|
|
|
|
বেড়াতে গিয়ে অদ্ভুত, কিম্ভূত, আশ্চর্য অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছেন কখনও? জানতে চেয়েছিলাম আমরা।
জবাবে এসেছে পাঠকদের অনেক অনেক অভিজ্ঞতার ঝাঁপি থেকে নিষ্ক্রান্ত রকমারি বিবরণ।
সেই সব উদ্ভট ভ্রমণকাহিনির বাছাই কয়েকটি। |
|
|
পাগল হাতি পটক দেগা... |
সৌরভ ভট্টাচার্য,
কাঁকুড়গাছি |
আশি’র শেষ শীত কাল, আমি তখন ক্লাস এইট, মা-বাবা-দাদা’র সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছি ওড়িশা। সারান্ডা জঙ্গলের ওই দিকটা। বরাজামদা, জোড়া আর বরবিল বলে তিনটে জায়গায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে থাকব। তার পর পুরী। আত্মীয় রয়েছেন, বাবার বন্ধুও, ওঁদের বাড়িতেই থাকা। চক্রধরপুর স্টেশনে নেমে গাড়ি করে চাইবাসা হয়ে বরাজামদা আসব। ট্রেন লেটের চোটে বিকেল গড়িয়ে রাত ছুঁইছুঁই। বিহার তখনও ঝাড়খন্ডে ভাগ হয়নি, কিন্তু শিবু সোরেনের বাহিনি বেশ তেতে আছে। যাক গে, গাড়ি চলতে লাগল দু’ধারে জঙ্গল সঙ্গে নিয়ে, আর আমি চললাম ঘুমে। হঠাৎ গাড়ির ক্যাঁচ। হল কী?
সামনে দেখি আরও সাত-আটটা গাড়ি থ’ মেরে দাঁড়িয়ে, আর কারা যেন প্রবল টিন পেটাচ্ছে ট্যাং ট্যাট্যাং ট্যাং ট্যাট্যাং। এর পর দেখি কিছু লোক মশাল নিয়ে সামনের দিকে ছুটে গেল। ড্রাইভার কোন্দা ভাঙল রহস্য। সামনে নাকি হাতির পাল রাস্তা আটকে। টিন পিটিয়ে, মশাল জ্বালিয়ে তাদেরই সরানো হচ্ছে। কিছু ক্ষণ পরই শুনলাম একে একে গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে। কিন্তু ও কী, সামনের গাড়িগুলো আমাদের দিকেই ঘুরে আসছে কেন? কোন্দাকে এক ড্রাইভার শুধু বলে চলে গেল, ভাগ জলদি, পাগল হাতি হ্যায়, পটক দেগা...
কোন্দা তখন প্রাণপণ গাড়ি ছোটাচ্ছে, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। জিপ-এর পেছনে বসে আমি আর দাদা ভয়ে পেছনে তাকাচ্ছিই না, যদি...বেড়ানো তখন লাটে উঠেছে, বাঁচলে হয়। দূর থেকে মাঝেমধ্যে ভেসে আসছে হইহই আর বেধড়ক টিন পেটানো। কোন্দা বারে বারে অভয় দিচ্ছিল, এই সামনের ডান দিক এলেই একটা শর্টকাট পেয়ে যাব, কিন্তু সেই ডান দিক আসার আগেই গাড়ি আবার ক্যাঁচ। কী যেন একটা ব্রেকডাউন। অসাধারণ, হাতে কিছু ক্রিমক্র্যাকার আর দু’বোতল জল। এ বার কাটাও জঙ্গলে। মেরামত করে বেরোতে বেরোতে অন্তত ভোর। কোন্দা ব্যাপারটাকে আরও রোমহর্ষক করে বলল, জঙ্গলের এই অংশটি নাকি ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা’র আদিবাসী যোদ্ধাদের বিশেষ ঘাঁটি, এবং এখানেই ওঁরা এক সঙ্গে বসে তিরে বিষ লাগিয়ে সংগ্রামে বেরোন।
ভোর নাগাদ কোনও ক্রমে বরাজামদা যখন পৌঁছলাম, খেয়াল হল, গল্পটা একটা সিরিয়াস থ্রিলার হতে হতেও হল না। ভাগ্যিস। আর আমরা যে সত্যিই কিডন্যাপড্ হইনি, সেই খুশিতে রাতে রান্না হল পাঁঠার মাংস আর গরম ভাত। ব্যস।
|
তালা মেরে ঘর-বন্দি!
