যৌবন-বন্দি খেলা
বাইশ থেকে বিরাশি সব মহিলাই চান গ্রানাইটের মতো চকচকে আর চকলেট মুস-এর মতো তুলতুলে ত্বক। বয়সটা এখন কোনও ব্যাপারই নয়। আগেকার দিনে অন্য রকম ছিল। একটু বয়স হলেই মা-কাকিমারা সাদাটে শাড়ি কেনাকাটা শুরু করে দিতেন। তার সঙ্গে চুলে পাক ধরাটাও স্বাভাবিক নিয়ম বলে ধরে নিতেন। এখন কিন্তু উল্টোটাই হয়। সবাই চান, মেয়ের সঙ্গে হাঁটলে সবাই ভাবুক, দুই বন্ধু গল্প করতে করতে যাচ্ছেন। কিন্তু একটা অমোঘ সত্যকে কিছুতেই খণ্ডানো সম্ভব নয়। সেটি হচ্ছে, সাফ সাফ বললে, ‘কুড়িতে বুড়ি’। মেয়েদের কুড়ি থেকে বাইশের মধ্যে হরমোনের বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। তার প্রভাব ত্বকে দেখা যায়। সুতরাং পুরাকালের পণ্ডিতগণের কথা একেবারে ফেলনা নয়।
যখন থেকে শিশুদের প্রডাক্ট ব্যবহারের বয়স পেরিয়ে গেলেন, মায়ের যত্নও কমে এল, তখন থেকেই একটুআধটু যত্ন নিতে হবে। না হলে বয়সের ছাপ পড়ে যেতে পারে তাড়াতাড়ি। অনেকের ক্ষেত্রেই এই বয়সটা তাড়াতাড়ি চলে আসে। পঁচিশেই মনে হয় চল্লিশের কাছাকাছি। কম বয়সে ত্বকে স্বাভাবিক আর্দ্রতার মাত্রা যত বেশি থাকে, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা দ্রুত কমতে থাকে। কুড়ির দশকে তা অনেকটাই হারিয়ে যায়।
তৈলাক্ত, শুষ্ক, সাধারণ সব ত্বকেই বলিরেখার সমস্যা শুরু হয়। কিন্তু ত্রিশের পর থেকে চোখে পড়ে, তখন আমরা সজাগ হই, কিছু একটা করতে হবে। যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক, তাঁরা ভাবেন, ‘আমার কোনও যত্নের প্রয়োজন নেই।’ কিন্তু এই চিন্তাধারাই বিপদ ডেকে আনে। সব ধরনের ত্বকেই যত্ন জরুরি। এ ছাড়া বংশগত কারণটিও গুরুত্বপূর্ণ।
আর একটা কথা। কলকাতায় কিন্তু খুব ঘাম হয়। সেই কারণে মুখ চকচক করলেই অনেকে ভাবেন আমার ত্বক তৈলাক্ত। এমন ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। ঘাম ও তৈলাক্ত ত্বকের মধ্যে একশো শতাংশ তফাৎ আছে। ঘামের সঙ্গে খুব অল্প তেল বের হয়। শুষ্ক ত্বকে ঘাম হয় বেশি। বাইরের তাপ শুষ্ক ত্বকে আঘাত করে বেশি। তাই ঘামের পরিমাণও বেশি হয়।
খুব কম বয়সে, অর্থাৎ ১৪-১৫ বছর যখন বয়স, তখন ত্বকটি শুধু পরিষ্কার রাখলেই চলে। দুধ বা পুদিনা পাতার ক্লেনজার দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। এতে সতেজতা বজায় থাকে। টোনার সব সময় ব্যবহার করা প্রয়োজন। এই সময়ে গোলাপজল ব্যবহার করলেও হয়। সানস্ক্রিন লাগানো অবশ্যকর্তব্য। তৈলাক্ত ত্বকে জেল জাতীয় সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন এবং শুষ্ক ও সাধারণ ত্বকের জন্য লোশন বা ক্রিম জাতীয় সানস্ক্রিন সেরা। যে কোনও বয়সের জন্যই এই পরামর্শ উপযুক্ত। সানস্ক্রিন কেনার সময় ইউভিএ, ইউভিবি লেখা আছে কিনা দেখে নেবেন।

