মনোরঞ্জন...
গয়নার বাক্স খুলল শেষকালে
‘ইতি মৃণালিনী’র পর আবার ‘অ্যাকশন’ এবং ‘কাট’ বলতে প্রস্তুত হচ্ছেন অপর্ণা সেন। এবং এ বার তাঁকে ঘিরে থাকবে ভূতের দল।
এ ছবি নিয়ে বহু দিন ধরেই টালিগঞ্জে গুঞ্জন চলছে। প্রথম শটটাও এখনও নেওয়া হয়নি, কিন্তু ছবি নিয়ে জল্পনা এখনই তুঙ্গে। হাজার হোক, ছবিটা তো অপর্ণা সেন আজকে করবেন বলে ঠিক করেননি। বহু দিন ধরেই এ ছবি করার ইচ্ছে তাঁর। কিন্তু কোনও না কোনও ভাবে, ভূত কিংবা ভগবান যে কারণেই হোক, ছবিটা কিছুতেই শুরু করা যাচ্ছিল না।
আজ্ঞে হ্যা। ঠিকই ধরেছেন। ছবির নাম ‘গয়নার বাক্স’। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা সেই উপন্যাস, যা নিয়ে ছবি তৈরির অপেক্ষা এবার শেষ। ৬ অক্টোবর থেকে মুর্শিদাবাদে শুরু হবে ‘গয়নার বাক্স’র শ্যুটিং। প্রযোজনায় ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
“১৯৯৩-তে যখন প্রথম গল্পটা পড়ি, তখনই মনে হয়েছিল এটা নিয়ে ছবি বানাব। ক’বছর আগে মণি (মহেন্দ্র সোনি) আর শ্রীকান্তকে (মোহতা) আমি চিত্রনাট্যটা পড়ে শোনাই। সে সময় ওদের সঙ্গে আমি ‘ইতি মৃণালিনী’ করছিলাম। ওদের দু’জনেরই পছন্দ হয়েছিল স্ক্রিপ্টটা। সেই কবেকার ইচ্ছে-- এত দিনে ছবিটা শুরু করতে পারছি। সত্যি বলতে কী, এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না যে ‘গয়নার বাক্স’ শুরু হতে চলেছে আর দু’মাসের মধ্যে। গল্পটা আমার এত প্রিয়!” অপর্ণার গলায় পরিষ্কার স্বস্তির সুর।
গল্পটা কেন এত পছন্দ ‘৩৬, চৌরঙ্গী লেন’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার’-এর পরিচালকের? “কারণ গল্পটা মেয়েদের পরিবর্তন নিয়ে। অথচ তার কেন্দ্রে রয়েছে একটা গয়নার বাক্সযেটার কোনও পরিবর্তন নেই। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, পুরো গল্পটাই বলা কমেডির মোড়কে আর সবাই সেখানে অশরীরী,” বলছেন পরিচালক।
কিন্তু হঠাৎ ভূত নিয়ে সিনেমা করতে এত উৎসাহিত হয়ে পড়লেন কেন অপর্ণা সেন? কেনই বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এল ভেঙ্কটেশ ফিল্মস? তার কারণ কি ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ নামক একটি ছবির রমরমিয়ে বক্স অফিসে ব্যবসা?
“শুনুন, আমি ওই ভাবে, এত সব ভেবে ছবি করি না। আমি আমার পছন্দের ছবি বানাই,” বলছেন অপর্ণা। “যখন মণি আর শ্রীকান্তকে আমি স্ক্রিপ্টটা পড়ে শোনাই, সে সময়ে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর কথাই কেউ ভাবেননি।”
তা হলে এত দিন দেরি কেন হল ছবিটার ফ্লোরে যাওয়া নিশ্চিত করতে?
“ছবির গল্পের সঙ্গে খাপ খায়, এমন একটা বাড়ি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না,” বলছেন অপর্ণা। “তারপর মুর্শিদাবাদে একটা বাড়ির খোঁজ পাওয়া গেল।” কিন্তু সে বাড়িতেও এত দিন শ্যুটিং করা যায়নি। কারণ প্রচুর মামলা-মকদ্দমা চলছিল বাড়িটাকে নিয়ে। “শেষে আরও দু’-তিনটে বাড়ির খোঁজ পাওয়া গেল, যেখানে শ্যুটিং করা যাবে,” জানাচ্ছেন অপর্ণা।
কিন্তু শুধু লোকেশন পছন্দ নয়। ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের খবর ‘গয়নার বাক্স’ এত দিন আটকে থাকার অন্যতম কারণ হল তার বাজেট।
“হ্যাঁ, ‘গয়নার বাক্স’ তৈরি করতে খরচ অনেক। তার অন্যতম কারণ, এটা একটা পিরিয়ড ছবি। এ ধরনের ছবি ঠিকঠাক করতে গেলে সেই যুগটাকে ধরতে হয়। স্বাভাবিক ভাবেই বাজেট অনেকটা বেড়ে যায়,” জানাচ্ছেন অন্যতম প্রযোজক ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মহেন্দ্র সোনি। “কিন্তু এখন বাংলা ছবির বাজার অনেকটাই বেড়ে গেছে। সুতরাং ‘গয়নার বাক্স’র মতো ছবি করার এটাই উপযুক্ত সময়,” তাঁর মত।
ছবি তো হচ্ছে। কিন্তু অপর্ণা সেনের ছবি মানেই অন্য রকম কাস্টিং। যত বার ছবি করেছেন, ইন্ডাস্ট্রিতে জল্পনা শুরু হয়ে গেছে তাঁর ছবির কাস্টিং নিয়ে। কোনও না কোনও ভাবে, কোথাও না কোথাও তাতে একটা চমক অপেক্ষা করে থাকেই। এবং এ বারও তার অন্যথা হচ্ছে না।
“‘গয়নার বাক্স’ আসলে তিন মহিলার গল্প। তো সেই কারণে পিসিমার চরিত্রের জন্য মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়কে ভেবেছি আমরা। আর আছে কঙ্কণা। আমি জানি না কোকো ম্যানেজ করতে পারবে কি না। ওর ছেলে তো ভীষণই ছোট। তবে আশা করছি ও কাজটা করবে,” বলছেন পরিচালক।
আর তৃতীয় জন? সেখানেই তো চমক।
“তিন নম্বর মেয়েটির জন্য আমি শ্রাবন্তীকে নেব বলে ঠিকই করে ফেলেছি,” বলছেন অপর্ণা। অপর্ণা সেনের ছবিতে কঙ্কণার অভিনয় করাটা নতুন কিছু নয়। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ও ‘দ্য জাপানিজ ওয়াইফ’ ছবিতে কাজ করেছেন অপর্ণার সঙ্গে। কিন্তু শ্রাবন্তী? আদ্যন্ত কমার্শিয়াল ছবি করে আসা এমন অভিনেত্রীকে অপর্ণা হঠাৎ বাছলেন কেন?