নির্ঘাত উগ্রপন্থী |
বেলা দে,
জলপাইগুড়ি |
২০১০
সালের ঘটনা। কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছি। আমি, মেয়ে-জামাই ও চার বছরের নাতি। শ্রীনগরের এক বিলাসবহুল হোটেলে উঠলাম। প্রতিদিন আটটার সময় গাড়ি হোটেলে হাজির হয়ে যেত। সে দিনও গাড়ি নিতে এসেছে। আমরা স্নান, প্রাতরাশ সেরে, বেরোবার জন্য তৈরি হচ্ছি। এমন সময় সজোরে কেউ দরজাটা বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দিল। ঘটনার আকস্মিকতায় ঘরের ভিতরে আমরা ভয়ে আতঙ্কে শিউরে উঠেছি। কান খাড়া শুনলাম, সব ঘরেই সশব্দে তালা লাগানোর আওয়াজ পাওয়া গেল। আন্দাজ করলাম, নির্ঘাত আতঙ্কবাদী। ভয়ে ইষ্টনাম জপতে শুরু করে দিলাম। মেয়ে তো প্রায় পিছনের জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিতে উদ্যত। জামাই বলল, ‘খেপেছ? নীচে খাদ। বেঁচে ফিরবে না।’ বাচ্চাটা ভয়ে কাঁদছে। সবাই মিলে আপ্রাণ দরজা ধাক্কাতে শুরু করলাম। মেয়ে ‘হেল্প হেল্প’ বলে চেঁচাতে লাগল। অন্যান্য ঘর থেকেও গোলমালের আওয়াজ পাওয়া গেল। এ ভাবে প্রায় দশ মিনিট কেটে গেল। করিডরে হঠাৎ বুটের আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে হল, কেউ এক জন তালা খুলছে। ভয়ে সিঁটিয়ে গেলাম। এ বার তা হলে আমাদের মেরে ফেলবে বা ধরে নিয়ে যাবে। দরজা খোলার পর দেখি ম্যানেজার দাঁড়িয়ে। প্রথমেই ক্ষমা চাইলেন। তাঁর মুখে সব শুনে আমরা তো হতবাক। হোটেলের সিকিয়োরিটি গার্ড একটু খ্যাপাটে ধরনের লোক। খেতে খুব ভালবাসে। আগের রাতে মনের মতো খাবার পায়নি। মাছ-মাংস কিছুই ছিল না। তাই রেগে গিয়ে এই কাণ্ড বাঁধিয়েছে। ম্যানেজার সকল অতিথিদের হোটেল থেকে চলে যেতে অনুরোধ করলেন। কারণ, ও বাইরে বেরিয়েছে, ফিরে এসে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটাতে পারে। বিশ্বাস নেই, ওর হাতে একটা বন্দুকও রয়েছে। এই শুনে তড়িঘড়ি হোটেলের বিল মিটিয়ে তল্পিতল্পা সহ কেটে পড়লাম। শ্রীনগর থেকে নির্ধারিত দিনের আগেই পহেলগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কত বার বেড়াতে গেছি, কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম!
