|
|
|
|
বছরে ৩৬৫টা উৎসবের দিন |
ঝাঁপান মেলা |
আর এক দেশের লোক-সংস্কৃতি নিয়ে পশ্চিম তো একটা সরগরম মেলা বসিয়ে দিল। কিন্তু আমরা হচ্ছি ভানুমতীর দেশের লোক। এখানকার গ্রামে-গঞ্জের হাটে বাজারেও ও রকম ম্যাজিক হাজারে হাজারে ছড়িয়ে আছে। শুধু খবরটাই ঠিকঠাক ছড়ায় না, এই যা কষ্ট। একখানা তো ক’দিনের মধ্যেই আসছে। ঝাঁপান মেলা। নামেই ব্যাপারটির তাক লাগানো গুণপনাটি ভাল রকম চমক মারছে। একদম এই আমাদের পশ্চিমবঙ্গেরই বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের পার্বণ। ঝাঁপানের রকস্টার কারা জানেন? আশপাশের গুণধর বিষধর সাপ পরিবার।
একটু পাথর হলেন নাকি? হ্যাঁ, তা বিপদ তো একটু আছেই। পরবটা হয় শ্রাবণসংক্রান্তির দিন। পাঁজি বা বাংলা ক্যালেন্ডারে দেখবেন, ওটি মনসা পুজোর পুণ্য তিথি। পুরাণ বলে, শিবঠাকুরের এই মানসকন্যেটি বাপের ধাতটি পেয়েছেন। একটু খেপিয়েছ কি বাণ ছুঁড়বেন, সাপ লেলিয়ে দেবেন। তিনি যে তামাম সাপ-দুনিয়ার লোকাল গার্জেন। তাই তাঁকে তুষ্ট করতে এই দিনে ঘটা করে মন্দিরে মন্দিরে পুজো হয়। এই দিন সাপেদের ধরা, তাদের মারা চলে না। পাপ হয়। সাপুড়েরা চ্যালাচামুণ্ডা নিয়ে এসে মন্দিরের বাইরে, একটা স্টেজ-এ চড়ে বসে। তার পর সাপ-খেলা দেখায়। সেটাই ঝাঁপান-পর্ব।
রূপকথার আমল থেকে শুনছি, সাপদের অসীম ক্ষমতা। মাথায় দুর্মূল্য মণি নিয়ে ঘোরে। দারুণ স্মৃতিধর। ছোটবেলায় যে মেয়ে দুধ-কলা খাইয়েছিল, আজীবন তাকে আর তার স্বামী-বয়ফ্রেন্ডদের শত্রু থেকে রক্ষা করে। ইচ্ছাধারী সাপ-সাপিনিরা তো আরও শক্তিশালী। মর্জি হলেই মানুষের রূপ ধরে। সাপবাঁশির সেই বিখ্যাত ট্যাঁড্যাঁড্যাঁড্যাঁ সুর শুনলে নিমেষে শ্রীদেবী সেজে নাচ-গানও করে। ঝাঁপান-এ সেই ইচ্ছেধররা খেলা দেখাতে আসে কিনা জানা যায় না। তবে বেদেদের দাবি, যারা আসে সবার বিষদাঁত মোটেও খোবলানো হয়নি। অনেকেরই জিভের ডগায় লকলক করছে প্রকৃত পানীয়। হতে পারে। গত শতকে এ পরবে নাকি আরও জাঁকজমক হত। খেলাচ্ছলে সাপ-রাজকন্যাটি কত বার হঠাৎ বিষ-চুমু ছুঁড়েছে, জাহাঁবাজ সাপুড়িয়া-সর্দার চোখ উল্টে পরপারে।
এ সবের জন্যই নাকি ঝাঁপান-এর সুদিন গিয়েছে। এখন সাপবাজি নিয়ে ভয়ানক কড়াকড়ি। বেশির ভাগ জায়গায় ঝাঁপান-এর ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেছে। তবু, এখনও হয় বাঁকুড়ার মানতাকালী গ্রামটায়। সংক্রান্তির দিন বাঁশি বাজিয়ে সাপ-খেলার পর, গরুর গাড়িতে সাপের ঝাঁপি বসিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাজনা বাজিয়ে গ্রাম ঘোরা হয়। চার পাশে ভিড় জমে যায়।
কিচ্ছু খোঁজ রাখি না আমরা। শ্রাবণের শেষ বৃষ্টি থেকে বাঁচতে তখন হয়তো পার্ক স্ট্রিটের রেস্তরাঁয় সেঁধিয়ে গেছি। কৃত্রিম আঁধারিতে অ্যাডভেঞ্চার খুঁজছি। আর তখনই, মাত্র কয়েক জেলার দূরত্বে, ভিজে মাটির ওপর ফণা দুলিয়ে নাচছে ঠান্ডা ঠান্ডা কিলবিলে ভয়, জ্যান্ত রোমাঞ্চ! ট্যাঁড্যাঁড্যাঁড্যাঁ ট্যাঁড্যাঁড্যাঁড্যা... |
|
|
|
|
|