|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
সুরাহা কবে |
ভোগান্তির জলপান |
দেবাশিস দাস |
পালা করে রাত জাগেন পরিবারের এক এক জন। ভোরে পানীয় জল পেতে এ ছাড়া গতি নেই যে। লাইনে দাঁড়াতে দেরি হলে সে দিনটায় আর নিখরচায় তৃষ্ণার জল পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।
প্রত্যন্ত গ্রাম নয়, এ ছবি খাস কলকাতা শহরতলির ধাপা থেকে ঢাকুরিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার অনেকাংশে। গভীর নলকূপ বসিয়ে, সরবরাহের গাড়ি এনেও পানীয় জলের চাহিদার মোকাবিলা করা যাচ্ছে না এই সব অঞ্চলে। আগুন দামে বিকোচ্ছে জলের জেরিক্যান। মেয়র বলছেন, ধাপা জলপ্রকল্পের কাজ শেষ হলেই এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু সে প্রকল্পের কাজ শেষ কবে হবে, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি কারও কাছেই।
ধাপা, পঞ্চান্নগ্রাম, ভিআইপি নগর, চৌবাগা, তিলজলা, তপসিয়া, পিকনিক গার্ডেন, নস্করহাট, কসবা, ঢাকুরিয়া স্টেশন রোড, মহারাজা ঠাকুর রোড, রামকৃষ্ণ মিশন লেন, শরৎ ঘোষ গার্ডেন রোড, আদর্শ নগর, ঝিল রোড এবং শহিদ নগর, নিউল্যান্ড, পালবাজার এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, আজও এই সব এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের কোনও পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেই। এলাকার কয়েক লক্ষ বাসিন্দাকে তাই নির্ভর করতে হয় গভীর নলকূপ, পুরসভার জল সরবরাহের গাড়ি আর কিছু ট্যাপকলের উপরে। |
|
ঢাকুরিয়া স্টেশন রোড, মহারাজা ঠাকুর রোড, রামকৃষ্ণ মিশন লেন, শরৎ ঘোষ গার্ডেন রোড, আদর্শনগর, ঝিল রোড এবং শহিদ নগর, নিউল্যান্ড এলাকায় এখনও গার্ডেনরিচের জলও পৌঁছয়নি। ধাপা থেকে ঢাকুরিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে অনেক জায়গাতেই বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনেক জায়গায় গভীর নলকূপ বসিয়েও লাভ হচ্ছে না। কারণ, বিভিন্ন জায়গায় গভীর নলকূপ থেকে যে জল বেরোয়, তা-ও পানের অযোগ্য। ট্যাপকলে জল আসে অনিয়মিত। এলাকায় জলের চাপও খুব কম। অগত্যা পানীয় জল সংগ্রহের জন্য এই বিস্তীর্ণ এলাকার অনেক জায়গাতেই শেষরাত থেকে বাসিন্দারা জলের জন্য লাইন দেন।
এলাকাবাসীরা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি এক এক সময়ে এমন হয় যে, বেশি পয়সা দিয়ে জল কিনে খেতে হয়। পানীয় জল নিতে গিয়ে বচসা থেকে হাতাহাতি এলাকায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সমর কয়ালের কথায়: “এই বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের অভাব দীর্ঘ দিনের। সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।”
এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, পরিস্থিতি সামাল দিতে জায়গায় জায়গায় জলের ট্যাঙ্ক বসিয়েছে পুরসভা। সুনীলনগর, তপসিয়া, তিলজলা, কসবা, চৌবাগা অঞ্চলে বাসিন্দারা সকাল থেকে বালতি নিয়ে হাপিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে, কখন পুরসভার পানীয় জলের গাড়ি আসবে। মোটরবাইক বা সাইকেলে এক পাড়া থেকে আর এক পাড়ায় জল আনতে ছুটছেন অনেকেই। জেরিক্যান ভর্তি করে জল বিক্রি করা হচ্ছে। বাসিন্দারা সেই জলের জেরিক্যান ছয় থেকে আট টাকা দরে কিনছেন। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন চৌধুরী বলেন, “যে জল এলাকায় সহজে পাওয়া যায়, তা পানের অযোগ্য। এমনকী, সেই জল দিয়ে জামাকাপড় কাচলেও সে সবে লালচে দাগ পড়ে যায়।” |
|
বিস্তীর্ণ এই এলাকা কলকাতা পুরসভার ৭, ১০ ও ১২ নম্বর বরোর অন্তর্গত। পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার জন্য বিস্তীর্ণ এলাকার কোথাও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে, কোথাও বা পুরসভার বরো অফিস ঘেরাও করা হয়েছে। তবুও সমস্যা মেটাতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের বক্তব্য, পানীয় জলের বিষয়টি এই সব এলাকায় চিরদিনই অবহেলিত। সমস্যার কথা জানিয়েও কোনও লাভ হয় না।
সমস্যা মিটবে কবে? সদুত্তর মিলছে না পুর প্রশাসনের কাছেও।
সাত নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন, তৃণমূলের সুস্মিতা ভট্টাচার্য যেমন বললেন, “এই সমস্যা নতুন নয়। অনেক দিনের পুরনো। এর মধ্যেই এলাকায় মিষ্টি জল সরবরাহের পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়েছে।” দশ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তৃণমূলের তপন দাশগুপ্তের কথায়: “ঢাকুরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার পানীয় জলের ব্যবস্থা এখনও ডিপ টিউবওয়েলের উপরে নির্ভরশীল। ওই এলাকায় বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের কাজ শেষ হলে পানীয় জলের চাহিদা আর থাকবে না।” বারো নম্বর বরোর চেয়ারম্যান দীপু দাসঠাকুর বলেন, “পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে। ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।” |
|
তাঁদেরও অভিযোগ, এই সব এলাকায় বারো মাসই পানীয় জলের সমস্যা থাকে। অন্য দিকে, ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিআইয়ের মধুছন্দা দেব বলেন, “গার্ডেনরিচ প্রকল্পের জলের লাইনের কাজ চলছে খুব ধীর গতিতে। অনেক এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে গিয়েছে। তাই কবে এই সমস্যার সমাধান হবে তা নিশ্চিত করে বলা খুব কঠিন।”
কসবার বিধায়ক তৃণমূলের জাভেদ খান অবশ্য দাবি করেন, ‘‘ধাপা জল প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। তপসিয়ার কাছে বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের কাজ চলছে জোরকদমে। এই দুই প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই সমস্যার সুরাহা হবে।” কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়: ‘‘ধাপা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই বিস্তীর্ণ এলাকায় আর পানীয় জলের সমস্যা থাকবে না।”
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|