|
সারা রাত কারা যেন |
সৌম্য মিত্র,
শিবপুর, হাওড়া |
গরমের ছুটিতে বুবুনের সঙ্গে বর্ধমানের দেবীপুরে, ওদের দেশের বাড়িতে গেলাম। সেখানে থাকতেন বুবুনের ঠাকুমা আর কয়েক জন জ্ঞাতি। একটা দোতলা মাটির বাড়ির এক তলায় আমাদের শোওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। প্রত্যেক বার শোওয়ার আগে, ঠাকুরমার নির্দেশে বিছানা ভাল করে ঝাড়তে হত। আবার ইলেকট্রিসিটিও ছিল না। এ ভাবেই দু’তিন রাত কাটল। বুবুন বলল, ‘আগের বার এ ঘরে নাকি ভারী ইঁদুরের উৎপাত ছিল। এ বার সেটা নেই দেখছি।’ ভাল কথা। কিন্তু মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে। কে যেন চলে ফিরে বেড়াচ্ছে। টর্চ নিয়ে উঠলাম। ঘর ফাঁকা। জানলার কাছে, কোনাতে কেমন হিসহিস শব্দ। টর্চ ফেলে কাউকে দেখতে পেলাম না। সে রাতে আর ঘুম এল না।
পর দিন সব শুনে ঠাকুমার মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। প্রথমে আমাদের ওই ঘর থেকে সরালেন। ঘর বন্ধ করে দিলেন। দু’দিন বাদে এক সাপুড়ে এল। দেওয়ালে কান লাগিয়ে কী যেন বোঝার চেষ্টা করল। পুরো বাড়ি ঘুরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখল। পরের রবিবার সে আরও চার জনকে নিয়ে আবার এল। বড় বড় লোহার শিক, লাল পুঁটুলি, শেকড়, এ সব নিয়ে কাজ শুরু করল। দেখি, আমরা যে ঘরে থাকতাম, তার পিছনে একটা গর্ত। ওরা উল্টো দিক থেকে গর্তটা খুঁড়তে শুরু করল। গর্তটা একটু বড় হতেই পরিষ্কার ফোঁস ফোঁস শব্দ শোনা গেল। টেনে বার করা হল এক চারফুটিয়া কেউটেকে। তার পর গোটা ঘর জুড়ে কী খোঁড়াখুঁড়ি! ধরা পড়ল আরও দু’জন। কালো কুচকুচে। তাদের ফণার কী বাহার! তিনটে গর্ত থেকে অন্তত ষাট-সত্তরটা ডিম বের হল।
ইঁদুররা গর্ত করে বাসা বানিয়েছিল, আর মাটির দেওয়াল ফুঁড়ে সুড়ঙ্গ। সাপবাবাজিরা ইঁদুরদের হটিয়ে ওই গর্তগুলোতে আস্তানা নেয়। ওদের তৈরি সুড়ঙ্গ দিয়ে যাতায়াত করত। সেই জন্যই মনে হত গোটা ঘরে কে যাতায়াত করছে। তিনটে কোনার গর্তের সামনে দাঁড়ালেই ওরা হিসহিস শব্দ করত। ভাবা যায়, টানা তিন দিন আমরা সাপেদের সঙ্গে এক ঘরে কাটিয়েছি! ভাগ্যিস, ইঁদুররা ঘরের মধ্যে কোনও ফুটো করতে পারেনি। তা হলে আমাদেরও লখিন্দরের দশাই হত! ছুটির ফাঁদে পড়া আর কাকে বলে!
|
চালাও অ্যাম্বুলেন্স |
গৌতম দত্ত,
উল্টোডাঙা, কলকাতা |
শেয়ার
জিপে বারোকোট পৌঁছলাম, সেখান থেকে জানকীচটি হয়ে যমুনোত্রী যাব। আধ কিলোমিটার গিয়েও জানকীচটির কোনও গাড়ি পেলাম না। স্থানীয় এক গাড়োয়ালবাসী বলল, ‘আপকো কাঁহা যানা হ্যায়?’ বললাম, ‘জানকীচটি’। ‘কিতনে সওয়ারি হ্যায়?’ বললাম, ‘তিন, অউর এক ছোটা বাচ্চা।’ সে বলল, ‘আপ উয়ো অ্যাম্বুলেন্সমে বইঠ কর চলে যাইয়ে।’ অগত্যা! স্ট্রেচার রেলের ওপর লাগেজ রেখে, স্ট্রেচারের ওপরই সবাই বসে পড়লাম। একটু পরেই সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলতে শুরু করল। আর রেসকিউ অ্যাম্বুলেন্স ভেবে সব গাড়িই পাশ দিয়ে জায়গা ছেড়ে দিল। রুগি না হয়েও অ্যাম্বুলেন্স চেপে, রাত আটটা নাগাদ জানকীচটি পৌঁছে গেলাম। কিন্তু কোনও বুকিং নেই! অ্যাম্বুলেন্সেই ছিল ফুটফুটে মেয়ে, সবিতা রানা। সে বলল,‘আঙ্কলজি, মেরে পাপাজিকা য়হাঁ এক মকান হ্যায়। আপলোগ ওয়হাঁ রাত গুজর সকতে হ্যাঁয়।’ চার দিকে প্রচণ্ড ঠান্ডা হাওয়া, থিকথিক করছে দর্শনার্থী, আর কী খুঁজব? রাজি হয়ে গেলাম। ভদ্রলোকের দোকানের পিছনে পাহাড়ি ধাপ বেয়ে যেখানে পৌঁছলাম, দেখে মনে হল ধরণী দ্বিধা হও। কালো পাথর সরিয়ে একটু সমতল করে, সামনে দু’টো কাঠের খুঁটিতে তার দিয়ে কালো পলিথিন বেঁধে সেটাকেই পিছনে ঢাল করে পাথরে বাঁধা। দু’পাশে পলিথিনের চাদর নামানো। একেবারে ফাঁকা। এর মধ্যেই সপরিবার রাত কাটালাম।
|
অভি হাম শুটিং দেখেগা |
শুভদীপ চট্টোপাধ্যায়,
চারু মার্কেট, কলকাতা ৩৩ |
সালটা
১৯৮২। গিয়েছিলাম অমরনাথ দর্শনে। ফেরার পথে চন্দনবারি বলে একটা জায়গায় অপেক্ষা করছি। পরিশ্রান্ত দেহে যখন সবাই জড়ো হলাম, তখন আর কারওই হাঁটার ক্ষমতা নেই। ভাগ্যবশত একটা জিপ পাওয়া গেল, আমাদের পহেলগাঁও পৌঁছে দেবে। ঠাসাঠাসি করে উঠে পড়লাম সবাই। উঠেই চিত্তির। ড্রাইভার পাহাড়ি রাস্তায় পাগলের মতো জোরে গাড়ি চালাচ্ছে। আবার পাহাড়ি শর্টকাটও নিচ্ছে। মনে ভাবলাম শেষে জিপ অ্যাক্সিডেন্ট-এ প্রাণ খোয়াতে হল! ড্রাইভারকে শত কাকুতিমিনতি করে কোনও লাভ হল না। সদ্য পাওয়া নতুন ঠাকুর বাবা অমরনাথকে ডাকতে থাকলাম। কিছু ক্ষণ পর দেখি, সে রাস্তার ধারে এক জায়গায় জিপটা দাঁড় করিয়ে দিল। শুটিং দেখবে। নীচে একটা ছোট্ট মতো কাঠের বাড়ি বানানো হয়েছে, একটা বেড়া আর একটা ঘোড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। ড্রাইভার বেশ ধমক দিয়ে বলল, অভি নেহি জায়েগা, অভি শুটিং দেখেগা, ধর্মেন্দর কা লড়কা আয়া হ্যায়। আমাদের তখন আর প্রাণশক্তি বিশেষ বাকি নেই, কিন্তু দেখতেই হল। নতুন এক জন নায়িকাও নাকি এসেছে, নাম অমৃতা সিংহ। আর যে সিনেমার শুটিং হচ্ছিল, তার নাম বেতাব। সেই আমার প্রথম শুটিং দেখা।
|
যেই না নামটা বলা |
সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়,
উত্তরপাড়া, হুগলি |
বাড়ি
থেকে অমরনাথ দর্শনে গেছি। পুণ্যের আশায় আমার গর্ভধারিণীও সঙ্গে সকলের সঙ্গে হেঁটে চলেছেন। কিন্তু পঞ্চতরণী পর্যন্ত গিয়ে পা টেনে ধরল। ফলে ঘোড়া নিতে বাধ্য হলেন। মাকে ঘোড়ায় উঠিয়ে আমরা অন্যদের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে লাগলাম। গুহার কাছে যখন পৌঁছেছি, ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু মা গেলেন কোথায়? শুনলাম, ঘোড়া অন্য পথে অনেক আগে গুহার কাছে পৌঁছে দেয়। কিন্তু আধ ঘণ্টা ঘুরেও কোনও হদিশ পেলাম না। অ্যানাউন্স করাব বলে লাইন দিলাম। হঠাৎ দেখি সামনের তাঁবুতে বসে পা ছড়িয়ে কাঁদছেন আমারই মাতৃদেবী। পাশে এক জওয়ান। তিনি বেশ কয়েক জন ফকির আর পাহাড়ি লোকজনকে কী সব বোঝাচ্ছেন। আমাদের দেখে তিনি আরও জোরে কাঁদতে শুরু করলেন। বললেন, ‘আমার নামটার জন্যই এত কিছু। কেন যে ওরা আমার নাম অ্যানাউন্স করতে গেল?’ আমরা তো কিছুই বুঝছি না। মিলিটারি ভদ্রলোক ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে জানালেন, ‘আসলে ওনার নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (তখন সম্ভবত মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী রেলমন্ত্রী ছিলেন) হওয়ার জন্য এই বিপত্তি। দলে দলে এসে এরা ‘কম্বল দিজিয়ে মাই’, ‘কুছ সুরাহা কিজিয়ে দিদি’ বলে আব্দার জানাতে থাকে। ইতিমধ্যে মা একটু বল পেয়েছেন। বললেন, “ওদের যত বোঝাই আমি সেই মমতা নই, মমতা দেবী কি একা আসবেন নাকি? ওনার কি আমার মতো বিয়ে হয়েছে? ওরা আমার কথা শুনতেও চায় না, বুঝতেও পারে না। একে তো তোদের খুঁজে পাচ্ছি না, তার ওপর এরাও ছাড়ছে না। উঃ! কী ভাগ্যি, এই সৈনিকটি এসে পড়েছে!” মাকে সামলাব কী, আমাদেরই হাসতে হাসতে দম আটকে যাওয়ার জোগাড়।
|
ঘুমন্ত যাত্রীদের বকাবকি |
শ্রীমা সেন মুখোপাধ্যায়,
সোনারপুর, কলকাতা |
এক আজব রেল সফরের গপ্পো! গত ষষ্ঠীর রাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসে সওয়ার হয়েছিলাম। অতিথিবৎসল দেশটির হোটেলকর্মীর প্রথম সংলাপটা ছিল এই রকম ‘পাগলে আইসে কলকাতার পুজো ছাইড়্যা!’ গাড়ির সময় ছিল রাত এগারোটা। প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা। আসলে ঢাকার সদরঘাট হাওড়ার জলজ সংস্করণ। রেলে খুব কম লোক চড়ে। আমাদের স্নিগ্ধ শ্রেণীর (বাতানুকূল চেয়ার) টিকিট। এ ছাড়া শোভন, সুলভ, দ্বিতীয় শ্রেণীও আছে। টিকিটে বগি সংখ্যা ছিল ‘ঙ’। আদর্শলিপির অভাব অনুভব করলাম। ছাগল নিয়ে এক ব্যস্ত যাত্রী উঠল, সেও সঙ্গে যাবে। সহযাত্রী লজ্জিত মুখে জানায়, ‘আপনাগো দ্যাশে কত সুবিধা!’
রাতের ঘুম ভেঙে গেল এক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে। হঠাৎই তাকিয়ে দেখলাম, পাজামা পাঞ্জাবি পরা মধ্যবয়স্ক সৌম্যদর্শন এক মানুষ বগির দরজা ঠেলে ভেতরে এসে ঘুমন্ত যাত্রীদের বকাবকি করছেন। তারা নমাজ না পড়ে ঘুমিয়ে, নরকের পথ প্রশস্ত করছে। সহযাত্রীদের ইশারায় ঘুমের ভান করলাম। জানা গেল, ইনিই গার্ড সাহেব। শেষ বগি থেকে রোজ সবাইকে নমাজের আহ্বান জানিয়ে ড্রাইভারের কাছে যান। ট্রেন থেমে আছে ফেণী স্টেশনে। গার্ড-ড্রাইভারের এক সঙ্গে ফজরের নমাজ পড়া শেষ হলে তবেই ট্রেন ছাড়বে। ভোরের আলো ফুটছে। চট্টগ্রামে গাড়ি থামতে, দুগ্গা দুগ্গা বলে নেমে পড়লাম। সে দিন ছিল সপ্তমী।
|
ছবি: দেবাশীষ দেব |
|
|
|
|
|