যাতন ও প্রতারণার অভিযোগে রাজেশ ও তাঁর বাবা কৃষ্ণভগবান গিরিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার আদালত ওই ২ অভিযুক্তকে জামিন দিয়েছে।
বধূ-নির্যাতনের মতো অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও রাজেশ এবং তাঁর বাবা কী ভাবে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেলেন, তা জানতে বৃহস্পতিবার খোদ গোয়েন্দা-প্রধানের কাছে হাজির হন পূজা। সঙ্গে ছিলেন সমাজকর্মী কবিতা গুপ্ত। পূজার অভিযোগ, চিৎপুর থানার পুলিশ মামলাটি লঘু করে দেওয়ায় রাজেশ ও তাঁর বাবা সহজেই জামিন পেয়েছেন। চিৎপুর থানার বিরুদ্ধে পূজার অভিযোগ এই প্রথম নয়। রাজেশ ফের বিয়ে করতে যাচ্ছেন শুনে তিনি চিৎপুর থানাতেই অভিযোগ করেন। কিন্তু সে-বার চিৎপুর থানা তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করেনি বলে পূজার অভিযোগ।
গত ২৭ জুন ফুলবাগান থানা এলাকায় রাজেশের বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে পূজা জানান, রাজেশ দু’বছর আগেই তাঁকে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছেন। সেই বিয়ের বৈধ কাগজপত্রও দেখান তিনি। পূজা সেই সময় গোয়েন্দা-প্রধানের কাছেও অভিযোগ জানান, রাজেশ ফের বিয়ে করতে যাচ্ছে জেনে তিনি থানায় অভিযোগ করছেন। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে পুলিশ অভিযুক্তদের পক্ষেই থেকেছে। লালবাজারের কর্তাদের চাপে চিৎপুর থানার পুলিশ পরে রাজেশ এবং তাঁর বাবার বিরুদ্ধে পূজার অভিযোগ জমা নেয়। বিবাহবাসর থেকেই রাজেশ এবং তাঁর বাবাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৩ দিন জেলে থাকার পরে ১০ জুলাই তাঁদের জামিন দেয় শিয়ালদহ আদালত।
পূজা এ দিন গোয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষের কাছে গিয়ে চিৎপুর থানার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেন। বলেন, “২৬ জুন রাতে চিৎপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে দেখেছিলাম, রাজেশ এবং তাঁর বাবা থানা থেকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চিৎপুর থানার ওসি এবং তদন্তকারী অফিসারের ভূমিকা আমার ভাল লাগেনি। আমার মনে হচ্ছে, তদন্তের কাজে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে। পুলিশ নিশ্চয়ই সব সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতে জমা দেয়নি। তা না-হলে আদালত জামিনে ছাড়ল কেন?”
তদন্তের কাজে পুলিশের যে গাফিলতি রয়েছে, তা অবশ্য কার্যত মেনেই নিয়েছেন লালবাজারের পদস্থ অফিসারেরা। মুখরক্ষায় এখন জামিনের বিরোধিতা করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। গোয়েন্দা-প্রধান বলেন, “জামিনের কাগজপত্র খতিয়ে দেখে আমাদের মনে হয়েছে, নিম্ন আদালতের জামিনের রায়ের বিরোধিতা করে উচ্চ আদালতে আবেদন জানানোর সুযোগ রয়েছে। পুলিশ জামিনের বিরোধিতা করবে।” চিৎপুর থানার সংশ্লিষ্ট অফিসারদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ-কাণ্ডেও থানার পুলিশ অভিযোগকারীর সঙ্গে অসহযোগিতা করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তদন্ত করে সেই পুলিশকর্মীদের শাস্তি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু হবে কি না, সেই বিষয়ে অবশ্য এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না পুলিশকর্তারা। |