বছরে ৩৬৫টা উৎসবের দিন
আফ্রিকান ড্রাম ভিলেজ
ফ্রিকা-আ! শুনলেই গা শিরশির। পুরোটায় রাক্ষুসে সব গাছ আঁধার করে রেখেছে। তার মধ্যে দামাল হাতি, তাগড়াই সব বাঘ-সিংহ ছাড়া ঘোরে। ইয়া চওড়া সব নদী। একটু এগিয়েছ কি ঘোলা জলে কুমিরের শয়তানি চোখ ভেসে উঠবে। উফফ্, ভাবলেই অ্যাডভেঞ্চারের বৃষ্টি আপাদমস্তক ভিজিয়ে দেয়। ওর মধ্যেই নাকি কোথায় কঙ্কাল সৈন্যরা যখের ধন আগলাচ্ছে, আর দূরপাহাড় থেকে মাদলের বিচিত্র বোল উড়ে আসছে। দ্রিমদ্রিমদিড়ামদিড়াম। আদিম সুরের জাদুতে হাত-পা আপনা হতে ভেসে যায় ও দিকটায়। জংলিদের গ্রাম। ওদের ড্রামের বাজনায় তখন আকাশ-বাতাস আর পাঁচ ইন্দ্রিয় ভারী হয়ে গেছে। বশ হওয়ার মুহূর্তে অল্প অল্প হুঁশ ফিরল। চার পাশেতে কারা জানি অদ্ভুত ভঙ্গিতে নেচে চলেছে। কষ্টিপাথর শরীর, লালচে চোখ, বেণী পাকানো চুল, আর তাতে কত পালক গোঁজা।
এখানেই স্ট্যাচু। জ্ঞানটা আর হারাবেন না প্লিজ। সত্যি না? সেই কোন কাল থেকে, উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগ থেকেই মনে হয়, আফ্রিকাজ্বরে ভুগছি আমরা। ওদের দেশ, ওদের মানুষ, ওদের জীবন আর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সুর-তাল-ছন্দে, তথাকথিত ‘অসভ্য’ সংস্কৃতির নেশায় বুঁদ আমরা। ওখানে যেতে চাইছি, ওদের নিয়ে ছবি আঁকছি, গল্প লিখছি আর সিনেমা বানাচ্ছি। আফ্রিকার অদ্ভুতুড়ে রসদ ফুরোয় না, আমাদেরও রোমান্স মরে না। স্কটল্যান্ডের মানুষরা তো আর থাকতেই পারছেন না। এক টুকরো আফ্রিকাই এখন নিজেদের দেশে কিডন্যাপ করে এনেছেন। স্কটল্যান্ডের অ্যাঙ্গাস প্রদেশের গ্লেনিইলা গ্রামে শুরু করেছেন আফ্রিকা-উৎসব। নাম আফ্রিকান ড্রাম ভিলেজ। ৩১ জুলাই থেকে ৫ অগস্ট পাঁচ দিন ধরে চলে। ওই সময়টুকু গোটা জায়গাটা থেকে একুশ শতককে বিদেয় করে দেওয়া হয়। বহু কষ্ট করে সেইখানে বসিয়ে দেওয়া হয় কঙ্গো, উগান্ডা, ঘানা। অবিকল। ও রকম হলদে-সবুজ গাছ, তার মধ্যিখানে শুকনো পাতা ছাওয়া ঘর, কাঠকুটোর আগুন, ঝলসাতে থাকা শিকার, আদিবাসী সাজের মানুষ। এই সব করে কোনও ক্রমে আফ্রিকান শরীরটা তো বানানো গেল। এ বার সেখানে আঁধার মহাদেশের আত্মাটাকে নামানো যাবে কী করে? সঙ্গীত যন্ত্রসঙ্গীত।