কুড়ির পর থেকে যে কোনও বয়সের জন্য
যাঁদের বয়স পঁচিশের মধ্যে, তাঁদের সপ্তাহে কমপক্ষে এক দিন স্ক্রাবিং করতে হবে। তার পর থেকে সপ্তাহে তিন দিন স্ক্রাবিং করা উচিত। যাঁরা ভাবেন বাড়িতে থাকলে এ সবের দরকার নেই, তাঁদের ধারণা ভুল। রান্নার তাপ, ফোড়নের ভাপ লাগলেও ত্বকের কিছুটা ক্ষতি হয়, তাই স্ক্রাবিং দরকার। স্ক্রাবিং ত্বকের মৃত কোষগুলিকে সরিয়ে দিয়ে নতুন কোষ জন্মানোয় সাহায্য করে। স্ক্রাবিংয়ের একটি বড় গুণ হল এটি পিগমেন্টেশনকে সহজে কাছে আসতে দেয় না। তবে স্ক্রাবিং করার পর অবশ্যই টোনিং করবেন। চার চামচ জলে এক ফোঁটা রোজ অয়েল বা এক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল দিয়ে টোনার তৈরি করে লাগিয়ে নেবেন। সপ্তাহে দুই বা তিন দিন প্যাকের জন্য বরাদ্দ রাখবেন। যাঁদের ত্বক শুষ্ক, তাঁরা ক্রিম জাতীয় প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। আর যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁরা মূলতানি মাটির সঙ্গে চন্দন কাঠের তেল, টি ট্রি অয়েল, এগুলি মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে লাগান। সাধারণ ত্বকের জন্য যে কোনও প্যাকই ভাল ফল দেবে।

পনেরো দিনে উজ্জ্বল ত্বক
স্ক্রাবিংয়ের জন্য অত্যন্ত মিহি করে বাটা মুসুর ডালের সঙ্গে, কিছুটা টক দই ও এক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে নিন। তৈলাক্ত ত্বকে দই বাদ দিন। যাঁর ত্বকে যে রকম সহ্য হয়, সেই ধরনের প্যাক লাগান। প্যাকের মধ্যে এক ফোঁটা জেরানিয়াম অয়েল মিশিয়ে নিন। এর ফলে ফরসা ভাব বজায় থাকবে। ফেসওয়াশ ব্যবহার করবেন না, এতে ত্বক কিছুটা শুষ্ক হয়ে যায়। সাধারণ ত্বকের জন্য সাদা তিলবাটার সঙ্গে রোজ অয়েল বা ল্যাভেন্ডার অয়েল এক ফোঁটা মিশিয়ে নিন। রাত্রে শোওয়ার সময় দু’ফোঁটা বিউটিফুল স্কিন অয়েল সমস্ত মুখে লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন। এটা যে কোনও বয়সেই ব্যবহার করা যায়। দেখবেন, পনেরো দিনে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

অল্প বয়সে বলিরেখার সমস্যা হলে
কোনও ক্রিমের সঙ্গে দু’ফোঁটা জোজোবা অয়েল অথবা এক ফোঁটা নিরোলি অয়েল মিশিয়ে লাগাতে পারেন। বলিরেখা কমে যাবে।

চল্লিশোর্ধ্বদের জন্য কয়েকটি ফেশিয়াল
ক্লিনফিল্ম ফেশিয়াল: এটি জোজোবা, নিরোলি, স্যান্ডাল, আমন্ড প্রভৃতি এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে করা হয়। বয়স অনুপাতে দ্রুত বলিরেখা পড়লে এই ফেশিয়াল কাজে দেবে। অনেকের গলার কাছে, হাতের উপরিভাগ, চিবুক ইত্যাদির ত্বক বেশি মাত্রায় ফোলা লাগে। ঝুলেও যায়। তাঁরা এই ফেশিয়ালটি করাতে পারেন।
থার্মোহার্ব ফেশিয়াল: এটির সঙ্গে আমরা সকলেই অল্পবিস্তর পরিচিত। যে কোনও পার্লারের শোকেসে মিশরের মামির মতো একটি মুখ রাখা থাকে, আমরা সবাই দেখে কিছু ক্ষণ থমকে যাই। এটিই থার্মোহার্ব ফেশিয়াল। শুধু বয়স নয়, দূষণ থেকেও বলিরেখা দেখা দেয়। এই ফেশিয়াল ত্বককে টানটান করে, শুষ্কতা কমায়। যাঁদের ত্বক শুষ্ক ও বলিরেখার সমস্যা দ্রুত দেখা দিয়েছে, বাড়িতে বসে থাকারও উপায় নেই, তাঁদের জন্য এই ফেশিয়ালটি সবার সেরা।

সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.