“যদি গল্পটা পড়েন, তা হলে বুঝবেন শ্রাবন্তীকে যে চরিত্রটার জন্য ভেবেছি, সবাই মনে করে পিসিমা ফিরে এসেছেন সেই চরিত্রটার মধ্যে। এ বার পিসিমা করছেন মৌসুমী। শ্রাবন্তী এমনিতে তো খুবই সুন্দরী। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা মৌসুমী আর শ্রাবন্তী, দু’জনেরই গজ-দাঁত আছে। তো পুনর্জন্মের গল্পটা এসট্যাবলিশ করতে এ রকম কিছু খুব কাজে আসবে,” বলছেন অপর্ণা।
খবরটা শুনে শ্রাবন্তীও যারপরনাই উত্তেজিত। অপর্ণা সেনের সঙ্গে ছবি করাটা হয়তো তাঁর কেরিয়ারের মোড়ই ঘুরিয়ে দিতে পারে। “আমি তো সুপার-এক্সাইটেড,” বলছেন শ্রাবন্তী। “এখনও বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আমি অপর্ণা সেনের সঙ্গে কাজ করব।
এটা আমার কেরিয়ারে অন্যতম বড় ব্যাপার তো বটেই।”
কঙ্কণা মৌসুমী
শ্রাবন্তী সেখানেই থামছেন না। বলছেন কী ভাবে কোনও ফিল্মি পার্টিতে তিনি দূর থেকে দেখেন অপর্ণা সেনকে। “আজও রিনাদি কোনও পার্টিতে ঢুকলে এগিয়ে গিয়ে কথা বলব কী! স্রেফ তাকিয়েই থাকি। ওঁর প্রেজেন্সটাই এতটা মারাত্মক,” শ্রাবন্তীর অকপট স্বীকারোক্তি।
এত দিন দেব-জিৎ-এর সঙ্গে কাজ করে আসা নায়িকার আনন্দের আরও কারণ আছে। “এই প্রথম কঙ্কণাদি’র সঙ্গে একই ছবিতে কাজ করব। ‘পেজ থ্রি’ আর অন্যান্য ছবিতে ওঁর অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ। এটা প্রায় স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ঘটনা,” নায়িকার মত।
কিন্তু বরাবর কমার্শিয়াল ছবি করে আসা শ্রাবন্তী তো কখনও অন্য ধারার ছবিতে কাজই করেননি? তা হলে?
পরিচালক অবশ্য সে সব কথা উড়িয়েই দিচ্ছেন। “কমার্শিয়াল ছবির অভিনেতা না নন-কমার্শিয়াল ছবির অভিনেতাএ ভাবে আমি দেখিই না বিষয়টা। আমার কাছে চরিত্রটাই বড়, এবং শ্রাবন্তী ওই চরিত্রে একেবারে সঠিক পছন্দ,” অপর্ণার সাফ উত্তর।
ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে আছেন সমদর্শী আর কৌশিক রায়। “আর স্বামীর চরিত্রের জন্য আমি একজন অসাধারণ অভিনেতাকে বেছেছি। তাঁর নাম শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়,” জনাচ্ছেন অপর্ণা।
ক্যামেরায় থাকছেন শমীক হালদার। শিল্প নির্দেশনা দিচ্ছেন তন্ময় চক্রবর্তী আর সুর করছেন দেবজ্যোতি মিশ্র। ছবির প্রি-প্রোডাকশনের কাজ জোর কদমে শুরু হয়ে গেছে। হাজার হোক ভূতের গল্পসুতরাং প্রচুর স্পেশাল এফেক্ট রাখারও প্ল্যান করা হচ্ছে।
প্রথমে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’। তারপর ‘গয়নার বাক্স’।
অপর্ণার স্বামী, যিনি মাঝে মাঝে অভিনয়ও করে থাকেন, সেই কল্যাণ রায়ই বোধহয় এই সময়ের বাংলা সিনেমার হৃদয়টাকে ঠিক ধরেছেন। তাঁর কথায়, “মনে হচ্ছে বাঙালি ভূতেদের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.