আফ্রিকান ঘরানার সেরা সেরা সোলো ড্রামার, গিটারিস্ট আর ফোক-মিউজিক ব্যান্ডরা অনেক আগে থাকতে গ্লেনিইলা চলে আসেন। আর শুধু ড্রাম আর গিটারের বাদ্যি নয়, সঙ্গে নাচ, গান, নাটক, গল্প শোনানো সব কিছু থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার শিল্পীরা শেখান কাদামাটিতে গামবুট পরে নাচতে। রোজ একটা হল-এ বা খোলা আকাশের নীচে পারফরম্যান্স হয়, সামনে এক দঙ্গল শ্রোতা। কখনও গানের জাদুতে চুপ মেরে শুনছেন, কখনও তালের ঝাঁকুনিতে ফুঁসে উঠে হইহই বাধাচ্ছেন। নেচে মাতাচ্ছেন। আবার কোথাও বসেছে আফ্রিকার ঢোল-করতাল-ঝাঁপতাল, নানা দেশি বাদ্যযন্ত্র, আশ্চর্য সব গায়কী নিয়ে কর্মশালা। ব-এ কাঠি ঘ-এ কাঠি বাঘা বাঘা সব বাজিয়ে ড্রামে কাঠি মারতে শুরু করেছে। তাই সঙ্গীতের এ বি সি ডি থেকে মাস্টার্স-পিএইচ ডি ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনা হচ্ছে, সঙ্গে প্রচুর আড্ডা। এমন একটা বচ্ছরকার জ্ঞানীগুণীর জমায়েত, সেখানে তো চলতে ফিরতে সমমনস্ক মিলবে। হট চকলেট বা কফির পাত্রটি মাঝখানে বসিয়ে দিলে তাদের মধ্যে আলাপও জমবে। দেশের সীমানা টপকে কত নতুন কথা জানা হবে। আর বুকের মধ্যে পুষে রাখা কথা, গান আর সুর আরও পরিপুষ্ট হয়ে উঠবে। এমন একটি সৃষ্টি-মেলার খবর পেলে গানপাগলরা সব দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে আসবে না?
এল তো! এই তো সে দিন, ১৯৯৮ সালে আফ্রিকানদের বাজনা নিয়ে ছোট্ট একটা ওয়ার্কশপ করেছিলেন স্টিভ হেডেন। সেটাই ফুলেফেঁপে আজ আফ্রিকান ড্রাম ভিলেজ। কত ড্রামিং গ্রুপ-এর জন্ম দিয়েছে, এখনও দিয়ে চলেছে এই মেলা! আজ এর চার ধারে বিবিসি’রা ক্যামেরা তাক করে বসে থাকে। কত মানুষ মাসের পর মাস মাথা খুঁড়েও ইভেন্ট বা ওয়ার্কশপের টিকিট পায় না। গত বছর নাকি পাঁচ দিনে ওয়ার্কশপই হয়েছিল ৭৬টা। আর শেষ দিনে, হঠাৎ আকাশ ভাসিয়ে নামল বৃষ্টি। ব্যস! প্রকৃতির ফিনিশিং টাচ-এ স্কটল্যান্ডের ইচ্ছেপূরণ! আফ্রিকার আরণ্য সাজ কমপ্লিট!
এ বারেও সে সাজ শেষ লগ্নে। সেনেগাল, পশ্চিম আফ্রিকা, জিম্বাবোয়ে আফ্রিকার খানদানি গায়ক-বাজনাদারদের বায়না দেওয়া হয়ে গেছে। হুল্লোড় করতে আসবে বিখ্যাত আফ্রিকান ব্যান্ড গ্রাসরুটস সোল, কলসিবাদক (ঠিক পড়েছেন) শার্টওয়েল। আর এমন একটা জায়গায় কলকাতা থেকে কেউ-উ-উ-ই যাবেন না? সে কি? সঙ্গীত-আঙিনায় শহরটার রসিক-সমঝদার নামটাকে কে টিকিয়ে রাখবে তবে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.